1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
বাজার হারানোর ঝুঁকি | Bastob Chitro24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৭ পূর্বাহ্ন

বাজার হারানোর ঝুঁকি

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০২২

বিদ্যুতের লোডশেডিং : শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত প্রভাব পড়তে পারে রিজার্ভে

চলমান জ্বালানি সঙ্কট মোকাবিলায় সরকার এক গুচ্ছ সাশ্রয়ী নীতি নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিদ্যুতের চাহিদা আয়ত্তে রাখতে অঞ্চলভেদে দৈনিক এক ঘণ্টা লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। তবে কোথাও কোথাও লোডশেডিং ছয় থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শিল্পকারখানার মালিকরা। রফতানি ছাড়াও অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের জোগান দেয় এমন ছোট-বড় ও মাঝারি শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকের মতো রফতানিমুখী শিল্পে উৎপাদন হ্রাসে চাপ বাড়ছে অর্থনীতিতে, বিশেষত রিজার্ভে যার প্রভাব পড়তে পারে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাজার হারানোর শঙ্কা শিল্প মালিকদের।

উদ্যোক্তারা বলছেন, গত কয়েকদিনে অনেক এলাকায় লোডশেডিংয়ের শিডিউল মানা হয়নি। ঘোষিত সময়ের আগে-পরে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করেছে। নিজস্ব জেনারেটর না থাকায় ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) মানের বেশিরভাগ কারখানায় পূর্ণ কর্মঘণ্টা উৎপাদন হয়নি। অন্যদিকে মাঝারি ও বড় কারখানাগুলো ডিজেল পুড়িয়ে জেনারেটরের মাধ্যমে উৎপাদন ঠিক রাখার চেষ্টা করছে। এতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দৈনিক তিন ঘণ্টারও বেশি সময় লোডশেডিংয়ের সমস্যায় পড়েছেন বলে জানিয়েছেন বিকেএমইএর সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান। এতে ব্যবসায়ের কমিটমেন্ট ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে যাবে বলে মত তার। আর এমনটা হলে বায়ারদের আস্থা হারাতে হবে বলে মনে করেন এই শিল্পোদ্যোক্তা। তিনি বলেন, ব্যবসায়ের মূল বিষয়টাই কমিটমেন্ট। আমরা যদি বায়ারদের সঙ্গে দেয়া কমিটমেন্ট ধরে রাখতে না পারি তাহলেতো তারা আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেই। কমিটমেন্ট রাখতে না পারলে তারা (বায়ার) আমাদের প্রতি কোন আস্থা রাখবে না। এখন পর্যন্ত আমরা রাখার চেষ্টা করছি। ইলেক্ট্রিসিটি ঠিকভাবে না পেলেও আমরা কষ্ট করে ম্যানেজ করে নিচ্ছি। কিন্তু আসলে কতদিন আমরা এভাবে চালাতে পারবো, সেটাও অনিশ্চিত।

ফজলে শামীম এহসান বলেন, চীন এবং ভিয়েতনাম তাদের কমিটমেন্ট রাখতে না পারায় সেখানকার বায়ারার আমাদের এখানে চলে এসেছে। কিন্তু এখনতো ভিয়েতনামে অবস্থা ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু বায়াররা কিন্তু ফেরত যাচ্ছে না। কোন কারণ না হলে কিন্তু সে ফেরত যায় না। ফলে একবার যদি আমাদের এখান থেকে ফেরত যায় সেক্ষেত্রে আবার কোন একটা কারণ না ঘটলে কিন্তু সে আবার ফেরত আসবে না।

ফতুল্লা অ্যাপারেলসের এই কর্ণধার বলেন, সরকারকে জানালে তারা বলছে, আমরা শিল্প প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। কিন্তু কতটুকু অগ্রাধিকার যে দিচ্ছে, কি করছে-এটা বোঝারতো কোন উপায় আমি দেখছি না। তারা বলছে দিচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে আমি গ্যাসের প্রেসার পাচ্ছি না। ইলেক্ট্রিসিটি ঠিকমতো পাচ্ছি না। মূলকথা রেজাল্টটা পাচ্ছি না। সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা আমি আমার ডায়িং ফুল প্রেসারে চালাতে পারছি, বাকি ১২ ঘণ্টা চলে চলে না।

অন্যদিকে জ্বালানির সমস্যাকে বৈশ্বিক উল্লেখ করে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের। তিনি বলেন, আসলে সারাবিশ্বই এখন জ্বালনি সঙ্কটে আছে। সমস্যাটা বৈশ্বিক। আমরাও এর বাইরে না। সবারই একটা সহযোগিতা দরকার। যদি এলএনজি না পাওয়া যায় সরকার কোথা থেকে কিনবে? ডিজেল পাওয়া যায়, আমরা ডিজেল এনেছি। ডিজেলের সমাধান হয়তো কয়েকদিনের মধ্যে হয়ে যাবে, বিদ্যুৎ আমরা পাবো। আর গ্যাসের যে সমস্যা, এটা সারা বিশ্বব্যাপী হচ্ছে। সুতরাং আমাদের এক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়া উচিত।
একই মত প্রকাশ করে বিটিএমএ’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, সঙ্কট আছে, সঙ্কট থাকবে। তবে এই সঙ্কটের মধ্যেই যে সরবরাহ আছে তাতে যেন শিল্প খাতকে প্রাধান্য দেয়া হয়।

বিটিএমএ সূত্র জানায়, বস্ত্রকলে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টের কারণে বিদ্যুতের চেয়ে গ্যাসের অভাব বড় সমস্যা। দিনের বেলায় গ্যাসের চাপ থাকছে না। যেখানে ১৫ পিএসআই (পাউন্ড পার স্কয়ার ইঞ্চি) থাকার কথা, সেখানে পাওয়া যাচ্ছে এক-দুই পিএসআই। ডায়িং ও প্রিন্টিংয়ের মান খারাপ হচ্ছে। রাতে গ্যাসের চাপ বাড়লে কাজ করার চেষ্টা করছে অনেকে।

বাণিজ্য বিশ্নেষকরা বলছেন, করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন দেশ রেকর্ডকালের মূল্যস্ফীতির মুখোমুখি হয়েছে। বৈশ্বিক মন্দার কারণে রফতানি বাজারে চাহিদাও পড়তি। ওইসব দেশের ভোক্তাদের খাদ্যের পেছনেই আয়ের বড় অংশ ব্যয় করতে হচ্ছে। ফলে পোশাকের মতো পণ্যের চাহিদা কমে আসা স্বাভাবিক। এর মধ্যে উৎপাদন ব্যাহত হলে পোশাক খাতকে বড় বিপদে পড়তে হবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কট দীর্ঘায়িত হলে রফতানি খাত চাপে পড়বে। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। সময়মতো পণ্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে না পারলে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা হারাবে। ইতোমধ্যে রফতানি আদেশ কমতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি থেকে সহসা বের হওয়া সম্ভব হয়তো হবে না।

বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল বারেক খান জানান, তাদের সব পাটকলে নিজস্ব জেনারেটর নেই। বিদ্যুৎ গেলে শ্রমিকরা বসে থাকছেন। এই সঙ্কটে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।

এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরি বাবু বলেন, বিদ্যুতের যে লোডশেডিংটা চলছে, এখানে যদি আমাদের রফতানি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন অব্যাহত রাখতে না পারে তাহলে তারা বায়ার হারাবে। সবচেয়ে এলার্মিং বিষয়টা হচ্ছে, আমরা যদি রফতানি করতে না পারি তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জণ করতে পারবো না। এখন বিশ্বের সবদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জণ করা ও বাড়ানো। সেজন্য সরকারকে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো চালু রাখতে হবে। তানা হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাবে এবং দেশের অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়ে পড়বে। এ থেকে উত্তোরণের একটাই উপায় হলো রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে এবং এজন্য এনবিআরকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়াও নতুন নতুন আয়করদাতা শনাক্ত করতে হবে।

শিল্প প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের অভিঘাতে টান পড়েছে সেচ ব্যবস্থাপনায়। ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। সামনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে সার সংকটের। প্রান্তিকে জেনারেটর নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় খামারেই মারা পড়ছে মুরগি। লোডশেডিং দীর্ঘায়িত হলে চলতি মৌসুমে সারাদেশেই আমন ক্ষেত হুমকির মুখে পড়ে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহতের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কৃষিকে লোডশেডিংয়ের আওতামুক্ত রাখতে হবে। ডিজেল ও বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রে খরচ বেশি হওয়ায় কৃষক ও মালিক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই ডিজেল ও বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র অপসারণ করে তা দ্রæত পরিবেশবান্ধব সৌরশক্তিচালিত সেচযন্ত্রে রূপান্তর প্রয়োজন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি