চলন্ত ট্রেনে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে তিনটি বগি। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী যাত্রীবাহী পারাবত এক্সপ্রেসে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ট্রেনের আরও ১২টি বগি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল দুপুর ১টায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার উসমানগড়ে দ্রুতগামী ট্রেনে আগুন ধরে যায়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যাত্রীদের মধ্যে। তারা এক বগি থেকে আরেক বগিতে ছোটাছুটি করতে থাকেন। ফলে হুড়োহুড়িতে বেশ কয়েকজন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছেন, পাওয়ারকার বগি থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। ঘটনার পর সারা দেশের সঙ্গে সিলেটের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে ৫ ঘণ্টা পর আবারও ট্রেন চলাচল শুরু হয়। শমসেরনগর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার জামাল উদ্দিন বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া নির্ণয় করা সম্ভব নয়। স্থানীয়দের ভাষ্য, চলন্ত ট্রেনের পাওয়ারকার বগি থেকে আগুনের সূত্রপাত। এ সময় আতঙ্কে যাত্রীরা চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকেন। চালক দ্রুত ট্রেন থামিয়ে দেন। আতঙ্কগ্রস্ত যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে নামতে থাকেন। স্থানীয় লোকজন পানি-বালু দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকায় তারা সরে আসতে থাকেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার ইউনিট গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে ট্রেনের তিনটি বগি ভস্মীভূত হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১২টি বগি। প্রত্যক্ষদর্শী জিল্লুর রহমান মাহিন বলেন, ট্রেনটি শমসেরনগর রেলস্টেশন থেকে বিমানবন্দর এলাকায় যাওয়ার পর হঠাৎ আগুন লাগে। এ সময় ট্রেন থামালে যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে নামতে শুরু করেন। একপর্যায়ে আগুন ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। ট্রেন না থামালে অনেক প্রাণের ক্ষতি হতো। তীব্রতা অনেক বেশি থাকায় স্থানীয়রা আগুনের কাছে ঘেঁষতে পারেননি। পরে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। শমসেরনগর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার জামাল উদ্দিন বলেন, ট্রেনের ১০ নম্বর বগিটি ছিল পাওয়ার সার্ভিসের। পাওয়ার সার্ভিস বগির সামনের ও পেছনের বগিসহ তিনটি বগি পুড়ে যায়। প্রথমে সামনের আটটি বগি কুলাউড়া রেলস্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। আর পেছনের চারটি বগি শমসেরনগর রেলস্টেশনে নিয়ে রাখা হয়েছে। পুড়ে যাওয়া তিনটি বগি উদ্ধার করেছে রেলওয়ের উদ্ধারকারী দল। মৌলভীবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট যৌথভাবে কাজ করে। প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন তারা। আগুন লাগার বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ট্রেনের পাওয়ার সার্ভিসের বগি থেকে আগুনের সূত্রপাত। তবে তদন্ত করে সূত্রপাত ও সঠিক কারণ জানা যাবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দিন বলেন, ধারণা করা হচ্ছে পাওয়ার সার্ভিস বগি থেকে আগুনের সূত্রপাত। তবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।