উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টির কারণে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানি দ্রুত গতিতে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ১১ সে.মি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৫ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পানি বাড়ায় যমুনার অরক্ষিত অঞ্চল সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার ব্রাহ্মনগ্রাম, আড়কান্দি, শাহজাদপুর উপজেলার পাঁচিল ও চৌহালী উপজেলায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে যমুনার সাথে জেলার আভ্যন্তরীণ নদী করতোয়া, ফুলজোড়, ইছামতি, বড়াল নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে চর এলাকাসহ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। রবিবার সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির ১১ সে.মি. বেড়ে ১২.৪৫ মিটার লেভেলে (বিপৎসীমা ১২.৯০ মিটার) প্রবাহিত হচ্ছে। কাজিপুর পয়েন্টেও ১১ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে ১৪.১৫ মিটার লেভেলে (বিপৎসীমা ১৪.৮০ মিটার) প্রবাহিত হচ্ছে। পাউবো বলছে, পানি আরো ৪/৫ দিন পানি বাড়লেও বিপৎসীমা অতিক্রম করবে না।চরাঞ্চল কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিয়া মুন্সী জানান, যমুনার পানি বাড়ায় চরাঞ্চেলের নীচু এলাকায় তলিয়ে গেছে। অনেক বসতভিটায় পানি ওঠতে শুরু করেছে। মাঠ ও ক্ষেত খামাওে পানি ওঠায় গবাদি পশু নিয়ে বিপদে পড়ছে চরাঞ্চলের মানুষেরা।এনায়েতপুরের আড়কান্দি গ্রামের বাসিন্দা আলহাজ্ব উদ্দিন ও আব্দুল মজিদ জানান, পানি বাড়ায় এনায়েতপুরের আড়কান্দি ও ব্রাহ্মন গ্রামে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে অন্তত দেড় শতাধিক বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে ভাঙন কবলিতরা। অনেকে খোলা আকাশের নিচে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আর হুমকির মুখে রয়েছে ফসলী জমিসহ বহু নানা স্থাপনা।
চৌহালীর সাংবাদিক হাসান জানান, চৌহালীর ভুতের মোড় এলাকায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে একটি স্কুল, ১৫-২০টি দোকান ঘর ও প্রায় ২০টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে প্রায় ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কলেজ ও একটি মাদ্রাসাসহ প্রায় দেড় শতাধিক বসতভিটা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙনের শিকার মানুষগুলোর ঘর তোলার সামর্থ্যও নেই ও জায়গা নেই। দুর্বিসহ জীবনযাপন করলেও জনপ্রতিনিধিরাও তাদের খোঁজ নেয় না। আর সরকার এনায়েতপুরে ভাঙন রোধে প্রায় দেড় বছর আগে ৬শ ৪৭ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করলেও তা কাজে লাগছে না। ঠিকাদাররা নদীর পাড়ে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ভরে রাখলেও ভাঙন শুরু হলে তা নদীতে ফেলছে না। এতে ভাঙন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি ভাঙন কবলিত মানুষের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মাহবুবুর রহমান জানান, ভাঙনের তীব্রতা যেখানে বেশি সেখানে জিওব্যাগ ফেলে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আর প্রকল্পের আওতায় সিসি ব্লক ও জিওব্যাগ তৈরির কাজ চলছে। ডিজাইন অনুযায়ী বর্ষা মৌসুম শেষে কাজ করা হবে।
সুত্র: ঢাকা অফিস