বৈশ্বিক সংকটে ব্যয় কমাতে নতুন বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জ্বালানির ব্যবহার কমাতে মন্ত্রীদের গাড়ি নিয়ে বেশি ছোটাছুটি না করার এবং ‘সি’ ক্যাটাগরির প্রকল্প আপাতত বন্ধ রাখা, প্রয়োজন ছাড়া কেনাকাটা না করা এবং উৎপাদন বৃদ্ধির নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা চিন্তা করছি এটা নিয়ে। সব জায়গায় কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে। যেমনÑ মন্ত্রীদেরও তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, গাড়ি নিয়ে ছোটাছুটির দরকার নেই। এ কথা একটু আগেও বলেছেন। গণপরিবহন ভাড়া বাড়ছে কি-না জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী বলেন, এ কথা এখন বলতে পারব না। যখন বাড়বে তখন বলা যাবে। একটা ছোট কথা থেকে অনেক বড় কথা হয়ে যেতে পারে। এখন আমাদের কথাবার্তাও সতর্কভাবে বলতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, খরচ কমাতে প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছেন। এজন্য আমাদের প্রকল্পগুলোর ক্যাটাগরি করা হয়েছে এবিসি। এ ক্যাটাগরির প্রকল্প যেগুলো সেগুলো ইমিডিয়েটলি প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গুরুত্ব অনুযায়ী প্রকল্পগুলোকে এ কোনগুলো বি ও কোনগুলো সি ক্যাটাগরিতে ফেলবে। এ ক্যাটাগরির প্রকল্পের পুরো টাকা খরচ করা যাবে। বি ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোতে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচ করা যাবে। আর সি ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন স্থগিত থাকবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কেনাকাটাতে যথাসম্ভব যেগুলো ইমিডিয়েট, না কিনলে হবে না, সেই জাতীয় কেনাকাটা চলবে। যেগুলো আপাতত না কিনলেও চলবে, সেসব কেনাকাটা আপাতত স্থগিত থাকবে। বিদেশে প্রশিক্ষণের বিষয়ে তো এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ট্রেজারি থেকে বিল হয়, এমন কোনো বিদেশভ্রমণ এখন মন্ত্রণালয়গুলো করতে পারবে না। সরকারি টাকায় সব ধরনের বিদেশভ্রমণ বন্ধ থাকবে। তবে দরপত্রে থাকা দরদাতার ব্যয়ে প্রযুক্তি স্থানান্তর সংক্রান্ত যে বিদেশ সফর রয়েছে সেগুলো বন্ধ থাকবে না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে খুবই জোর দিয়েছেন। বিশেষ করে কোথাও কোথাও যদি এক ফসলি জমি থাকে, সেখানে তিন ফসল করার বিষয়টি চিন্তা করতে হবে। বাড়ির উঠানে শাকসবজি এগুলো করতে হবে। সবাইকে একটু সহযোগিতা করার জন্য উনি প্রধানমন্ত্রী বিশেষ অনুরোধ করেছেন। কারণ এটা আমরা জানি না, কালকে-পরশু চুক্তি হলো, কালকেই আবার ইউক্রেনের ওদেসা বন্দরে বোমাবর্ষণ হয়েছে। চুক্তি হয়েছে ইউক্রেন থেকে খাবারটা বেরিয়ে আসবে। বন্দর ছাড়া আসবে কীভাবে? এটা তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে না। সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে খাবার ও সার নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। আমাদের জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের বারবার অনুরোধ করা হয়েছে। যেভাবে হোক, আমরা যেন সাশ্রয়ী হই। অহেতুক এনার্জি ও টাকা-পয়সা খরচ না করি। আমি এরই মধ্যে আমার অফিস রুমে জানালার পর্দা তুলে দিয়েছি, ছোট লাইটগুলো বন্ধ রাখছি। সরকারি-বেসরকারি গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। টানা করোনাভাইরাস মহামারি ও সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ব্যয় সাশ্রয় করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানির সাশ্রয় ও রিজার্ভ রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয় কমাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেট খাতে বরাদ্দ অর্থ সাশ্রয় ও হ্রাস করার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। আবার জ্বালানির ব্যবহার কমাতে মন্ত্রীদের গাড়ি নিয়ে বেশি ছোটাছুটি না করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি সব দফতরে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবদের সভায় নেওয়া হয় এই সিদ্ধান্ত। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়েও ব্যয় সাশ্রয়ে নানা রকমের নির্দেশনা দিয়েছেন।