যশোরে গিয়ে কৌশলে পিকআপ ভাড়া করে কুষ্টিয়ায় নেওয়া হয়। এরপর পিকআপের মালিককে হত্যা করে লাশ ফেলে দেওয়া হয় পদ্মা নদীতে। পরে পিকআপ নিয়ে চলে যায় খুনিরা। যশোর থেকে আসার পথে ঝিনাইদহে হত্যার জন্য কসটেপ ও গামছা কেনে খুনিরা। এমন চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনার বিবরণ দিলেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মোঃ খাইরুল আলম। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ ক্লুলেজ একটি হত্যাকান্ড মাত্র দুদিনের মধ্যে সনাক্ত করা গেছে। এঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রধান হত্যাকারী এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেল তিনটায় পুলিশ সুপার তাঁর সভাকক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এসময় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভেড়ামারা সার্কেল) ইয়াসির আরাফাত, ভেড়ামারা থানার ওসি মজিবর রহমান ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি নাসির উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার ভেড়ামারা উপজেলার চরগোলাপনগর এলাকায় পদ্মা নদীতে একটি ভাসমান লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কসটেপ দিয়ে মুখ ও দুই পা বাধা ছিল। গলায় গামছা প্যাচানো ছিল। এখবর ছড়িয়ে পড়লে যশোর শহরের ৯নং ওয়ার্ড নীলগঞ্জ তাঁতীপাড়া এলাকা থেকে একটি পরিবার লাশ সনাক্ত করেন। নিহত মিনারুল ইসলাম (৪৩) ওই এলাকার আইয়ুব আলীর ছেলে। তিনি পেশায় পিকআপ চালক। নিজের পিকআপই তিনি চালান। শুক্রবার নিহতের স্ত্রী রাশিদা বেগম বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সংবাদ সম্মেলনে এসপি জানান, লাশ উদ্ধারের পর মোবাইলফোনের সূত্র ধরে হত্যাকারীদের সনাক্তের কাজ শুরু করে পুলিশ। শনিবার ভোরে ভেড়ামারা রামকৃষ্ণপুর এলাকা থেকে তুফান মালিথা (২০) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। তুফানের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে এসপি জানান, বুধবার বেলা এগারটায় ভেড়ামারা থেকে তুফান তার আরেক সঙ্গীকে নিয়ে ট্রেনযোগে যশোরে যায়। সেখানে গাড়ির যন্ত্রাংশ মেরামত করা হয় এমন এলাকায় যায়। বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে পিকআপ মালিক ও চালক মিনারুলের সাথে কথা বলে। ভেড়ামারায় একটি ট্রাকের বিকল ইঞ্জিন মেরামত করার জন্য তাকে নিয়ে ভেড়ামারায় আসার পরিকল্পনা করে। এতে রাজি হয়ে পিকআপ নিয়ে ভেড়ামারার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় তাঁরা। পথে রাতে ঝিনাইদহে তুফান হত্যায় ব্যবহৃত কসটেপ ও গামছা কিনে নেয়। এরপর রাত বারটায় তারা ভেড়ামারার মাঠের মধ্যে হাবাসপুর এলাকায় পৌছায়। সেখানে আগে থেকে থাকা আরেক যুবকের সহায়তায় তিনজন মিলে গাড়ি থেকে নেমে মিনারুলের মুখ ও পা কসটেপ দিয়ে বেধে ফেলে। একপর্যায়ে গামছা পেচিয়ে শ^াসরোধে হত্যা করে। লাশ একই গাড়িতে করে এক কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীতে ফেলে দিয়ে পিকআপ নিয়ে পালিয়ে যায়। হত্যা মামলাটি ঈশ^রদী নৌপুলিশ তদন্ত করছে। আসামী তুফানকে তাদের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে এসপি বলেন, বাকি দুই আসামীদের ধরতে ও পিকআপ উদ্ধারে পুলিশ অভিযান অব্যহত রেখেছে। এই চক্রটি এর আগে এমন ঘটনা ঘটিয়েছিল কি না সেটাও তদন্ত করা হচ্ছে। এটা ঠিক সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পিকআপ চুরি উদ্দেশ্যে ভিকটিমকে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে, পিবিআই কুষ্টিয়া অফিস থেকে প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ১০ আগষ্ট পাকশী ব্রীজের নিকট পদ্মা নদীতে হাত-পা বাঁধা, মুখে স্কচটেপ ও গলায় গামছা পেঁচানো এক অজ্ঞাতনামা পুরুষের লাশ উদ্ধার পূর্বক সনাক্ত করে পিবিআই, কুষ্টিয়া। মৃতদেহটি মিনারুল ইসলাম (৪৩), পিতা-আইয়ুব আলী, সাং-নীলগঞ্জ তাঁতীপাড়া, থানা-কোতয়ালী, জেলা-যশোর এর মর্মে জানা যায়। তিনি আরমান পরিবহন নামে ঢাকা মেট্রোঃ ন-১৮-১১৮৫ পিক আপের মালিক ও চালক। পিকআপ ছিনতাই এর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঐ দিনই সন্ধ্যা সাতটায় ড্রাম ট্রাকের ইঞ্জিন বহনের জন্য দুজন অজ্ঞাতনামা যুবক সাড়ে ৪ হাজার টাকায় ভাড়ার চুক্তিতে যশোর থেকে উক্ত পিকআপটি ভেড়ামারায় নিয়ে আসে। অ্যাডিঃ আইজিপি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও প্রত্যক্ষ দিক নির্দেশনায় পিবিআই, কুষ্টিয়া ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোঃ শহীদ আবু সরোয়ারের সার্বিক সহযোগিতায় পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ মনিরুজ্জামান যশোর এবং কুষ্টিয়া জেলায় বিরামহীন অভিযান পরিচালনা করে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মওলা হাবাসপুর গ্রামের নুরুজ্জামানের ছেলে আরশাদুল ইসলাম (৩১) ও একই গ্রামের মোঃ ফেরদৌস আলীর ছেলে তরিকুল(২২) কে আটক করে। তারা ঘটনার বিষয়টি স্বীকার করে। তাদের দেখানো মতে ও সনাক্ত মতে ছিনতাইকৃত পিকআপ নং ঢাকা মেট্রোঃ ন-১৮-১১৮৫ উদ্ধার করা হয়। উলে¬খ্য বিষয়টির পরবর্তী আইনী কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। পিবিআই, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মোঃ শহীদ আবু সরোয়ার জানান যে, নিজের ও গাড়ীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে চালকগণ ভাড়ায় যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই সংশ্লি¬ষ্ট যাত্রীদের পরিচয় সম্বন্ধে নিশ্চিত হবেন।