উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের ২২টি জেলার প্রবেশ দ্বার হিসাবে পরিচিত সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় সংযোগ মহাসড়ক। এই সড়কটি ব্যবহার করে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের যাতায়াতকারী যানবাহনগুলো। এবার ঈদে কর্মরত ঘরমুখো মানুষেরা বাড়িতে ফিরতে হবে এই মহাসড়ক দিয়েই।
২০১৯ সালের জুন থেকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। যার কারণে মহাসড়কের অনেক জায়গার রাস্তা সরু হয়ে গেছে আবার কোথাও কোথাও রাস্তা ঘুরিয়ে বিপরীত দিক দিয়ে রাস্তা খুলে দেয়া হয়েছে। আবার ৭টি স্থানে এক লেন দিয়েই পারাপার হতে হচ্ছে সবগুলো যানবাহনকে। মহাসড়কের ১৭ স্থানে খানাখন্দে ভরপুর থাকায় যানবাহন চলাললে চরম বিঘ্ন ঘটছে। ফলে প্রায়ই বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় মহাসড়ক থেকে শুরু করে সিরাজগঞ্জ অংশের হাটিকুমরুল গোল চত্বর হয়ে চান্দাইকোনা পর্যন্ত যানবাহনে ধীরগতি আবার কখনো এই অংশের ১৫-২০ কিলোমিটার এলাকায় জুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ যানজট লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এমনিতেই প্রতিবছর এই মহাসড়কের যাত্রীগন যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘন্টা ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
তার সাথে এবছর যুক্ত হয়েছে সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ। যা ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছে সড়কের যাত্রীরা।
বুধবার সকাল-সন্ধ্যা ও বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম পাড়, সায়দাবাদ, কড্ডার মোড় থেকে হাটিকুমরুল গোল চত্বর পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিলোমিটার এলাকা সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কের চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। কাজ চলার দরুন যানবাহনের চলাচলের সাধারণ গতি রোধ হচ্ছে। এদিকে তার সাথে যুক্ত হয়েছে সড়কের নলকা সেতুর নির্মাণের কাজ। তাতে আরো স্বাভাবিক গতি রোধ হয়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনের জটলা সৃষ্টি হচ্ছে।
রংপুর থেকে শ্যামলী ট্রাভেলসের একটি গাড়ি সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এলাকায় আসলে যাত্রী শামসুল হকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি ঢাকায় একটি প্রইভেট ফার্মে চাকরি করি। বিশেষ কাজে ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলাম। এখন আবার ঢাকায় যাচ্ছি।
সড়কে উন্নয়ন কাজের জন্য গাড়ি থেমে থেমে আসছে। আবার কোথাও কোথাও মেইন রোড থেকে ঘুরে পাশে নির্মাণাধীন রাস্তা দিয়ে আসতে হয়েছে।
এখনই ঢাকা যেতে যে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। ঈদের সামনে তো রাস্তায় চাপ থাকবে। যেভাবে রাস্তার কাজ চলছে তাতে আল্লাহ বলতে পারেন যে কতো ঘণ্টা বা কতদিন যানজট খেটে বাড়ি ফিরতে পারবো।
ঢাকা থেকে আসা দেশ ট্রাভেলসের যাত্রী সালমা আক্তার বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে হাটিকুমরুল গোল চত্বর পর্যন্ত আসলাম জায়গায় জায়গায় থেমে থেমে।
রাস্তার উন্নয়ন কাজ চলছে। তবে ঈদের সময় এই উন্নয়ন কাজে শেষ না হলে যাত্রীদের ভোগান্তি শেষ থাকবে না। এমনিতেই রোজার ঈদের ছুটিতে সবাই বাড়ি ফিরে আসে পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করার জন্য। তার উপরে গেল দুই বছর করোনার কারণে অনেকেই বাড়িতে এসে ঈদ করতে পারেনি।
এবছরে করোনা শিথিল হওয়ার কারণে সবাই বাড়িতে এসে ঈদ করার চিন্তা মাথায় রেখেছে। তাই ঈদের আগে যানবাহনের চাপটা বেশি হবে। যে ভাবে কাজ চলছে তাতে মনে হয় না কাজ শেষ হবে। তাই মনে হয় এবার ঈদটা অনেকেরই এই সড়কের উপর কেটে যাবে।
সিরাজগঞ্জের সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম জানান, আমাদের মহাসড়কের চার লেনের উন্নীতকরণের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। সড়কের যে সকল জায়গায় উঁচু-নিচু রয়েছে সে সকল জায়গায় মাটি ভরাট করে মেরামত করা হচ্ছে। ওদিকে নলকা সেতুর কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করছি তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয়ে যাবে।
মহাসড়কের কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার জয়েন্ট ভেঞ্চারের জেনারেল ম্যানেজার আক্লাস উদ্দিন বলেন, আমাদের কাজের গতি ঠিক আছে। এসব কাজ দৃশ্যমান হতে সময় লাগে। গত দুই বছর করোনার কারণে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। এবছরে রড, সিমেন্টের মূল্য বৃদ্ধি ও পাথর সংকট দেখা দিয়েছে। তবুও সকল কিছু পিছনে রেখে আমরা ঈদে ঘরমুখো মানুষদের স্বাভাবিক গতিতেই চলাচলের ব্যবস্থা করে দেবো।
সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক (প্রশাসন) সালেকুজ্জামান খান বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষে যাত্রার পথকে সুগম করতে আমরা জেলা ট্রাফিক পুলিশ তৎপর রয়েছি। যাত্রীরা যেন যানজটমুক্ত ভাবে ভোগান্তি শিকার যাতে না হয় সেদিকে আমাদের নজর থাকবে। সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করেই আমরা কাজ করছি।
এদিকে ঈদে ঘরমুখো ও ঈদ পরবর্তী কর্মমুখো মানুষদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য জেলা পুলিশের উদ্যোগে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিয়ে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানের খানাখন্দ ও সরু রাস্তা চিহ্নত করে তার সমাধান নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম বিপিএম বলেন, মহাসড়কে প্রশস্তের কাজ চলছে কচ্ছপের গতিতে। অনেক স্থানে খানাখন্দে ভরপুর, কিছু কিছু স্থানে রাস্তা সরু হওয়ার কারণে স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করেত পারছে না যানবাহন। ফলে সৃষ্ট হচ্ছে যানজট। তখন পুলিশকে চরম পরিশ্রম করতে হয়। এক দপ্তরের গাফিলতি আমার পুলিশকে বহন করতে হয়। তবে এবার মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আশা করি এবার মানুষ সুন্দরভাবে এই মহাসড়ক পারাপার হতে পারবে।