‘পারিব না এ কথাটি বলিও না আর/ কেন পারিবে না তাহা ভাব একবার/ পাঁচজনে পারে যাহা/ তুমিও পারিবে তাহা/ পার কি-না পার, করো যতন আবার/ একবারে না পারিলে দেখ শতবার’ (কালী প্রসন্ন ঘোষ)। ‘পারিব না’ শিরোনামের এই কবিতার বাস্তব প্রতিফলন দেখলো এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষ। সড়ক-মহাসড়কে যানজটের ভয়াবহ দৃশ্য নেই, রেলে সিডিউল বিপর্যয় নেই, লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলছে নির্বিঘ্নে। প্রতিবারের মতো ঈদ যাত্রায় যাত্রীদের ভোগান্তি এবার কমই হয়েছে। পথে যেটুকু ভোগান্তি হয়েছে; সেটা মেনেই হাসিমুখে পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ঘরে ফিরছেন মানুষ।
ঈদে সড়কে যাত্রীদের গত কয়েক বছরের ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরে দেশের গণমাধ্যমগুলো প্রচুর লেখালেখি করা হয়, প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। সড়ক-মহাসড়কগুলোতে ব্রিজ-ফ্লাইওভার নির্মাণ ও সড়ক উন্নয়ন কাজ ঈদ উপলক্ষ্যে কিছুদিন বন্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। এতে যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বাধ্য হয়েই উন্নয়ন কাজ ঈদের আগে ও পরে কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। একাধিক ব্রিজ খুলে দেয়া হয়। এতে সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ কয়েকগুন বেড়ে গেলেও প্রতিবছর ঈদ যাত্রার মতো সড়কে মাইলের পর মাইল যানজটের সৃষ্টি হয়নি। যানজট আর ভোগান্তির আতঙ্ক নিয়ে কর্মজীবী মানুষ ঘর থেকে বের হলেও তেমন যানজটে পড়তে হয়নি। ধীর গতির কারণে ঘরে ফিরতে সময় একটু বেশি লাগলেও মানুষ আনন্দ নিয়েই ঘরে ফিরছেন।
ঢাকা টু চট্টগ্রাম, ঢাকা টু রংপুর, ঢাকা টু সিলেট এবং ঢাকা টু ময়মনসিং কোনো সড়কেই যানবাহনের তেমন ভিড় দেখা যায়নি। ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনেও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের প্রচুর চাপ ছিল। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রায় ২৪ ঘণ্টায় ৪২ হাজারের বেশি যানবাহন পাড়াপাড় করেছে। অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মহাখালী এবং গাবতলী থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের উপস্থিতি ছিল অনেকটা ঢিলেঢালা। তবে স্বল্প দূরত্বে চলাচল করা লঞ্চগুলোও সদরঘাট থেকে যাত্রী বোঝাই করে ছেড়ে গেছে।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গত কয়েক দিন ধরে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে কর্মজীবী মানুষ। লঞ্চ ও রেল পথে লাখ লাখ যাত্রী গ্রামে ফিরে গেলেও সড়ক পথে বেশি মানুষ যাতায়াত করেন। ফলে ঈদের আগে ঘরে ফেরা মানুষের ব্যাপক ভিড় দেখা যায় রাজধানীর বাস-টার্মিনালগুলোতে। গতকাল ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী বাস-টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার যাত্রীচাপ কম। মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের লাইন দেখা গেছেও গাবতলীতে পরিবহন শ্রমিকরা ডেকে ডেকে যাত্রী তুলছে বাসগুলোতে।
ঈদযাত্রার চাপ নেই ঢাকার অন্যতম বাস টার্মিনাল গাবতলীতে। যাদের আগে থেকেই বাসের টিকিট ছিল, তারা আসছেন, বাসে উঠছেন, চলে যাচ্ছেন। আর বাকিরা তাৎক্ষণিক বিভিন্ন বাসে উঠে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। বাসগুলো টার্মিনালের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে ডেকে ডেকে যাত্রী তুলছে। সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ নেই। সকাল ১০টার মধ্যে অনেকগুলো বাস-ই টার্মিনাল ছেড়ে গেছে। মাঝে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চাপ কম থাকবে বলছেন বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতারা। তবে সন্ধ্যা থেকে আজ আবার চাপ বাড়বে কাউন্টারগুলোতে।
গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে দেশের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বাসগুলো সড়কেই দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। বাস চালকের সহকারীরা ডেকে ডেকে যাত্রী তুলছেন। যারা আগে থেকে নিজ গন্তব্যের টিকিট কাটেননি বা টিকিট কেনা হয়নি, তাদের ভরসা লোকাল বা এসব আন্তঃজেলা বাসগুলো।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক : ঢাকা টু চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঈদযাত্রার যে যানজটের আশঙ্কা পোষণ করা হয়েছিল তেমনটি হয়নি; ভোগান্তি ছাড়াই মানুষ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, চট্টগ্রামমুখী লেনে গাড়ির চাপ বেশি রয়েছে। আর ঢাকামুখী লেনে পণ্যবাহী পরিবহনের চাপ বেশি। তবে কোথাও যানজট নেই।
ঢাকা থেকে কুমিল্লার উদ্দেশে ছেড়ে আসা এশিয়া পরিবহনের বাসচালক মো. হাফিজ উদ্দিন জানান, সায়েদাবাদ থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত টুকটাক যানজট ছিল। তবে দাউদকান্দি থেকে কুমিল্লা শহরে প্রবেশ পর্যন্ত তেমন কোনো যানজট নেই। আমরা এখন স্বস্তিতে আছি। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে কুমিল্লা থেকে ঢাকা পৌঁছাতে পারছি। ঈদের পরও আমরা এমন পরিবেশ চাই। ঢাকা থেকে কুমিল্লাগামী বাসযাত্রী মো. মাহফুজ আলম বলেন, সড়ক সংস্কারের কারণে কয়েক মাস প্রায়ই যানজটে আটকে দুর্ভোগে পড়েছি। তবে শেষ পর্যন্ত স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারছি, এটাই আনন্দের। মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে চায়, এজন্য হাইওয়ে পুলিশকে সব সময় তৎপর থাকতে হবে।
কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ জানিয়েছে, সদর থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকায় মহাসড়কের এক বছর মেয়াদি চার লেনের পরীক্ষামূলক সংস্কারকাজ চলছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে চান্দিনা উপজেলার কাঠেরপুল এলাকা থেকে এ কাজ শুরু হয়। জানুয়ারি থেকে সংস্কারকাজটি পুরোদমে শুরু হয়।
চার মাস ধরে সংস্কার কাজের কারণে মহাসড়কে প্রায় সময়ই যানজটের সৃষ্টি হয়ে দিনভর মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। কারণ কাজের সময় এক লেন বন্ধ রাখা হয়। ফলে দুইমুখী গাড়ি এক লেন দিয়ে চলাচল করে। বিশেষ করে রজমানে প্রায়ই যানজটে আটকে তীব্র গরমে মহাসড়কে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে চালক ও যাত্রীদের। এ ছাড়া মহাসড়কের পাশে বাজার বসায় এবং তিন চাকার যান প্রায়ই মহাসড়কে ঢুকে পড়ায় ঈদযাত্রায় যানজট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করেছিল চালক ও যাত্রীরা। তবে ২৫ রমজানের পর থেকে সওজ কাজ বন্ধ রাখায় মহাসড়ক এখন যানজটমুক্ত। হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে দিনরাত কাজ হচ্ছে। এখন মহাসড়ক সম্পূর্ণ যানজটমুক্ত। কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত আমাদের এলাকা। প্রতিটি স্থানে আমরা তৎপর রয়েছি। মহাসড়কে আমাদের ৫৬টি টহল দল ও ৩০টি কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে। এ ছাড়া প্রস্তুত রয়েছে ১১টি রেকার টিম। কোথাও কোনো গাড়ি বিকল হলে বা দুর্ঘটনার কবলে পড়লে দ্রুত সেটি অপসারণ করা হচ্ছে।
সওজ বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, বর্তমানে মহাসড়কের কোথাও কোনো ধরনের খানাখন্দ নেই। যার কারণে মানুষ নিরাপদ চলাচল করতে পারছে। মহাসড়কের কুমিল্লার অংশ এখন যানজটমুক্ত। যেসব জায়গায় হাটবাজার আছে সেখানে হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে আমাদের লোকেরাও কাজ করছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে ধীরগতি : ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরবঙ্গগামী লেনে গাড়ির চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে কোথাও কোথাও একটু ধীরগতি তৈরি হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো যানজট নেই। তবে গাজিপুর এলাকায় মহাসড়কে প্রচণ্ড যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। গার্মেন্টসগুলো ছুটি হওয়ায় লাখ লাখ গার্মেন্টস কর্মী ঈদ করতে গ্রামে যেতে রাস্তায় নেমে এসেছেন। তাদের বেশির ভাগই বাসের অগ্রিম টিকিট পাননি। ফলে তারা নোকাল বাস ভাড়া করে দূর-দূরান্তের গন্তব্যে রওয়ানা দিয়েছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের ওভারব্রিজ হয়ে নলকা মোড় পর্যন্ত ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনের প্রায় ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থেমে থেমে ধীরগতি তৈরি হচ্ছে।
এ ছাড়া গাড়ির চাপ থাকায় বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়ক থেকে শুরু করে হাটিকুমরুল গোলচত্বর হয়ে চান্দাইকোনা পর্যন্ত সিরাজগঞ্জের ৩৫ কিলোমিটার মহাসড়কজুড়েই গাড়ির প্রচুর চাপ ও মাঝেমধ্যে ধীরগতি রয়েছে। সকালের দিকে সেতু পশ্চিম মহাসড়কের ঢাকাগামী লেনেও কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। সেটাও কেটে গিয়ে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে সড়ক।
সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) সালেকুজ্জামান খান সালেক বলেন, ঈদে ঘরফেরা মানুষ বহনকারী যানবাহনের সংখ্যা প্রচুর বেড়ে গেছে। ফলে সকাল থেকে এ মহাসড়কের ঝাঐল এলাকা থেকে নলকা মোড় পর্যন্ত ধীরগতি রয়েছে। তবে যানজট বলতে যেটা বোঝায়, সেটা সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে নেই। গাড়ির চাপ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। পাশাপাশি যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক বিভাগ সচেষ্ট রয়েছে। হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লুৎফর রহমান বলেন, গাড়ির প্রচুর চাপ থাকায় নলকা সেতুর পূর্বপাশে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। তবে নলকা মোড় থেকে হাইওয়ে থানার আওতার পুরো এলাকা একদম স্বাভাবিক রয়েছে এবং এ এলাকায় এখনো কোনো যানজটের সৃষ্টি হয়নি। মহাসড়ক স্বাভাবিক রাখতে হাইওয়ে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
ট্রেন যাত্রীতে ঠাসাঠাসি : ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনে রাজধানী থেকে অধিকাংশ ট্রেন সময়মতো ছাড়ছে। তবে প্রতিটা ট্রেন যাত্রীতে ঠাসা। যাত্রীর চাপে কিছুটা ভোগান্তি হলেও প্রিয়জনদের কাছে ফিরে যাওয়ার আনন্দে ছাপিয়ে যাচ্ছে। গতকাল শনিবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেলা ১১টা পর্যন্ত ১৬টি ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে গেছে। অধিকাংশ ট্রেনই যথাসময়ে ছেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদযাত্রায় গতকাল ৩৯ জোড়া ট্রেন ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। আর সব মিলিয়ে ট্রেন আসা যাওয়া করছে ১২২টি। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার জানান, ঈদে যাত্রীর চাপ বেড়ে গেছে। এটা বিবেচনায় নিয়ে অতিরিক্ত বগি যোগ করা হয়েছে। আর প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে ‘স্ট্যান্ডিং’ যাত্রীদের জন্য। প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষারত সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী সোরহাব হোসেন বলেন, রাস্তায় যানজটের ভয়ে অনেকটা আগেই বাসা থেকে বের হয়েছি। তবে রাস্তায় তেমন যানজট পাইনি। এক ঘণ্টা আগে স্টেশনে এসে পৌঁছেছি। মনে হচ্ছে ট্রেনও সঠিক সময় ছেড়ে যাবে।
পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস প্রায় ৫০ মিনিট বিলম্বে ছেড়েছে। এই ট্রেনের যাত্রী মোবারক জানান, ১০টা ১০ মিনিটে ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল। আমরা সাড়ে ৯টা থেকে স্টেশনে অপেক্ষা করছি। সাড়ে ১০টাতেও ট্রেন ছাড়েনি। এমনিতেই বিলম্ব তারপর অতিরিক্ত যাত্রী। অন্যান্য ট্রেনে অনেকে টিকিট কেটেও ট্রেনে উঠতে পারছেন না। যাত্রীতে ঠাসাঠাসি। বগির ভেতর ঢোকার জায়গা নেই। ঈদ যাত্রা হিসেবে এটা মেনে নিতে হবেই। তবে এত ভোগান্তির পরও অনেক ভালো লাগছে। কেননা, আর কয়েক ঘণ্টা পরেই বাড়ি যাব, বাবা-মার সঙ্গে ঈদ উদযাপন করব।
জানতে চাইলে কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, এবার এখন পর্যন্ত বড় কোনো শিডিউল বিপর্যয় হয়নি। অধিকাংশ ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। আজকে এখন পর্যন্ত ১৬টি ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছে। তিন চারটি ট্রেন দেরিতে ছেড়েছে, তাও ২০ মিনিট বা আধা ঘণ্টা, এটা বিলম্ব তবে বিপর্যয় বলা যাবে না।
সদরঘাটে বেড়েছে যাত্রীর চাপ : রাজধানীর সদরঘাট নৌ টার্মিনালে দেখা গেছে যাত্রীদের চাপ। গতকাল সদরঘাটে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যাত্রীদের চাপ না থাকলেও শেষ বিকেলে ঘাটে ভিড় করছেন যাত্রীরা। সদরঘাটে পৌঁছাতে বিকেল থেকে যানজটে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।
লঞ্চমালিকরা বলছেন, গার্মেন্টসে ছুটি শুরু হওয়ায় যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। সন্ধ্যায় ইফতারের পর চাপ ভয়াবহ রুপ নেয়। সকাল থেকে বেশ হতাশ ছিলাম। কারণ অন্যান্য সময় সকাল থেকেই ভিড় বেশি থাকে। কিন্তু এবার সকালে তেমন ভিড় ছিল না। তবে বিকেলে থেকে প্রচণ্ড ভিড় মধ্যরাত অব্দি ছিল। মিরপুরের একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত মোছা. শাহিনা বেগম বলেন, ‘আমগো আজকে ছুটি হইছে। সকালে তাড়াতাড়ি বাইর হইছি। সবাইরে নিয়া আইছি। লঞ্চে তো এহন অনেক ভিড়। সকাল থেকে তো ভিড় কম শুনছি।’
রাজহংস লঞ্চের স্টাফ শাজাহান জানান, কিছুক্ষণ আগে আমাদের আরেকটি লঞ্চ রয়েল ক্রুজ-২ ঘাট ছেড়ে গেছে, যাত্রী ভালোই হয়েছে। তবে সকাল থেকে যাত্রী ছিল না, তাই লঞ্চ ছাড়তে কিছুটা দেরি হয়েছে। এখন রাজহংস ঘাটে আসছে। যাত্রী পরিপূর্ণ হলে ছেড়ে যাবে।
লঞ্চঘাটে দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা জানান, সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঘাটে লঞ্চ ভিড়েছে ১০০টি। এর মধ্যে ছেড়ে গেছে শতাধিক। কিছুক্ষণ পরপরই লঞ্চ মালিকদের বাড়তি যাত্রী না নিতে এবং সময়মতো ছেড়ে যেতে সতর্ক করা হচ্ছে। ছাদে যাত্রী নেওয়া হলে জরিমানার বিষয়েও হুঁশিয়ার করা হচ্ছে লঞ্চমালিকদের। সদরঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর টিআই হুমায়ুন বলেন, যে কোনো ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে।
মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহনের চাপ প্রচণ্ড। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শনিবার সকাল থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা কম থাকলেও ছোট গাড়ি অর্থাৎ প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের চাপ রয়েছে অনেক বেশি। এছাড়া সকাল থেকেই লঞ্চঘাটে যাত্রীদের ভিড় সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে ২১টি ফেরি নিয়োজিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসি ডিজিএম খালেদ নেওয়াজ। তিনি জানান, যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের জন্য পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ছোট, বড় মোট ২১টি ফেরি নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া পাটুরিয়ায় ৫টি ঘাট সচল থাকায় যাত্রী ভোগান্তি অনেকাংশেই কম। যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা কম থাকলেও ছোট গাড়ি অর্থাৎ প্রাইভেটকার মাইক্রোবাসের চাপায় এক বেশি।
পদ্মায় ১১ যাত্রীডুবি : মাওয়া ঘাটে প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। নানা বয়সের যাত্রীরা গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে রওয়ানা দিয়েছেন। ফেরিতে উঠতে দীর্ঘ লাইনও দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার মোটরসাইকেল বেশি হওয়ায় মানুষ ফেরিতে জায়গা পাচ্ছেন না। এদিকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুট থেকে একটি স্পিডবোট বাংলাবাজার ঘাটে আসার পথে ১১ জন যাত্রী নিয়ে ডুবে গেছে।
জানা গেছে, শনিবার সকালে শিমুলিয়া থেকে একটি স্পিডবোট শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। বোটটি পদ্মা সেতুর কাছে এলে ঢেউয়ের ধাক্কায় উল্টে যায়। খবর পেয়ে স্থানীয় জেলেনৌকা ও নৌপুলিশের টিম গিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার করে।
বিআইডব্লিউটিএর বাংলাবাজার ঘাট সূত্র জানিয়েছে, পদ্মা সেতুর কাছে আসার পর স্পিডবোটটির তলা ফুটো হয়ে যায়। এতে এটি ডুবে যায়। স্পিডবোটটিতে ১১ যাত্রী ছিল। সব যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি নৌপুলিশের। সূত্র আরও জানায়, শিমুলিয়া থেকে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী নিয়ে রওনা হয় বাবু নামের ওই স্পিডবোট। এর চালক ছিলেন মো. উজ্জ্বল। সেতু অতিক্রমের সময় প্রচণ্ড ঢেউয়ের ধাক্কায় বোট উল্টে যায়।
কাঁঠালবাড়ী নৌপুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. জাহানুর আলী বলেন, বোটটি তলা ফেটে ডুবে যায়। তবে সব যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। কোনো হতাহত ও নিখোঁজ নেই।