পদ্মা সেতুর দুই পারে সেতুর সংযোগ সেতুতে পুরোদমে চলছে রেললাইন বসানোর কাজ। এরই মধ্যে জাজিরা প্রান্তের উড়ালসেতুতে (ভায়াডাক্ট) ৪.০৩ কিলোমিটার রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন জাজিরা প্রান্তে সেতুর মুখে এসে আটকে গেছে এই কাজ। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ রেল অংশের কাজ করার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কাছে সেতু হস্তান্তর করার পর এই কাজ শুরু হবে। আগামী ১৫ জুলাই এই হস্তান্তর হতে পারে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, জাজিরা প্রান্তে সেতুর শেষ প্রান্ত থেকে পদ্মা রেলস্টেশন পর্যন্ত রেলপথ এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে। আবার মাওয়া প্রান্তের কাজও প্রায় শেষের দিকে। মাওয়া প্রান্তে বসেছে ১.৭ কিলোমিটার রেলপথ। পদ্মা সেতুতে রেলপথ স্থাপন করতে সময় লাগবে অন্তত ছয় মাস। তাই জুলাইতে সেতু বুঝে পাওয়ার পর চলতি বছরের মধ্যে কাজ শেষ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে রেলের কর্মপরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতু ব্যবহার করে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল চলার কথা থাকলেও সেটি আর হচ্ছে না। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী বছরের জুনে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল চালাতে চায় রেলওয়ে।
সর্বশেষ এপ্রিল ও মে মাসে সেতু ও রেল কর্তৃপক্ষের মধ্যে পদ্মা সেতুর রেলপথ হস্তান্তরের বিষয়ে চিঠি চালাচালি হয়। তারপর এখন পর্যন্ত এই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। সেতু কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনসংক্রান্ত কাজেই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, সেতুর রেলপথে এখনো গ্যাসলাইনের কাজ চলছে। তা ছাড়া উদ্বোধনের আগে সেতু হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। উদ্বোধনের পর আগামী মাসের মাঝামাঝি ঠিকাদারদের সঙ্গে আলোচনা করে সেতুটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। বাকি ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি সরকারের ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্পের তালিকাভুক্ত করা হয়।
তিন ভাগে বিভক্ত প্রকল্পের কাজ হচ্ছে ঢাকা-মাওয়া, মাওয়া-ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা-যশোর অংশে। এর মধ্যে ঢাকা-মাওয়া ও ভাঙ্গা-যশোরের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২৩ সাল। আর মাওয়া-ভাঙ্গা সেকশনের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২২ সাল। কিন্তু এই বছর মাওয়া-ভাঙ্গা অংশ চালু হচ্ছে না। প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট (সিএসসি)।
পদ্মা সেতুর দুই প্রান্ত ছাড়াও কেরানীগঞ্জে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রেললাইন বসানো হয়েছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮০ শতাংশ। ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ আর ভাঙ্গা-যশোর অংশের নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫১ শতাংশ। পুরো প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৫৯ শতাংশ।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সেতু বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কাজ শুরু করতে পারছি না। এতে আমাদের কর্মপরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এই পথে ট্রেন চালানোর কথা থাকলেও সেটি আর হচ্ছে না। আগামী বছরের জুলাইতে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। ’
সময় মতো সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব কি না জানতে চাইলে আফজাল হোসেন বলেন, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে একটা তারিখ তো সামনে রেখে কাজ করতে হবে। এখন প্রতিদিন ৫০ জনের একটি গ্রুপ ৫০০ মিটার করে রেললাইন বসাচ্ছে। চাইলে দুই প্রান্ত মিলিয়ে প্রতিদিন এক কিলোমিটার রেললাইন বসানো সম্ভব। দ্রুত সেতু বুঝে পেলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব।