শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০২ অপরাহ্ন
২৫ বছরের মধ্যে ঢাকায় সর্বোচ্চ ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। ঢাকার ডায়রিয়ার জীবাণু নেতিবাচক প্রভাব ছড়াচ্ছে বিদেশেও। এ কারণে এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে প্রধানমন্ত্রী কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, কলেরা বা ডায়রিয়ার প্রকোপ রোধে ১০ মে থেকে ১৫ মে মধ্যে ৭৫ লাখ কলেরা টিকা দেশে আসবে। এসব টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) দিচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান কলেরা পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রিসভায় গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমিও বেশ কিছুদিন বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেছি। আইসিডিডিআর,বি আইইডিসিআর, ডিজি হেলথ, ওয়াসার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। দেখা গেছে-ঢাকায় গত ২০-২৫ বছরের মধ্যে এরকম ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা যায়নি। ডায়রিয়া রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের ৭৫ লাখ কলেরা টিকা দিচ্ছে। এর দুটো ডোজ যিনি নেবেন তিনি তিন বছর পর্যন্ত কলেরা বা ডায়রিয়া থেকে মুক্ত থাকবেন। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, গ্রীষ্মকালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু ঢাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ এত বৃদ্ধি নিয়ে পর্যালোচনা করে কিছু সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করে দেখলাম, ওয়াসার মূল পানির জায়গায় কোথাও ব্যাকটেরিয়া নেই। কিন্তু সঞ্চালন লাইনের বিভিন্ন জায়গায় লিকেজ হওয়ায় পানি দূষিত হচ্ছে। এসব লিকেজের বড় কারণ হলো-হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের জন্য অবৈধভাবে মেশিন দিয়ে পানি টানা। হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের লোকজন যথাযথভাবে পানি না নিয়ে লাইন লিকেজ করে পানি টেনে নিচ্ছে। এতে করে ওইসব লিকেজের মাধ্যমে পানি দূষিত হয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
ঢাকার প্রায় সব জায়গায় ডায়রিয়া হয়-জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, কয়েকটি জায়গায় এবার একটু বেশি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কয়েকটি জায়গায় তারা পানি পরীক্ষা করে দেখেছেন- ক্লোরিনের কিছুটা স্বল্পতা আছে। ডায়রিয়া পরিস্থিতির জন্য এটাও বড় কারণ। এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসা দ্রুত ব্যবস্থার নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, এছাড়া বাড়ির পানির ট্যাংক ঠিকমতো পরিষ্কার না করার কারণও একটি বড় সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। সবাই যেন নিয়মিত ট্যাংক পরিষ্কার করেন সে বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ওয়াসাকে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে।
দেশের অন্যতম আয়ের খাত প্রবাসী শ্রমিকদেরও হুমকিতে ফেলছে ঢাকার ডায়রিয়ার প্রকোপ। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সৌদি আরব, কুয়েত ও কাতার থেকে জানানো হয়েছে-বাংলাদেশ থেকে আসা লোকজনের শরীরে ডায়রিয়ার জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছিল। তারা বলছেন, গ্রামের পানিতে ডায়রিয়ার জীবাণু নেই। কিন্তু গ্রামের মানুষ বিদেশে যাওয়ার আগে কয়েকদিন ঢাকায় থাকেন। তখন তাদের শরীরে ডায়রিয়ার জীবাণু প্রবেশ করে। ওয়াসার পক্ষ থেকে বিভিন্ন হোটেলের পানি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। যতটুকু বোঝা যাচ্ছে-যারা, হোটেল রেস্তোরাঁ ও মেসে খাওয়া-দাওয়া করেন তাদের বেশি ডায়রিয়া হচ্ছে।
মন্ত্রিসভায় ‘শেখ হাসিনা পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, জামালপুর আইন-২০২২’ ও ‘পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, রংপুর আইন-২০২২’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ‘জাতীয় স্বেচ্ছাসেবা নীতিমালা-২০২২’-এর খসড়াও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নীতিমালাটি স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়। তবে স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ে আগে থেকেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তাই এ নীতিমালা সংক্রান্ত বিষয়টি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
