1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
ভারতীয় জামদানির দখলে ঈদ বাজার | Bastob Chitro24
শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
ফিনান্সিয়াল টাইমসের রিপোর্ট মেয়ের সঙ্গে দিল্লিতে থাকছেন শেখ হাসিনা, ঘুরতে দেখা গেছে পার্কে অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাবিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার রাজনীতি নিষিদ্ধ জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা হত্যায় জড়িতরা শনাক্ত, ৫ জনই ছাত্রদলকর্মী কুষ্টিয়া গড়াই নদীর উপকূলবর্তী এলাকায় পানি বাড়াতে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। সংসদ ভবনে ভাঙচুর-লুটপাট, খোয়া গেছে ৯০ লাখ টাকা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সা: আজ সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর গ্রেপ্তার আসুন নতুন বাংলাদেশ গড়তে একসঙ্গে কাজ করি : ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বিদ্যুৎ-জ্বালানির মুনাফা বোনাসের তদন্ত হবে

ভারতীয় জামদানির দখলে ঈদ বাজার

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২

বাহারি ডিজাইন, অপূর্ব রং, অপরূপ নকশা এবং বুনন। জামদানি শুধু ছয় গজের শাড়িই নয়, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস ও ঐতিহ্য। দেশ ও কালের সীমানা পেরিয়ে জামদানির সুনাম বিশ্বব্যাপী। বাঙালি নারীদের একান্ত সঙ্গী শাড়ি। গুণগতমান ও নজরকাড়া সৌন্দর্য্যে সব বয়সী নারীদের কাছে জামদানি শাড়ি জনপ্রিয়। উৎসবে এর চাহিদা বাড়ে বহুগুণ। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে দেশি জামদানি শাড়ির চেয়েও বেশি চাহিদা ভারত থেকে আনা জামদানির। কম মূল্যে একই ডিজাইনের শাড়ি পাওয়ায় ভারতীয় জামদানির চাহিদা বাড়ছে।

২০১৫ সাল থেকে ভারতে জামদানি তৈরি হচ্ছে। সে সময় থেকেই আমদানি শুরু হয়। এদিকে দেশি তাঁতীরা উৎপাদন খরচ, পর্যাপ্ত মজুরি না পাওয়ায় অন্য কাজে নিয়োজিত হচ্ছেন। দিন দিন কমছে কারিগর। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক তাঁত শিল্প। দোকানে যত শাড়ি বিক্রি হয় তার ৩০ ভাগ দেশি শাড়ি, বাকি ৭০ ভাগই ভারতীয় শাড়ির দখলে।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, জামদানি শাড়িতে বাহারি রং, অপূর্ব নকশা আর সূক্ষ্ম বুননে রয়েছে ভিন্নতা। নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে প্রতিটি শাড়িই যেন সেরা। সৌন্দর্য্যে একটি অন্যটিকে ছাড়িয়ে গেছে। আভিজাত্য, ঐতিহ্য ও শ্রেষ্ঠত্বের দিক থেকে এদেশের জামদানির তুলনা আর কিছুর সঙ্গে হয় না বললেই চলে। ভিন্ন ভিন্ন নকশার রয়েছে সুন্দর সব নাম। দোকানিরা সাজিয়ে রেখেছেন নানা ভাবে। ৩ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার জামদানি শাড়ি রয়েছে। তেরছা, জলপার, পান্না হাজার, করোলা, দুবলাজাল, সাবুরগা, বলিহার, শাপলা ফুল, আঙ্গুরলতা, ময়ূরপ্যাঁচপাড়, বাঘনলি, কলমিলতা, চন্দ্রপাড়, ঝুমকা, বুটিদার, ঝালর, ময়ূরপাখা, পুইলতা, কল্কাপাড়, কচুপাতা, প্রজাপতি, জুঁইবুটি, হংসবলাকা, শবনম, ঝুমকা, জবাফুলসহ আরও বিভিন্ন নামের শাড়ি রয়েছে।
নিউ মার্কেটের জামদানি স্টোরের ব্যবসায়ী বলেন, বর্তমানে দেশের বাজারে জামদানির চাহিদা  কমছে। উৎপাদনের খরচ বেশি, মজুরিতে না পোষানোয় কারিগর টিকছে না। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক তাঁত। দেশি শাড়ির চেয়ে ভারতীয় জামদানির দাম কম। ব্যবসায়ীরা তাই ভারতীয় জামদানি আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্তত ৫টি দোকানের মালিক বলছেন, দোকানে যত শাড়ি বিক্রি হয় তার ৩০ ভাগ দেশি শাড়ি, বাকি ৭০ ভাগ ভারতীয় শাড়ির দখলে। তারা বলেন, দেশে তাঁতীদের একটি জামদানি তৈরি করতে লাগে কমপক্ষে সাত দিন। কিন্তু সেই তুলনায় তাঁতীরা মজুরি পাচ্ছে না। পেশা ছেড়ে অন্য কাজে নিয়োজিত হচ্ছে। এদিকে ভারতে এই জামদানি শাড়ি মেশিনে তৈরি হচ্ছে। তারা একদিনে তিনটি শাড়ি তৈরি করছে। সে কারণে বাংলাদেশের জামদানি মার খেয়ে যাচ্ছে। তারা বলেন, দেশি জামদানি মানের দিক থেকে যেমন সেরা দামেও একটু বেশি। ভারতের শাড়ির দাম পাঁচ হাজার টাকার উপরে কখনো যায় না। সেজন্য ক্রেতারা বেশি ঝুঁকছেন ভারতের জামদানির উপর। কিন্তু মানটা তারা দেখছেন না। মানুষ শাড়ির ডিজাইন দেখে বুঝে না। তারা মনে করে এটাও দেশি শাড়ির মতো সুন্দর হবে। আসলে কিন্তু তা নয়।
ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেটের জামদানি ঘরের বিক্রেতা বিল্লাল খান বলেন, দেশি জামদানির সঙ্গে কোনো শাড়ির তুলনা নেই। অনেক ক্রেতার বাজেট কম থাকায় সে ইন্ডিয়ান জামদানি কিনছেন। খুব কম মানুষ দেশি জামদানি ক্রয় করে। ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে ভারতীয় জামদানি পেয়ে যায়। যারা অরজিনাল জামদানি চেনে তারা কখনো আর্টিফিশিয়াল জামদানি ক্রয় করে না। সারা বিশ্বের মধ্যে অরজিনাল জামদানি শুধু বাংলাদেশে তৈরি হয়। ভারতে আমাদের দেশেরটা নকল করে মেশিনে তৈরি করে। আমাদের দোকানে ৩০ ভাগ দেশি আর ৭০ ভাগ ভারতীয় জামদানি।
শাড়ি কিনতে মিরপুর থেকে নিউ মার্কেট এসেছেন নুসরাত। তিনি বলেন, ভারতীয় শাড়ি ক্রয় করবো। কারণ এই শাড়ির দাম কম। দেশি শাড়ি খুব ভালো কিন্তু বাজেটে কুলায় না। একটার দামে একসঙ্গে অনেকগুলো ক্রয় করতে পারবো। খুব বড়জোর বছরে একটি দেশি জামদানি ক্রয় করি। এইবার ঈদে মায়ের জন্য তিন হাজার টাকা দিয়ে একটি ভারতীয় জামদানি ক্রয় করেছি। তবে শুধু জামদানি নয়, অন্যান্য শাড়িও ক্রয় করা হয়।
রায়হান একসময় জামদানি শাড়ি তৈরির কাজ করতেন। তিনি বলেন, ৩৫ বছর জামদানি শাড়ি তৈরি করতাম। এখন বাসের হেলপারের কাজ করি। গত সাত বছর ধরে এই কাজ ছেড়ে দিয়েছি। এই কাজ করে পোষায় না। যে টাকা পেতাম তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু মাঝে মাঝে খুব মায়া হয়, মনে হয় আবার ওই কাজে ফিরে যাই। এটি আমাদের বংশের বাপ-দাদারাও করে গিয়েছেন। কিন্তু মায়া দেখিয়ে কি লাভ। পেট তো চলে না। একটি শাড়ি তৈরি করতে অনেক সময় লাগে সেখানে টাকা অল্প পাই। আমরা শ্রমিক, আমাদের মজুরি কম।
ঢাকা নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির জয়েন্ট সেক্রেটারি মো. জহির উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ভারতীয় শাড়ি আমদানি করা হচ্ছে বেশি। ভারতীয় জামদানি দামে সস্তা, তারা আমাদের দেশের ডিজাইন নকল করে তৈরি করছে। সস্তা হওয়ায় ভারতের শাড়ির চাহিদা বেশি। ভারতীয় কারিগররা লাইলনের সুতা দিয়ে তৈরি করে। আর দেশি তাঁতীরা অরজিনাল রেশম সুতা দিয়ে নিজেরা হাতে তৈরি করছে। দেশি শাড়ির দাম সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। সেখানে ভারতীয় শাড়ির দাম ৬ হাজার টাকার উপরে নেই। ভারতীয় শাড়ি যারা তৈরি করছে তারা একসময় আমাদেরই কারিগর ছিল। তারা ঢাকাতেই একসময় ভালো জামদানি শাড়ি তৈরি করতো। কিন্তু তাদের এখানে সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় ভারতে চলে যায়। সেখানে গিয়ে হাতে শাড়ি তৈরি করার পরিবর্তে মেশিনে তৈরি করছে। এই কারিগরগুলো একসময় নিজেদের হাতের তৈরি নকশার কাজও ভুলে যাবে যদি এভাবে চলতে থাকে। সব তাঁতীরা হাতের কাজ বাদ দিয়ে মেশিনের কাজে অংশ নিবে। ভারতে আগে মসলিন বা অন্যান্য শাড়ি তৈরি হতো কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে জামদানি শাড়ি তৈরি করছে তারা। এদিকে তাদের জামদানির চাহিদা বাড়ায় দেশের শিল্পে ধস নেমেছে। ৫-৭ বছর আগে ভারতে আমাদের দেশের জামদানি শাড়ি হাজার হাজার পিস নিতো আর এখন তাদের কাছ থেকে আমাদের আমদানি করতে হয়। আমাদের দেশের হাতে তৈরি ৩০ হাজার টাকার একটি জামদানির ডিজাইন ভারত তৈরি করে মাত্র ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করে। তাহলে ক্রেতা কি আর দেশেরটা ক্রয় করবে। তিনি আরও বলেন, ১৯৫২ সাল থেকে আমি জামদানি শাড়ির ব্যবসা করি। তারপর থেকে খুব রমরমা অবস্থায় চলছে। কিন্তু ভারত যখন তৈরি করা শুরু করলো তখন দেশি শাড়ির ধস নেমে গেছে। আমাদের শিল্প শুধু স্বীকৃতি পেয়েছে কিন্তু বাস্তবে ভালো নেই। এই শিল্পকে বাঁচাতে হলে তাঁতীদের সঠিক পারিশ্রমিক দিয়ে কাজে ফেরানো প্রয়োজন। তাঁতীদের জন্য বাসস্থান করে দেয়া দরকার। ক্রেতাদেরও বুঝতে হবে শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে তাদের দেশি পণ্যটি ক্রয় করতে হবে। ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে গেলে দেশি জামদানি শাড়িকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এটি তৈরির মূল স্থান। এরপর দেশি আরও কিছু কিছু জায়গায় ছড়িয়ে যায়। কালের বিবর্তনে  এখন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে জামদানি। ২০১৫, ২০১৬ সাল থেকে ভারতের জামদানি শাড়ি আমদানি হচ্ছে। তার আগে জামদানি নামে যত শাড়ি দেশ-বিদেশে পৌঁছেছে সব আমাদের দেশের তাঁতীদের হাতে তৈরি শাড়ি। ভারত দেশের জামদানির ডিজাইন নকল করে আমাদের শিল্পটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ক্রেতাদের দশজনের মধ্যে একজন দেশি জামদানি ক্রয় করে, বাকিরা সব ভারতীয় জামদানি। কম দাম, একই ডিজাইন পেলে ক্রেতারাও কিনতে স্বাচ্ছদ্য বোধ করে। দেশের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন ছিল। তাঁতীদের কান্না, তাঁতীদের আহাজারি খুব মর্মান্তিক। এদিকে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত। যেখানে আগে মাসে ৪-৫ শত পিস জামদানি শাড়ি বিক্রি হতো সেখানে এখন দুই পিস শাড়িও বিক্রি হয় না। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে কারিগরদের শিক্ষাটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
জামদানির সেকাল-একাল: মসলিন বয়নে যেমন ন্যূনতম ৩০০ কাউন্টের সুতা ব্যবহার করা হয়; জামদানি বয়নে সাধারণত ২৬-৮০-৮৪ কাউন্টের সুতা ব্যবহৃত হয়। জামদানি নানা স্থানে তৈরি করা হয় বটে কিন্তু ঢাকাকেই জামদানির আদি জন্মস্থান বলে গণ্য করা হয়। জামদানি বয়নের অতুলনীয় পদ্ধতি ইউনেস্কো কর্তৃক একটি অধরা সংস্কৃতির ঐতিহ্য (ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেইজ)। জামদানির বুনন শিল্প ২০১৩ সালের ৪ঠা ডিসেম্বরে হেরিটেইজ স্বীকৃতি লাভ করে। অপরূপ নকশা ফুটিয়ে তোলা হয় জামদানি শাড়িতে। প্রাচীনকালের মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে জামদানি শাড়ি বাঙালি নারীদের অতি পরিচিত। মসলিনের উপর নকশা করে জামদানি কাপড় তৈরি করা হয়। জামদানি বলতে সাধারণত শাড়িকেই বোঝানো হয়। তবে জামদানি দিয়ে নকশি ওড়না, থ্রিপিস, কুর্তা, পাগড়ি, রুমাল, পর্দা প্রভৃতিও তৈরি করা হয়। ১৭০০ শতাব্দীতে জামদানি দিয়ে নকশাওয়ালা শেরওয়ানির প্রচলন ছিল।
জামদানির নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মতবাদ রয়েছে। একটি মত অনুসারে ‘জামদানি’ শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে। ফার্সি জামা অর্থ কাপড় এবং দানা অর্থ বুটি, সে অর্থে জামদানি অর্থ বুটিদার কাপড়। এ কারণে মনে করা হয় মুসলমানেরাই ভারত উপমহাদেশে জামদানির প্রচলন ও বিস্তার করেন। আরেকটি মতে, ফারসিতে জাম অর্থ এক ধরনের উৎকৃষ্ট মদ এবং দানি অর্থ পেয়ালা। জাম পরিবেশনকারী ইরানি সাকির পরনের মসলিন থেকে জামদানি নামের উৎপত্তি ঘটেছে।
জামদানি শাড়িতে রং দিয়ে নকশা করা হয় না। তাঁতীদের কল্পনাকে সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়। নকশার কাজটি যেহেতু তাঁতীরাই করে, সেহেতু সেখানে দেশের প্রকৃতির কথা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। এ কারণেই জামদানির নকশায় দেশীয় ফুল, লতা, পাতার চিত্রই বেশি প্রাধান্য পায়। তবে জ্যামিতিক নকশা অনুযায়ী জামদানি নানা নামে পরিচিতি পায়। জামদানি শাড়িতে বুননের মাধ্যমেই নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। নকশা অনুযায়ী জামদানির নানা নাম হয়ে থাকে। যেমন- তেরছা, জলপার, পান্না হাজার, করোলা, দুবলাজাল, সাবুরগা, বলিহার, শাপলা ফুল, আঙ্গুরলতা, ময়ূরপ্যাঁচপাড়, বাঘনলি, কলমিলতা, চন্দ্রপাড়, ঝুমকা, বুটিদার, ঝালর, ময়ূরপাখা, পুইলতা, কল্কাপাড়, কচুপাতা, প্রজাপতি, জুঁইবুটি, হংসবলাকা, শবনম, ঝুমকা, জবাফুল ইত্যাদি।
জামদানি শাড়ি নানা প্রকার হয়। তবে প্রাথমিকভাবে জামদানি শাড়ির উপাদান অনুযায়ী এটি তিন প্রকার। হাফ সিল্ক জামদানি- যার আড়াআড়ি সুতাগুলো হয় তুলার আর লম্বালম্বি সুতাগুলো হয় রেশমের। ফুল কটন জামদানি- যা সম্পূর্ণ তুলার সুতায় তৈরি। ফুল সিল্ক জামদানি- যা সম্পূর্ণ রেশমের সুতায় তৈরি।
জামদানির প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায়, আনুমানিক ৩০০ খ্রিস্টাব্দে কৌটাল্যের অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে পেরিপ্লাস অব দ্য এরিথ্রিয়ান সি বইতে এবং বিভিন্ন আরব, চীন ও ইতালির পর্যটক ও ব্যবসায়ীর বর্ণনাতে। ভূগোলবিদ সোলায়মান তার গ্রন্থ স্রিল সিলাই-উত-তওয়ারিখে রুমি নামক রাজ্যে সূক্ষ্ম সুতি কাপড়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। তার বর্ণনা অনুসারে বোঝা যায়, রুমি রাজ্যটি আসলে বর্তমানের বাংলাদেশ। চতুর্দশ শতাব্দীতে বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা বাংলাদেশ পরিভ্রমণ করেন এবং সোনারগাঁও এলাকাস্থিত সুতিবস্ত্রের প্রশংসা করেছেন। যোড়শ শতাব্দীর শেষের দিকে ইংরেজ র‌্যালক ফিচ ও ঐতিহাসিক আবুল ফজলও ঢাকার মসলিনের প্রশংসা করেছেন।
ইউরোপীয়, ইরানি, আর্মেনিয়ান, মুঘল, পাঠান প্রভৃতি বণিকেরা মসলিন ও জামদানি ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ কারণে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধানেরাও এই শিল্প বিকাশে ভূমিকা রেখেছেন। ঢাকাই মসলিনের স্বর্ণযুগ বলা হয় মুঘল আমলকে। এ সময় দেশে-বিদেশে মসলিন, জামদানির চাহিদা বাড়তে থাকে এবং শিল্পেরও ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। আঠারো শতকে ইংরেজ দলিল থেকে জানা যায়, মলমল খাস ও সরকার-ই-আলি নামের মসলিন সংগ্রহ করার জন্য দারোগা-ই-মলমল পদবির উচ্চ পর্যায়ের রাজ কর্মচারী নিযুক্ত ছিলেন। প্রতিটি তাঁতখানায় একটি দপ্তর ছিল এবং এখানে দক্ষ তাঁতী, নারদিয়া, রিপুকার প্রভৃতি কারিগরদের নিবন্ধন করে রাখা হতো। তবে জামদানির সেদিন এখন আর নেই। কম আয়ের কারণে তাঁতীরা আর এ পেশায় আসতে চাইছেন না। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার অচল তাঁতগুলো প্রাচীন গৌরবগাঁথার নীরব সাক্ষী হয়ে আছে। কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়িরও একই দশা। বর্তমানে রূপগঞ্জের নোয়াপাড়াতে জামদানি পল্লী স্থাপিত।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি