1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
পি কে হালদারসহ ছয়জনকে বাংলাদেশে হস্তান্তরের অনুরোধ | Bastob Chitro24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৩ অপরাহ্ন

পি কে হালদারসহ ছয়জনকে বাংলাদেশে হস্তান্তরের অনুরোধ

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০২২

ইডির জিজ্ঞাসাবাদে সব অভিযোগ অস্বীকার

ভারতে গ্রেফতার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পি কে হালদার) ছয়জনকে বাংলাদেশে হস্তান্তর করার অনুরোধ করেছে ইন্টারপোল ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) অব বাংলাদেশ। ইন্টারপোল এনসিবি অব ইন্ডিয়ার কাছে পাঠানো এক ইমেইলের মাধ্যমে এনসিবি অব বাংলাদেশ এ অনুরোধ করেছে। গতকাল সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মো. মাহবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

দুদক সচিব বলেন, যেহেতু পি কে হালদারের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ দেয়া হয়েছে এবং দুদকের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তাই তাকে বাংলাদেশে হস্তান্তর করার অনুরোধ জানিয়ে ভারতের ইন্টারপোল এনসিবিকে ইমেইল পাঠিয়েছে বাংলাদেশের ইন্টারপোল এনসিবি। গ্রেফতার ৬ জনকে ভারতে থেকে বাংলাদেশে আনতে দুদকও কিছু ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব। তাদের হস্তান্তরের বিষয়ে দুদক ভারতের বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করবে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেবে বলে জানান তিনি। ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

তদন্ত চলাকালে তিনি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলের কাছে সহায়তা চায় দুদক। এরপর পি কে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দিতে আদালতে পিটিশন করা হয়। পরবর্তীতে আদালত তাকে গ্রেফতারে পরোয়ানা দেন। হাতের ছাপ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসহ সেই গ্রেফতারি পরোয়ানা ২০২১ সালে ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো হয়। পরে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ইন্টারপোল রেড নোটিশ দেয়। দুদক সচিব মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, পি কে হালদারের অবস্থান জানতে ইন্টারপোলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছে দুদক। এদিকে স্থানীয় সূত্র জানায়, ভারতীয় তদন্ত সংস্থা-ইডি’র জেরার ধাক্কা কাটিয়ে নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছেন পি কে হালদার। ভারতীয় ওই সংস্থার  জিজ্ঞাসাবাদে সব অস্বীকার করছেন। তিনি এখন দেশে ফিরতে চান বলেও জানা গেছে। গণমাধ্যমকর্মীদের পি কে হালদার জানিয়েছেন আর ভারতে নয় এবার নিজের দেশ বাংলাদেশে ফিরে যেতে চান তিনি। গতকাল সোমবার সকালে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বাংলাদেশে ফেরার ইচ্ছার কথা জানিয়ে তিনি দাবি করেছেন-তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যা। তিনি বিভ্রান্ত হয়েছেন বলেও দাবি করেছেন। মেডিকেল চেকআপ শেষে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) দপ্তর থেকে ফেরার পথে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। পি কে হালদারকে আজ মঙ্গলবার দেশটির আদালতে হাজির করা হবে। তাই সোমবার ফের মেডিকেল চেকআপ করতে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল তাকে। ফেরার পথে সাংবাদিকরা পি কে হালদারকে প্রশ্ন করেন, তিনি বাংলাদেশে ফিরতে চান কি না? এর উত্তরে প্রথমে চুপ থাকলেও লিফটে দাঁড়িয়ে তিনি জানান, দেশে ফিরতে চান। ইডি বা সিবি আই কোনো আসামীকে গ্রেফতার করলে আদালতে পেশ করার আগে একবার তার মেডিকেল চেকআপ করায়। এরই অংশ হিসেবে গত শনিবার গ্রেফতার ছয়জনকে মেডিকেল চেকআপ করানো হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয়বার আবার চেকআপ করানো হলো। এর আগে কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্সের ইডি দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় পি কে হালদারকে। প্রথমদিকে সহযোগিতা না করলেও পরে তিনি ইডি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করেন বলে জানা গেছে। পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের আলাদাভাবে জেরা করা হয়। প্রায় ৪০টিরও বেশি প্রশ্নের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। সে অনুযায়ী পি কে হালদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথমবার জিজ্ঞাসাবাদে পি কে হালদার খুব একটা সহযোগিতা না করলেও দ্বিতীয়বারের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ইডি কর্মকর্তাদের সামনে ভেঙে পড়েন। এসময় তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দেন। ইডির চার কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার সারাদিন ধরে ইডির কর্মকর্তারা পি কে হালদারসহ তার সহযোগীদের বিভিন্ন অফিসে হানা দেন এবং বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধার করেন। বর্ধমানের কাটোয়া, উত্তর২৪ পরগনা ও দক্ষিণ২৪ পরগনাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পি কে হালদার, উত্তম মিত্র, প্রিতিশ হালদার ও প্রিতিশ হালদারের স্ত্রী এবং জামাতা সঞ্জীব হালদারকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাদের সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। মেডিকেল চেকআপের পর অনলাইনে ব্যাঙ্কশাল সিবি আইয়ের স্পেশাল কোর্টে কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়। পরে আদালতের কাছে পি কে হালদারসহ পাঁচজনকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করে ইডি। আদালত পাঁচজনকে ইডির হেফাজতে দেয় ও এক নারীকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ১৭ মে ব্যাঙ্কশাল সিবি আই স্পেশাল কোর্টে তাদের আবার হাজির করা হবে। মনে করা হচ্ছে প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ২১ থেকে ২২ ধারায় মামলা নথিভুক্ত করা হবে। বিশেষজ্ঞ মহল ধারণা করছেন, ইডি শুধু আর্থিক কেলেঙ্কারি তদন্ত করবে। বে আইনি পাসপোর্ট, ভিসা, আধার কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড, প্যান কার্ড, রেশন কার্ড তৈরি করার জন্য সিবি আইয়ের হাতেও তাদের তুলে দেওয়া হতে পারে।

সম্পদের খোঁজে দুদক: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বলেছেন, আমাদের সঙ্গে ভারতের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে। পি কে হালদারের স্ত্রী, ভাইসহ  গ্রেফতার ৬ জনকে বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট ভারতসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও দেওয়া হয়েছে। রেড অ্যালার্ট জারির পর ভারত সময়ে সময়ে বেশকিছু তথ্য চেয়েছিল। আমরাও দিয়েছি। অন্যদিকে পি কে হালদার কোথায় কত টাকা পাচার করেছেন তা জানতে পদক্ষেপ নিয়েছে দুদক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থে ভারত, দুবাই ও কানাডায় বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তুলেছেন পি কে হালদার। দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেন, ভারতে পি কে হালদারের সর্বশেষ অবস্থা তারা জানার চেষ্টা করছেন। তাকে ফিরিয়ে আনতে দ্রুতই ভারতের বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে। পি কে হালদার ও গ্রেফতার অন্যরা কী পরিমাণ অর্থ ভারতে পাচার করেছেন ও তাদের ব্যাংক হিসাব জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বি আইএফইউ) চিঠি পাঠানো হবে।

তিন বান্ধবীর পেছনেই ৮০০ কোটি টাকা: পি কে হালদার লোপাটের টাকা দিয়ে একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার তথ্য পাওয়া গেছে। লোপাট করা টাকার ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা শুধু তিনজন বান্ধবীর পেছনে খরচ করেছেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তথ্যে উঠে এসেছে। ঘনিষ্ঠ এই তিন বান্ধবীকে পি কে হালদারের ‘প্রেমিকা’ বলেও উল্লেখ করেছে দুদক। তারা হলেন- অবন্তিকা বড়াল, নাহিদা রুনাই ও শুভ্রা রানী ঘোষ। তারা তিনজনই এখন কারাগারে আছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে গ্রেফতার তার তিন বান্ধবীর জবানিতে মিলছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই তিন নারীকে বিলাসী জীবনে আকৃষ্ট করে তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতেন পি কে। বিনিময়ে তাদের কাউকে ফ্ল্যাট, গাড়ি, দামি উপহার ও অর্থ দিয়েছেন। অসংখ্যবার তাদেরকে নিয়ে গেছেন বিদেশ ভ্রমণে। তার প্রতিষ্ঠানে দিয়েছেন বড় পদের চাকরি। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে প্রকারেই হোক, অর্থ লোপাট আর প্রেমিকাদের নিয়ে ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকাই ছিল পি কে হালদারের অন্যমত নেশা। নারী সঙ্গ ছাড়া তিনি বিদেশ যেতেন না। বান্ধবীদের মধ্যে নাহিদা রুনাইকে ১৫০ কোটি টাকা খরচ করে উপহার দিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও ফাস ফাইন্যান্স কোম্পানি। অবন্তিকাকে উপহার দিয়েছেন পিপলস লিজিং। আর এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাচার করেছেন ৩৬ কোটি টাকা। রুনাই চালাতেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও ফাস ফাইন্যান্স লিমিটেড। রুনাইয়ের অসীম ক্ষমতার উৎস ছিল পি কে হালদার। তাই অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কয়েক বছরে তার বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৭২ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। নাহিদা রুনাইকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ দিয়েছিলেন পি কে হালদার। তাকে নিয়ে ভারতে গেছেন ২২ বার। আর সিঙ্গাপুরে গেছেন ২৫ বার। তাকে ২০ কোটি টাকা দেয়ার তথ্যও পেয়েছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। এছাড়াও অবন্তিকার কর্তৃত্বে চলত পিপলস লিজিং। তাকে নিয়ে অসংখ্যবার সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ড গেছে পি কে। অবন্তিকাকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পাঁচ কোটি টাকায় ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে পি কে হালদারের অর্থপাচারের অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য বান্ধবীদের মধ্যে অনন্দিতাকে রাজধানীর উত্তরায় নয় তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। সুস্মিতা সাহাকে দেওয়া হয়েছে ১০০ কোটি টাকার বেনামি ঋণ, পাপিয়া ব্যানার্জি ও মমতাজের প্রত্যেককে দেয়া হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা করে বেনামি ঋণ। আর দুর্নীতির আরেক সহযোগী ও বান্ধবী শুভ্রা রানী ঘোষকে অস্তিত্বহীন কোম্পানি ওয়াকামা ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান করেছেন পি কে হালদার। ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ৮৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নাহিদা রুনাইকে গত বছরের ১৬ মার্চ রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। আর ১৩ জানুয়ারি নিজ ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার হয়েছেন অবন্তিকা। শুভ্রা রানী ঘোষকে গ্রেফতার করা হয় গত বছরের ২২ মার্চ। ওই দিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। এছাড়াও অসংখ্য নারীর সঙ্গে কোটি টাকা লোপাটের অন্যতম হোতা প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) সম্পর্ক রয়েছে বলেও জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার সম্প্রতি ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ১০ হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ আছে। পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ৩৪টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলার মধ্যে মাত্র ১টিতে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে। এসব মামলায় মোট ৮৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১১ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি