দুই-একটা বাদে মৌলভীবাজারের সব চা-বাগানে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ইস্পাহানী-জেরিন চা বাগানের শ্রমিকরা সকাল থেকে কাজে যোগ দিলেও দুপুরের দিকে তাদের কাজে দেখা যায়নি।
জানা যায়, চা শ্রমিকেরা বাগানের কাজ বন্ধ রেখে বাগানে বাগানে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার ভুরভুরিয়া চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কয়েকজন চা শ্রমিক কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়েও আবার বাড়িতে ফিরে যান। কিছু শ্রমিক বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সঙ্গে আলোচনা করছেন কাজ করবেন কি না, সে বিষয়ে।
ভুরভুরিয়া বাগানের চা শ্রমিক আকাশ দোষাদ জানান, দেশের সব চা বাগানে যদি কাজ হয়, আমরাও করতে রাজি। তবে আমাদের দাবিটা অবশ্যই বাগান মালিকদের মেনে নিতে হবে। দীর্ঘ ১৬ দিন খেয়ে না খেয়ে আন্দোলন করছি আমাদের মজুরি বাড়ানোর জন্য। আমরা ১২০ টাকা মজুরিতে অনেক কষ্টে দিন কাটাই। আমাদের ১২০ টাকার বাইরে যে রেশন, চিকিৎসা, বাসস্থান বাগান কর্তৃপক্ষ দেয়; সেটা পর্যাপ্ত নয়। সেখানে অনেক ফাঁকি আছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে চেয়ে আছি। তিনি আমাদের মজুরি নিয়ে একটা ভালো সিদ্ধান্ত দেবেন আশা করি।’
গত মঙ্গলবার ধর্মঘটের ১৫তম দিনে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বিভিন্ন চা বাগানে গিয়ে শ্রমিকদের কাজ করার অনুরোধ জানান। তাদের অনুরোধে গতকাল ভাড়াউড়া ও জেরিন চা বাগানের শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে গত ৯ আগস্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি এবং পরে ১৩ আগস্ট থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করে আসছেন চা শ্রমিকেরা।
প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও সেটা মানছেন না সাধারণ শ্রমিকেরা। বাগানে বাগানে ঘুরে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। শ্রমিকদের ভাষ্য মতে, চা শ্রমিকরা ডিসি, এসপি, মন্ত্রীর কথায় কাজে যোগ দিবে না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ছাড়া কাজে যোগ দিবো না।
এদিকে মৌলভীবাজার জেলা সংবাদদাতা জানান, ধর্মঘটের ১৬তম দিনে অনেক বাগানে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়নি। সকাল থেকে চা বাগানগুলো নিরব থাকলে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বেশ কয়েকটি বাগানে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। অনেকেই বাগানের বাহিরে এসে সড়ক অবরোধ করেন। আবার অনেক শ্রমিকরা চা বাগানে ফ্যাক্টরি সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা করেন। এ সময় শ্রমিকরা মন্ত্রীর এক নেতার কাছ থেকে মাইক কেড়ে নিয়ে তাদের দুঃখ ও ক্ষোভের কথা যানান। শ্রমিকরা সেøাগান দেন ৩০০ টাকা মজুরি দিতে হবে নইলে বুকে গুলি মারতে হবে। জেলার সাধারণ চা শ্রমিকরা জানান প্রধানমন্ত্রী সরাসরি ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত তারা কিছুতেই কাজে ফিরবে না। বাংলাদেশ টি বোর্ডের দেওরাছড়া চা বাগানের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে প্রেম নগর এলাকায় এলজিইডির সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।