পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের দিঘীরজান গ্রামে বাড়ি প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মা লীলাবতি হালদার এবং দর্জি বাবা প্রলব চন্দ্র হালদারের তিন ছেলের মধ্যে সবার বড় পি কে হালদার। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র হিসেবে চিনত স্থানীয় ও স্বজনরা। সেই মেধাবীই এখন দেশের কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎকারী ও প্রতারক পি কে হালদার। হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎকারীর দেশের বাইরে অঢেল সম্পদ থাকলেও তার জন্মভিটায় নেই কিছুই। এমনকি তার পৈতৃক ঘরটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর সেখানে নতুন করে একটি ঘরও তোলেননি পি কে। পিতার ঘরের মেঝেটিও ফাঁকা পড়ে রয়েছে। এলাকায় তার সহযোগীদের দুই হাতে দান-খয়রাত করার কথা প্রচলন আছে। তবে আর্থিক কেলেঙ্কারির সূচনা পি কে করেছিলেন তার গ্রামের একটি স্কুল কমিটি থেকেই। সেই স্কুলের টাকা আত্মসাৎ করে গ্রামছাড়া হয়েছিলেন ২০ বছর আগে। জানা যায়, পি কে তার মায়ের দিঘীরজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিকের পাঠ শেষ করে একই ক্যাম্পাসে অবস্থিত মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ঢাকায় পড়াশোনা করেন। সর্বশেষ বুয়েট থেকে পাস করে ব্যাংকে চাকরি নেন। এরপর তিনি মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসতেন বলে জানান স্থানীয়রা। এক পর্যায়ে পি কে যে বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন সেই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। তবে ওই বিদ্যালয়ের আর্থিক বিষয় নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় বলে জানান ওই গ্রামের বাসিন্দা আসমত আলী মোল্লা। প্রায় ২০ বছর আগের এ ঘটনার পর বাড়িতে খুব একটা আসতেন না পি কে হালদার। স্কুল কমিটির টাকা নিয়ে পি কে হালদারকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তার প্রতিবেশী ভাবি অঞ্জলি হালদার। এ ঘটনার পর পি কে তার মা ও বাবাকে ঢাকায় নিয়ে যান। এরপর দীর্ঘ এ সময়ে গোপনে এক-দুবার বাড়িতে এলেও ছিলেন লোকচক্ষুর আড়ালে। সর্বশেষ প্রায় এক যুগ আগে এক চাচার মৃত্যুর পর বাড়িতে এসেছিলেন পি কে। এরপর থেকে প্রতিবেশী কিংবা স্থানীয় স্বজনদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। ব্যক্তিজীবনে অবিবাহিত হিসেবে পরিচিত পি কের অন্য দুই ভাই প্রাণেশ হালদার এবং পীযূষ হালদার অনেক আগেই ভারত চলে গেছেন এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। স্থানীয়রা তাকে একজন বড় ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবেই চিনতেন। তবে স্থানীয় স্বজন কিংবা প্রতিবেশীদের জন্য কিছুই করেননি তিনি। তার বাড়ির প্রায় সবাই কৃষিকাজ কিংবা অন্যের বাড়িতে শ্রম বিক্রি করে সংসার চালান। তাই পি কের বিষয়ে তাদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। গত দুই বছর আগে বিভিন্ন লোক পি কের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বাড়িতে আসার পর তারা পি কের অপকর্মের বিষয়ে জানতে পারেন। স্থানীয় দিঘীরজান বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী এমদাদুল হক মোল্লা জানান, ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই তিনি পি কের সঙ্গে একই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন এবং একত্রে এসএসসি পাস করেছেন। পি কে এবং তার অন্য দুই ভাইও খুব মেধাবী ছিলেন।