মুঘল আমলে প্রাচীন বাংলার গৌরব মসলিন কাপড় ঢাকায় তৈরী হতো।মসলিন বিশেষ এক ধরনের তুলার আঁশ থেকে প্রস্তুতকৃত সূতা দিয়ে বয়ন করা এক প্রকার অতি সূ² কাপড়।এটি ঢাকাই মসলিন নামেই পরিচিত।ফুটি কার্পাস নামক তুলা থেকে প্রস্তুত অতি চিকন সুতা দিয়ে মসলিন তৈরী করা হতো।চড়কা দিয়ে কাটা,হাতে বোনা মসলিনের জন্য সর্বনিন্ম ৩০০ কাউন্টের সুতা ব্যবহার করা হতো।নানা কারণে আঠারো শতকের শেষার্ধে বাংলায় মসলিন বয়ন বন্ধ হয়ে গেলেও বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগে পুনরায় বুননের কাজে হাত দেয়া হয় এবং এই শিল্পকে আবার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।ঢাকাই মসলিনের শেষ প্রদর্শনী হয়েছিল লন্ডনে ১৮৫০ সালে।এর ১৭০ বছর পর বাংলাদেশে আবার বোনা হলো ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিন কাপড়ের শাড়ী।মসলিন ঠিক তেমনই ঠিক যেমনটি আগে ছিল আংটির ভেতর দিয়ে গলে যায় আস্ত শাড়ী।ইতিমধ্যেই ঢাকাই মসলিনের জিআই স্বত্বের অনুমোদন পাওয়া গেছে।২৮ ডিসেম্বর ২০২২ এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশিত হয়েছে।আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও মসলিন তৈরী হয় কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন-ঢাকাই মসলিনের বিশেষত্বই আলাদা।গত ছয় বছরে একদল গবেষকের চেষ্টায় ছয়টি মসলিন তৈরী করা হয়েছে।বর্তমান যুগে এসেও ঢাকাই মসলিন তৈরীতে তাঁতিদের হাতে কাটা ৫০০ কাউন্টের সুতাই ব্যবহার করতে হয়েছে।কাপড় বোনাও হয়েছে হস্তচালিত তাঁতেই।এই কাজটি সম্পন্ন করতে ‘বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিন সুতা তৈরীর প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার (প্রথম পর্র্যায়)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।
ঢাকাই মসলিন উৎপাদনের ব্যয় বেশি।একটি মসলিন তৈরীতে খরচ পড়বে সাত থেকে নয় লাখ টাকা।ঢাকাই মসলিন রপ্তানি করলে তার মূল্যও হবে কয়েক গুণ।এছাড়া আধুনিকতার স্বার্থে এর ডিজাইনেরও গুরুত্ব রয়েছে।এই কারণে ঢাকাই মসলিনের উৎপাদন ও তা বাজারজাতকরণের ব্যবস্থাপনা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে সরকার।এটি করা গেলে এ খাতের উদ্যোক্তারা আকৃষ্ট হবেন,বিনিয়োগ বাড়বে এবং দেশ ছেড়ে বিদেশেও ঢাকাই মসলিনের বাজার সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।ঢাকাই মসলিন বাজারজাত করা গেলে মানুষ বিশ^মানের পণ্য হিসেবে আগ্রহের সাথে কিনবে।বিশ^ ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে বিদেশীরাও মসলিন কিনতে এগিয়ে আসবে।যেহেতু বাংলাদেশ বিশে^ পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় আর ঢাকাই মসলিনের কদর বিশ^জোড়া তাই এ শিল্পটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
সুত্র নতুন বার্তা