প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন নগরী বগুড়ার মহাস্থানগড় খননে বেরিয়ে এসেছে গুপ্তযুগের দুর্লভ প্রত্ন নিদর্শন। এর মধ্যে রয়েছে একটি বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধস্তূপের ধ্বংসাবশেষ। এ ছাড়া পাওয়া গেছে প্রাচীন লিপিখচিত সিল, প্রত্নযুগের টেরাকোটা, কালো চকচকে ভগ্ন মৃৎপাত্র, অলংকৃৃত ইট, পোড়ামাটির তৈরি মানবমূর্তি, পোড়ামাটির খেলনার ভগ্নাংশ, তৈজসপত্রের ভগ্নাংশ, পোড়ামাটির পাখি, প্রদীপ, কালির দোয়াত, পাথরের গুটিকাসহ বিভিন্ন প্রত্নসামগ্রী। মহাস্থানগড়ের জাহাজঘাটা থেকে দক্ষিণে এবং পরশুরাম প্যালেসের উত্তরে বৈরাগী ভিটায় একটি রাজবাড়ি ছিল বলে ধারণা করা হয়। সে সময়ের রাজা মুনি, ঋষি বা বৈরাগীর সেবা করতেন বলে স্থানটির নাম বৈরাগীর ভিটা। বৈরাগীর ভিটায় ১৯২৮ সালের দিকে প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চালিয়ে পাল আমলের প্রাথমিক ও শেষ যুগের দুটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। ঠিক তার পাশেই লাগানো স্থানের নাম ধরা হয় লইয়ের কুড়ি বা মহাস্থানভিটা। প্রত্নতত্ত্ব কিছু পাওয়ার আশা থেকে বগুড়ার মহাস্থানগড়ের লইয়ের কুড়ি ও বৈরাগীর ভিটায় খননকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর। বাংলাদেশ ও ফ্রান্স যৌথভাবে খননকাজটি শেষ করে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। ওই সময় প্রায় দুই মাস খননের পর পাওয়া যায় গুপ্ত, পাল ও মৌর্য আমলের ধ্বংস হয়ে যাওয়া অবকাঠামো ও বেশ কিছু প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের নিজস্ব অর্থায়নে খননকাজ পরিচালনার পর উন্মোচিত অবকাঠামো নিয়ে গবেষণা করা হয়। তবে করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ১ মার্চ মহাস্থানগড়ে প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও প্রাপ্ত পুরাকীর্তির ইতিহাস-ঐতিহ্য খুঁজে বের করা ও গবেষণার উদ্দেশ্যে পুনরায় খনন শুরু হয়।
টানা প্রায় দুই মাস দুর্গনগরীর ভিতরে বৈরাগী ভিটায় এবার চালানো হয় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ। মাঝখানে ঈদের ছুটির কারণে সপ্তাহ দুয়েক বন্ধ থাকে খননকাজ। বৈরাগীর ভিটায় খননে মিলেছে গুপ্তযুগের একটি বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধস্তূপের ধ্বংসাবশেষ। এ ছাড়া পাওয়া গেছে প্রাচীন লিপিখচিত সিল, প্রত্নযুগের টেরাকোটা, কালো চকচকে ভগ্ন মৃৎপাত্র, অলংকৃত ইট, পোড়া মাটির তৈরি মানবমূর্তি, পোড়ামাটির খেলনার ভগ্নাংশ, তৈজসপত্রের ভগ্নাংশ, পোড়ামাটির পাখি, প্রদীপ, কালির দোয়াত, পাথরের গুটিকাসহ বিভিন্ন প্রত্নসামগ্রী। শনিবার প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাস্থান জাদুঘর চত্বরে বৈরাগীর ভিটায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে প্রাপ্ত প্রত্নবস্তু প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক রতনচন্দ্র পণ্ডিত এ প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন।