করোনার কারণে গত দুই বছর অনেকেই পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে পারেননি। এবার করোনার সংক্রমণ তেমন না থাকায় ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বেড়েছে। ভোগান্তি এড়াতে ঈদের ছুটির আগেই ঢাকা ছাড়ছেন সাধারণ মানুষ। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফেরা মানুষজন ভিড় করছেন বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে। অনেকে আবার অগ্রিম টিকিটের জন্য এসেছেন কাউন্টারে। অগ্রিম টিকিট না পেয়ে অনেকে পড়ছেন ভোগান্তিতে। আবার যারা টিকিট পেয়েছেন কিনতে হচ্ছে চড়া দামে।
ক্রেতাদের অভিযোগ ঈদ এলেই ভাড়া বাড়িয়ে দেয় পরিবহন কোম্পানিগুলো।
সাকিব হোসেন। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ২৮শে এপ্রিল নওগাঁয় যাবেন সাকিব। টিকিট কাটতে এসেছিলেন কল্যাণপুর বাস কাউন্টারে। তিনি বলেন, অন্যান্য সময়ে টিকিটের মূল্য ৫৫০ করে রাখা হয়, এখন সেটা ৭০০ টাকা দিয়ে কাটতে হচ্ছে। অন্য সময় কাউন্টারে আসলেই টিকিট পাওয়া যায়। এখন তাদের কাছে টিকিট থাকলেও দিতে চায় না। আমি ২০ মিনিট ধরে টিকিট খুঁজছি। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়েও টিকিট পাইনি। ঈদ আসলেই এখানে একটা সিন্ডিকেট কাজ করে। সাকিবের মতো ঈদ করতে রংপুরে যাচ্ছেন কাশেম মিয়া। তিনি বলেন, আগে ৬০০ টাকা ভাড়া ছিল। এখন ৭০০ টাকা করে রাখা হচ্ছে। মানুষের ব্যয় তুলনামূলক বেড়ে গেছে। তার ওপরে ভাড়া বাড়ানো আমাদের জন্য অনেকটাই বোঝা।
অন্য সময়ের তুলনায় ঈদে টিকিটের মূল্য কেন বেশি রাখা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে বাস কাউন্টারের কর্মীরা জানান, ঈদের সময়ে রাজধানী থেকে যাত্রীবাহী বাস গেলেও আসার সময় ফাঁকা আসতে হয়। তাই বাধ্য হয়েই টিকিটের মূল্য বেশি রাখা হয়। কল্যাণপুরের শ্যামলী বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা উৎপল কুমার বিশ্বাস মানবজমিনকে বলেন, ঈদের সময়ে ওয়ান সাইড ব্যবসা। এপাশ থেকে ৩০-৩২ জন যাত্রী যাচ্ছেন, ওইপাশ থেকে খালি গাড়ি আসছে। অন্য সময়ে এদিক থেকে ৩০ জন গেলে ওইদিক থেকে ৩০ জন আসে। তখন ব্যবসা ঠিক থাকে। ঈদের সময়ে প্রতিটি পরিবহন সেক্টরই দুর্বল হয়ে যায়। বিআরটিএ কর্তৃক ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। মালিক সমিতি আবার বৈঠক করে এই ভাড়া ঠিক করেন।
এদিকে গত শনিবার রাজধানীর ৫টি স্টেশন থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হলেও চাহিদার তুলনায় মিলছে সামান্য। টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ। নির্ধারিত দিনের টিকিটের জন্য মানুষ লাইন দিচ্ছেন একদিন আগে থেকেই। তাতেও মিলছে না প্রত্যাশিত টিকিট। অনলাইনে ট্রেনের ৫০ শতাংশ টিকিট কাটার সুযোগ থাকলেও সার্ভার জটিলতায় তাও হচ্ছে না। তাই অনলাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও টিকিট পাচ্ছেন না অনেকে। ঈদ উদ্যাপনের আশায় টিকিট পেতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ভিড় করেছেন হাজারো মানুষ। অগ্রিম টিকিট বিক্রির তৃতীয় দিনেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। অনেক আগে থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন টিকিট প্রত্যাশীরা। লাইনে দাঁড়িয়েই করছেন সেহ্রি ও ইফতার। গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এমন চিত্র দেখা যায়। রাজধানীর মিরপুর থেকে এসেছেন সাগর বিশ্বাস। তিনি বলেন, রাত ১১টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছি। সেহ্রি এখানেই করেছি। রংপুরে যাওয়ার টিকিট কাটতে আসলাম। ঈদ আসলেই এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন বিমল। যাবেন বগুড়া। তিনি বলেন, টিকিট পাবো কিনা বুঝছি না। ৫ ঘণ্টায় ৩০ কদম আগাইছি। দিনাজপুর যাওয়ার জন্য মোহাম্মদপুর থেকে টিকিট কাটতে আসেন রিপন। তিনি বলেন, গত দু’দিন ধরে এসেও টিকিট পাইনি। আজ ভোর ৫টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছি। কাউন্টার থেকে অনেক দেরি করে টিকিট দেয়া হচ্ছে। এখনো অনেকেই টিকিট পায়নি। উল্লেখ্য, ঈদুল ফিতরের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে গত শনিবার থেকে। রোববার দেয়া হয় ২৮শে এপ্রিলের টিকিট। গতকাল ২৯ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। ২৭ ও ২৮শে এপ্রিল যথাক্রমে দেয়া হবে ৩০শে এপ্রিল ও ১লা মে’র টিকিট।