৮ মাসের শিশু রাইসা। বাবার কাছে আবদার, খেলনা এনে দিতে হবে তার। মেয়ের আবদার পূরণে বৈশাখী মেলায় খেলনা কিনতে গিয়েছিলেন বাবা রবিউল। কিন্তু সেই খেলনা নিয়ে আর বাড়ি ফেরা হয়নি তার। অভিযোগ উঠেছে রাতভর পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যু হয় রবিউলের। মেলা থেকে খেলনা না নিয়ে আসায় শিশু রাইসার কান্না ও নিহত রবিউলের স্ত্রী-স্বজনের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে লালমনিরহাটের হারাটী কাজীরচওড়া গ্রাম। ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে রাস্তায় শুয়ে কাঁদছে রবিউলের মা।
জানা গেছে, হারাটী কাজীরচওড়ার দুলাল খানের পুত্র রবিউল ঢাকা থেকে ছুটিতে বাড়িতে আসেন।
তাদের বাড়ির পাশে বসেছে বৈশাখী মেলা। মেলায় চলছিল জুয়ার আসর। জুয়ার আসরে এসআই আব্দুল হালিমের নেতৃত্বে ৫/৭ জন পুলিশ সদস্য লাঠিচার্জ করে। বৃহস্পতিবার রাতে ওই সময়ই মেয়ের জন্য খেলনা কিনতে মেলায় যান রবিউল। মেলায় ঢুকতেই পুলিশের লাঠিচার্জের কবলে পড়েন তিনি। আসল জুয়াড়ীরা পালিয়ে গেলেও পুলিশ রবিউল ও প্রল্লাত নামের দুইজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন থানায় তার উপর চলে নির্মম নির্যাতন। পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর পর রবিউলকে থানা থেকে নেয়া হয় লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে। লাশের মুখে অক্সিজেন লাগিয়ে রতভর চলে নাটক। একপর্যায়ে লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল থেকে রবিউলকে রেফার করা হয় রংপুর মেডিকেলে। এরইমধ্যে খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা ছুটে যায়। ছুটে আসে হাসপাতালে মৃত রবিউলের আত্মীয়-স্বজনরা। তখন জানা যায়, বেশ কিছুক্ষণ আগেই রবিউলের মৃত্যু হয়েছে। কান্নায় ভেঙে পড়ে সবাই। এ সময় রবিউলের বাবা দুলাল খান দাবি করেন, তার ছেলে খেলনা আনতে যায় মেলায় সেখানে পুলিশ তাকে আটক করে। পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।
তবে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম নিহত রবিউলের বাবার দাবি প্রত্যাখ্যান করে সাংবাদিকদের জানান, রবিউলকে আটকের পর সে অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে আনার পর মারা যায়। তবে তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর রহস্য জানা যাবে।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হামিরা হাসান চৌধুরী বলেন, নিহত রবিউলকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। তার অবস্থা বেগতিক হওয়ায় তাকে রংপুর মেডিকেলে রেফার করা হয়। কাগজপত্র রেডি করতে করতেই রবিউলের মৃত্যু হয়।
এদিকে রবিউলের মৃত্যুর জন্য পুলিশকে দায়ী করে গতকাল লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়ক সকাল থেকে ১২ঘণ্টা অবরোধ করে গ্রামবাসী। এ সময় তারা এসআই হালিমের শাস্তি দাবি করেন। পরে এসআই হালিমকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিক হাসান দোষীদের বিচার হবে বলে আন্দোলনকারীদের আশ্বাস দিলে দুপুর ২টায় অবরোধ প্রত্যাহার করে আন্দোলনকারীরা।