ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাড়া ফেলেছে বিশেষ জাতের লেনফাই তরমুজ। বাজারের অন্যান্য তরমুজের চেয়ে ১৫ গুণ বেশি মিষ্টি এই তরমুজের ভেতরে ছেয়ে আছে হলুদ বর্ণ। ফলে ক্রেতাদের কাছেও বেশ সমাদৃত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রথমবারের আবাদ হয়েছে এমন বিশেষ জাতের তরমুজ। সারা বছরই আবাদযোগ্য এ তরমুজের চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় গত বছর ১৪ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হলেও এবার আবাদ হয়েছে ১৭ হেক্টর জমিতে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ছাড়াও কসবা, নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর, নাসিরনগর আখাউড়ায় তরমুজের আবাদ হয়।
জেলায় দেশীয় জাত ছাড়াও ব্লক বেরি, সুইট বেরি লেনফাইসহ বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের তরমুজ চাষ হয়। সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের কৃষক খলিল মিয়া লেনফাই নামে হাইব্রিড জাতের তরমুজের আবাদ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন।
কৃষক খলিল মিয়া বলেন, প্রথমবার আমি পরীক্ষামূলক চাষ করলেও লাভজনক হওয়ায় দ্বিতীয়বার আবার এক বিঘা জমিতে আবাদ করি। এতে আমার খরচ হয়েছে ৫৫-৬০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হওয়াই বিক্রি করতে পারলে আমার উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকা লাভ হবে।
সরেজমিন দেখা যায়, গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে তরমুজের অংশ বিশেষ দেখা যাচ্ছে। কৃষকরা ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার কাজে ব্যস্ত আছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা আসছেন জমি থেকেই তরমুজ কিনে নিয়ে যেতে।
খলিলের ক্ষেতে পরিচর্যাকারী শ্রমিক হুমায়ুন মিয়া বলেন, তরমুজ চাষ ঝামেলামুক্ত। নিয়মিত আগাছামুক্ত করা ছাড়া তেমন কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। তবে তরমুজ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। আবাহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমাদের ফলন বেশ ভালো। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা লোকজন ক্ষেত থেকেই তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। নতুন ধরনের তরমুজ, তাই দামও বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
কৃষক সালাম মিয়া বলেন, খলিল মিয়ার তরমুজ ক্ষেত দেখে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসছেন। আমিও এখন থেকে তরমুজ চাষ করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
লালতীর সিড লিমিটেডের ডিভিশনাল ম্যানেজার তাপস চক্রবর্তী বলেন, লালতীরের হাইব্রিড লেনফাই জাতের এ হলুদ তরমুজ চাষ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষক খলিল মিয়া। এর ফলন ভালো হওয়ায় তিনি বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেছেন। এ তরমুজের বিশেষ গুণ হলো বাজারের অন্যান্য তরমুজের থেকে অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু। এর ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা লাভজনক হয়।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনোয়ার আহমেদ বলেন, বর্তমানে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য কারিগরি সহযোগিতাসহ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এতে কৃষকদের মাঝে চাষাবাদের আগ্রহ বাড়ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রবিউল হক মজুমদার জানান, জেলাজুড়ে এখন পর্যন্ত মাঠের পরিবেশ ভালো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর গড়ে হেক্টরপ্রতি ১৪ টন তরমুজ পাওয়া বলে আশা করছি। লাভের বিষয়টি বিবেচনা করেই কৃষকরা তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন। আশা করি আগামী বছরে আরো বেশি করে এ তরমুজ চাষাবাদ করবেন কৃষকরা।