বজ্রপাতে দুই দিনে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সিলেট ও চট্টগ্রামে এই দুর্ঘটনা ঘটে। মাঠে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে বাবা-ছেলের, লবণ তুলতে গিয়ে হঠাৎ বজ্রপাতের কবলে পড়েন দুই লবণ শ্রমিক সাবাব উদ্দিন ও সাহাব উদ্দিন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
আবহাওয়াবিদদের মতে, দেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় মার্চ থেকে জুন মাসে। তবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। আর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত। আর সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়, যারা ঘরের বাইরে থাকেন। এক্ষেত্রে কৃষক বা শ্রমিক শ্রেণির মানুষের মৃত্যু বেশি হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সভাপতি ড. কবিরুল বাশার মানবজমিনকে বলেন, গত বছর আমরা বজ্রপাতের উপরে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছি। ওই পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ৩ মাসে শুধু কৃষিকাজ করতে গিয়েই বজ্রপাতে ১২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। অথচ পুরো ২০১০ সালে বজ্রপাতে ১২৩ জনের মৃত্যু হয়। তিনি আরও বলেন, মাঠে কাজ করার সময় কাছাকাছি কোনো নিরাপদ স্থাপনা না থাকায় বজ্রপাতের সময় কৃষক অরক্ষিত হয়ে যান। হাওর অঞ্চলের কৃষক আরও বেশি অসহায়।
সূত্র জানায়, সিলেট বিভাগে কাল বৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতে মা-ছেলে-মেয়ে, বাবা-ছেলেসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা থেকে সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে পৃথক ঘটনায় এই ৮ জনের মৃত্যু হয়। ভোরে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে ঝড়ে তিন জনের মৃত্যু হয়। সকালে জেলার শাল্লা উপজেলায় মাঠে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা জানান, সকাল ৯টার দিকে শাল্লা সদর উপজেলার নিজ বাড়ির পাশে হাওরে ধান কাটতে বের হন বাবা ও ছেলে। হঠাৎ প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতে বাবা ও ছেলের মৃত্যু হয়। শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া, সকাল ১০টার পর হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায় পৃথক স্থানে বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়াদের মধ্যে রয়েছেন- বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া ইউনিয়নের এড়ালিয়া গ্রামের সামছুল মিয়ার ছেলে কৃষক আলমগীর মিয়া (২৬), দক্ষিণ-পূর্ব ইউনিয়নের জাতুকর্ণপাড়া বড়বান্দের আব্দুর রহমানের মেয়ে ঝুমা বেগম (১৩)। ও একই ইউনিয়নের তাঁতারী মহল্লার আক্কেল আলীর ছেলে হোসাইন (১২)।
এদিকে, শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় বজ্রপাতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আরও এক নারী। মৃতরা হলেন- কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইলপাড়ার সাবাব উদ্দিন (৬০) ও বালু পরিবহন শ্রমিক সাহাব উদ্দিন (৪৫)। আহত হয়েছেন একই এলাকার সুশিলা নামে এক নারী। কুতুবদিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর হায়দার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, দুপুরে আলী আকবর ডেইলপাড়ার তাবেলারচরে লবণ তুলতে গিয়ে হঠাৎ বজ্রপাতের কবলে পড়েন সাবাব উদ্দিন ও সাহাব উদ্দিন। তারা অজ্ঞান হয়ে পড়েন। সেখান থেকে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম উভয়কে মৃত ঘোষণা করেন।
গত ২৩শে মার্চ এক সেমিনারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনতে কাজ করছে সরকার। এ লক্ষ্যে ‘লাইটার অ্যারেস্টার’ সংবলিত বজ্রপাত-নিরোধক কংক্রিটের ছাউনি (শেল্টার) নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের হাওরাঞ্চলসহ বজ্রপাতপ্রবণ ২৩ জেলায় এসব ছাউনি নির্মাণে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা কমে আসবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বজ্রপাত ঠেকানো সম্ভব নয়। তবে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে আমরা ৩টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এর একটি হলো আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম। অর্থাৎ বজ্রপাতের ৪০ মিনিট আগেই সংকেত দেবে সেই যন্ত্র, দ্বিতীয়ত, বজ্রপাত-নিরোধক কংক্রিটের শেল্টার নির্মাণ এবং তৃতীয়ত, জনসচেতনতা বাড়ানো।’