1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
বিনামূল্যের পাঠ্যবই মিলছে বাজারে | Bastob Chitro24
বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৩৮ অপরাহ্ন

বিনামূল্যের পাঠ্যবই মিলছে বাজারে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫

ঢাকা অফিস:
সরকারের পক্ষ থেকে বিতরণ করা বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক এখনও হাতে পায়নি বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, যৎসামান্য বই পাওয়া গেছে এবং সেগুলো বিতরণ করা হয়েছে। বাকি বই হাতে পেলে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। ফলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইট থেকে বইয়ের পিডিএফ কপি ডাউনলোডের পর সেগুলো ফটোকপি করেই চলছে পাঠ কার্যক্রম।

একদিকে এ-ই যখন অবস্থা, অন্যদিকে তখন চলতি বছরের বিনামূল্যের অসংখ্য বই মিলছে রাজধানীর বিভিন্ন বুক স্টলে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি বই কালোবাজারে পাচারকারী চক্রের পাশাপাশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি প্রতারক চক্রও। তারা জাল টাকা ছাপানোর মতো এনসিটিবির ওয়েবসাইট থেকে বিনামূল্যের সরকারি বইয়ের পিডিএফ কপি ডাউনলোড করে সেগুলো হুবহু সরকারি বইয়ের আদলে প্রেসে ছাপিয়ে শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের কাছে বিক্রি করছে উচ্চমূল্যে। এমন পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে তারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ জানুয়ারি নীলক্ষেত বই মার্কেটের কয়েকটি লাইব্রেরিতে অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক বিনামূল্যের সরকারি পাঠ্যবই জব্দ করে গোয়েন্দারা। সর্বশেষ গত বুধবার পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে বাংলাবাজার ইস্পাহানি গলির বিভিন্ন গুদামে অভিযান চালিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ছাপা দুই ট্রাকভর্তি প্রায় ১০ হাজার সরকারি বই জব্দ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। বিনামূল্যে বিতরণের বই খোলাবাজারে বিক্রি ও মজুদের অভিযোগে সিরাজুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও দেলোয়ার হোসেন নামে চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

একই রাতে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে বিনামূল্যে বিতরণের সরকারি বই পাচারের সময় শেরপুর সদরের চরমোচারিয়া ইউনিয়নের ধাতিয়াপাড়া এলাকা থেকে অন্য একটি চক্রের সদস্য মাইদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার

করে পুলিশ। জব্দ করা হয় ট্রাকভর্তি ৯ হাজার নতুন বই। একই রাতে পৃথক অভিযানে ৩ ট্রাক থেকে জব্দ করা ১৯ হাজার বই সরকারিভাবে ছাপানো নাকি এনসিটিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া বইয়ের পিডিএফ কপি ডাউনলোড করে প্রেসে ছাপানো নকল বই, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকার বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করে আসছে। কিন্তু সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা নস্যাৎ করতে কিছু অসাধু চক্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের বই অবৈধ মজুদদারির মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রি করে আসছিল। গোপন এ তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার বিকালে বাংলাবাজারের ইস্পাহানি গলিতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ওই গলির বিভিন্ন গুদাম থেকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের প্রায় ১০ হাজার বিনামূল্যের পাঠ্যবই জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তার সিরাজুল ইসলাম ও দেলোয়ার হোসেন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, অবৈধ মজুদদাররা বছরের শুরুতে নতুন পাঠ্যপুস্তক বিতরণে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করতে এবং অবৈধ উপায়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশে এসব বই মজুদ করে বিক্রি করে আসছিলেন। সিরাজুল ইসলাম ১০ বছর আগে একই অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এবার তার গোডাউন থেকেই বইগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি ১০-১২ টাকা করে বইগুলো কিনে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি করে আসছিলেন।

যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, ১১৬টি প্রেসে সরকারি বই ছাপানো হয়। ঢাকার বাংলাবাজার এবং ঢাকার বাইরেও কয়েকটি প্রেসে ছাপানো হয়, যারা সরকারি কার্যাদেশ পেয়ে থাকে। অতিরিক্ত বই ছাপানোর সুযোগ আছে কি না তদন্তের পর তা জানা যাবে। অনুসন্ধানে অতিরিক্ত বই ছাপানোর তথ্য পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই চক্রে এনসিটিবি অথবা মাউশির কেউ জড়িত রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, এনসিটিবির দুটি গোডাউন রয়েছে তেজগাঁও ও টঙ্গীতে। সেখানেই বইগুলো সংরক্ষণ করা হয়। এর বাইরে কোথাও সংরক্ষণের সুযোগ নেই। ভেতরের কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিতরণ ও পরিবহনের অনিয়মে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, এমন আরও কিছু নাম আমরা পেয়েছি। এ ছাড়া আরও কিছু জায়গায় বিনামূল্যের এসব বই বিক্রির তথ্য পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও নিয়মিত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তথ্য পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী জব্দ করা বইগুলো এনসিটিবিকে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।

শেরপুর সদর থানার ওসি মো. জুবায়দুল আলম জানায়, গত বুধবার রাতে শেরপুর সদর উপজেলার চরমোচারিয়ার ধাতিয়া পাড়া থেকে বিক্রির জন্য নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের বিনামূল্য বিতরণের এক ট্রাক পাঠ্যবইসহ মাইদুল ইসলাম নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে সদর থানা পুলিশ। এতে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে, জানান তিনি।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, জব্দ ট্রাকটিতে ২০২৫ সালের অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিভাগের মোট ৯ হাজার পাঠ্যবই ছিল এবং বইগুলো কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার ‘রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়’ থেকে বিক্রির উদ্দেশে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছিল।

বইগুলো বহনকারী ট্রাকের চালক সজল বলেন, কুড়িগ্রাম রৌমারী উপজেলার বাজার এলাকার সংঘবদ্ধ পাঠ্যবই পাচারকারী দলের সদস্যরা আমার ট্রাকটি ঢাকায় বই নিয়ে যাওয়ার জন্য ভাড়া করে। তারা চালানপত্র না দেওয়ায় আমার সন্দেহ হয়। এরপর বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানালে তারা অভিযান চালায়।

জানা গেছে, বেশি মুনাফা পেতে সিন্ডিকেট করে প্রথম থেকে দশম শ্রেণির বিনামূল্যের সব পাঠ্যবই বিক্রয় চক্রে এক শ্রেণির অসাধু ছাপাখানার মালিক জড়িত। কালোবাজারিতে পাঠ্যবই বিক্রিতে জড়িত কিছু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও। তারা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি দেখিয়ে বরাদ্দের বেশি বই গ্রহণ করেছেন। এরপর বাড়তি বইগুলো অধিক মূল্যে বিক্রি করছেন। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকও এ সিন্ডিকেটে জড়িত। দেশের অনেক জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বেশি বইয়ের চাহিদা চেয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকেও বই যাচ্ছে কালোবাজারে। এ ছাড়া অনেক স্কুলও বেশি বইয়ের চাহিদা দিয়ে বাজারে বই বিক্রি করে দিচ্ছে। কিছু মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানও অধিক মুনাফার লোভে পাঠ্যবই বিক্রি করছে। সারাদেশ থেকে আসা সরকারি বই নীলক্ষেত ও বাংলাবাজারে বিভিন্ন বইয়ের দোকানে বিক্রি হয়। বাংলাবাজার, সূত্রাপুর, আরামবাগ ও নয়াপল্টনের কিছু মুদ্রণ, ছাপা ও বাঁধাই প্রতিষ্ঠান থেকেও বই যাচ্ছে কালোবাজারে। প্রাথমিকের প্রতি শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পাঠ্যবইয়ের প্যাকেজ কেনা যায় দেড় হাজার টাকায়। আর মাধ্যমিকের প্রতি শ্রেণির পাঠ্যবই প্যাকেজ মিলছে সাড়ে ৪ হাজার টাকায়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে প্রতিটি পাঠ্যবই ছাপাতে খরচ হয় ৩০ থেকে ৫০ টাকা। সেগুলো বিক্রি করা হয় ১৫০ থেকে ৩০০ টাকায়; আর দোকানে মেলে ২০০ থেকে ৫০০ টাকায়। সন্তানের লেখাপড়ায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে এই চিন্তা থেকে অভিভাবকরাই এসব বই দোকান থেকে কিনছেন চড়া দামে।

সূত্রঃআমাদের সময়

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি