চট্টগ্রামের পোর্ট কানেকটিং রোডে থামছে না অবৈধ পার্কিং
তীব্র যানজটে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা
চট্টগ্রামের পোর্ট কানেকটিং রোডে ঠেকানো যাচ্ছে না অবৈধ পার্র্কিং। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে বিশৃঙ্খলা লেগেই আছে। প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি সম্প্রসারণ ও সংষ্কার করা হয়। কিন্তু দখলবাজির কারণে এর সুফল মিলছে না। বন্দর নীমতলা থেকে বড়পোল পর্যন্ত অংশে সড়কের দুই পাশ দখল করে রাখা হচ্ছে সারি সারি ট্রাক, কার্ভাডভ্যান, লরি। অন্যদিকে সাগরিকা থেকে শুরু করে এ কে খান গেইট হয়ে সিটি গেইট পর্যন্ত রাস্তার ওপর বাস টার্মিনাল, দূরপাল্লার বাসের অসংখ্য কাউন্টার। সড়ক দখল করে সেখানে বাস রাখা হচ্ছে। তাতে যানবাহন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে।
প্রায় ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগ সৃষ্টি করেছে। এই সড়ক হয়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ভারি যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু দখলবাজির কারণে সড়কে যানজট স্থায়ী হয়ে যাওয়ায় পণ্য পরিবহন স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে আমদানি-রফতানি ব্যয় বাড়ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ভোক্তাদের উপর।
সড়কে বিশৃঙ্খলা নিয়ে সম্প্রতি দৈনিক ইনকিলাবে সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ট্রাফিক পুলিশ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সড়কটি দখলমুক্ত করতে অভিযান পরিচালনা করে। তাতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। কিন্তু কয়েকদিন দিন পার হতেই সড়ক আগের অবস্থায় ফিরে আসে। গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে সারি সারি যানবাহন রাখা। বন্দর নীমতলা পার হতেই মহেষখালের পাশে একটি ট্রাক ট্রার্মিনাল রয়েছে। সেই টার্মিনালকে ঘিরে মূল সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় শত শত ভারী যানবাহন রাখা হচ্ছে।
দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এটি সড়ক-না টার্মিনাল। অবৈধ পার্কিংয়ের পর সড়কের যে অংশ অবশিষ্ট আছে যে সরু অংশে চলছে যানবাহন। তাতে যানজট হচ্ছে। পণ্যবাহী ভারী যানবাহনের পাশাপাশি সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি এবং গণপরিবহনও চলাচল করে। যানজটে আটকা পড়ে লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সেখানে কর্তব্যরত একজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য জানান, চট্টগ্রাম বন্দর এবং বেসরকারি কনেটইনার ডিপোমুখী ভারী যানবাহন সেখানে পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। বন্দরের আশপাশের ডিপোগুলোতে এখন আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ভারী যানবাহনের প্রচÐ চাপ। ডিপো ছাড়িয়ে আশপাশের সড়কেও যানবাহন রাখা হয়। অনেক যানবাহন এই সড়কে এনে রাখা হচ্ছে।
নগরীর প্রধান সড়কের বন্দর এলাকায় চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ। ফলে বন্দরে প্রবেশের জন্য যেসব যানবাহন আগে ওই সড়কে পার্কিং করা হত সেসব যানবাহনও পোর্ট কানেকটিং রোডে রাখা হচ্ছে। অগ্নিকাÐ ও বিস্ফোরণের পর সীতাকুÐের বিএম কনটেইনার ডিপোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বন্দর এলাকার ডিপোগুলোতে যানবাহনের চাপ বেড়েছে।
এই কারণে এই সড়কে আগের চেয়ে অবৈধ পার্কিং বেড়েছে। এতে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের জন্য সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে চট্টগ্রাম ইপিজেড থেকে বন্দর হয়ে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত সড়কে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। সেই সাথে পোর্ট কানেকটিং রোডে অবৈধ পার্কিং যানজট আশপাশের সব সড়কে বিস্তৃত হচ্ছে। সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
কার্ভাডভ্যান চালক শফিকুর রহমান বলেন, আগে বন্দরে পণ্য নিয়ে প্রবেশের সিরিয়াল পেতে সল্টগোলা এলাকায় গাড়ি পার্কিং করতাম। এখন সেখানে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে যেতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়ে এই সড়কে পার্কিং করছি। তার মতো অনেকে বন্দরের বিভিন্ন জেটিতে প্রবেশের জন্য গাড়ি নিয়ে সেখানে অপেক্ষায় আছেন।
সড়কের দুই পাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মালিকেরা জানান, তীব্র জটের কারণে তাদের ব্যবসা মন্দা চলছে। অনেকে ওই সড়ক এড়িয়ে চলছেন। এতে ক্রেতা মিলছে না। নীমতলার টার্মিনাল এলাকায় রাস্তার ওপর গাড়ি রাখা হয়। সাধারণ ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করলেও কোন প্রতিকার মিলছে না। এতে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
সাগরিকা থেকে অলঙ্কার ও এ কে খান গেইট এলাকায় সড়ক দখল করে বাস টার্মিনাল করা হয়েছে। রাস্তার উপর বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠা-নামা চলছে। তাতে যানবাহন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। এতে নগরীর প্রধান প্রবেশ পথ সিটি গেইট হয়ে আশপাশের সব সড়কে তীব্র যানজট হচ্ছে। বন্দর এলাকায় বিশেষ করে পোর্ট কানেকটিং রোডে যানবাহনের চাপ কমাতে সিটি আউটার রিং রোড চালু করা হয়। কিন্তু সাগরিকা হয়ে দুই সড়কের মধ্যে একটি সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। ফলে রিং রোডের সুফলও কাজে লাগছে না।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-পশ্চিম) তারেক আহম্মেদ বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা আনতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয় তবে তাতে সুফল মিলছে না। নগরীতে বিশেষ করে বন্দর এলাকায় পর্যাপ্ত টার্মিনাল নেই। বেসরকারি ডিপোগুলোর যানবাহন রাখারও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। ফলে শত শত ভারী যানবাহন রাস্তা দখল করে রাখা হচ্ছে। ট্রাফিক বিভাগের অভিযানে প্রতিদিনই মামলা হচ্ছে, জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।
কিন্তু অভিযান শেষ হতেই ফের রাস্তায় চলে আসছে যানবাহন। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত টার্মিনাল নির্মাণ করতে সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ ও বন্দরকে বলা হয়েছে। পর্যাপ্ত টার্মিনাল না হওয়া পর্যন্ত সড়কে অবৈধ পার্কিং বন্ধ করা যাবে না বলেও জানান তিনি।