শতকরা প্রায় একশ শিক্ষিতের দেশ শ্রীলঙ্কা অগ্নিগর্ভ। ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জোগাড়ে দিশেহারা মানুষ। খাদ্যপণ্য, ওষুধ ও জ্বালানির অভাব দেশজুড়ে। অর্থনৈতিক এই বিপর্যয়ের প্রতিবাদে ফুঁসছে জনগণ, জ্বলছে আগুন। বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেও রক্ষা হচ্ছে না মাহিন্দা রাজাপাকসে। জনরোষ থেকে বাঁচতে রাজধানী থেকে পালিয়ে গিয়ে ত্রিনকোমালি শহরে নৌবাহিনীর নৌঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। সে ঘাঁটিও ঘিরে ফেলেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। সেখান থেকে পালাবার পথ পাচ্ছেন না। এমপিদের বিদেশ পালানো ঠেকাতে বিমানবন্দর পাহাড়া দিচ্ছে জনতা। সেনাবাহিনী ও পুলিশকে জরুরী ক্ষমতা দেয়া হয়েছে বিক্ষোভকারীদের ‘দেখা মাত্র গুলি’ করার। কিছুতেই বিক্ষুব্ধ জনতাকে ঠেকানো যাচ্ছে না। বিরোধী দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ বসার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে; চলছে বিক্ষোভ-সহিংসতা। কারফিউ দিয়ে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে দেশটির পুলিশ ও সেনাবাহিনী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটা কর্তৃত্ববাদী শাসনের চরম পরিণতি। মাহিন্দা রাজাপাকসে পরিবারের শাসন শ্রীলংকায় নিরঙ্কুশ করতে ২০০৯ সালে জাফনা থেকে স্বাধীনতাকামী লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম (এলটিটিই) নিশ্চিহ্ন এবং ভেলু পিল্লাই প্রভাকরণকে হত্যায় যে ভারত সহায়তা করেছিল; সেই ভারত এখন মহাবিপদে পাশে দাঁড়ায়নি।
এক সময়ে বিপুল পরিমান বৈদেশিক রিজার্ভের দেশটিতে বৈদেশিক রিজার্ভ নেই, ডিজেল, বিদ্যুৎ আমদানির জন্য সরকারের কাছে অর্থ নেই। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের কারণে জনগণকে দিনের অর্ধেকের বেশি সময় থাকতে হচ্ছে অন্ধকারে। রাস্তায় চলছে না বাস, গাড়ি। এখন পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রীর ভাই প্রেডিডেন্ট গোটাবায়ার পদত্যাগ দাবি করছেন বিক্ষুব্ধ মানুষ। মাহিন্দা রাজাপাকসেকে পরিবারসহ দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ার পর্যন্ত ত্রিনকোমালি শহরে নৌবাহিনীর ঘাঁটিতেই থাকতে হবে। পারিবারিক কর্তৃত্ববাদী শাসকের অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে যে সেনা নিরাপত্তার ত্রিনকোমালি ত্যাগ করার চেস্টা করলে বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে প্রাণ হারাতে হতে পারে। পদত্যাগপত্র দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রিজের সামনে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়েছিল মাহিন্দার সমর্থকরা। তাদের হামলায় বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হন। এ ঘটনা উত্তেজিত জনতাকে আরওক্ষুব্ধ করে তোলে। সোমবার সন্ধ্যার পর শ্রীলঙ্কার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কুরুনেঙ্গালায় মাহিন্দা রাজাপাকসের ব্যক্তিগত বাসভবন আগুনে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। কাছাকাছি সময় হামলা হয় বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির বাসভবনে। সেসব বাসভবনও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মধ্যরাতের দিকে টেম্পল ট্রিজের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন হাজারো বিক্ষোভকারী। এ সময় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভবনের দ্বিতীয় তলায় আশ্রয় নেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। এ সময় সামরিক বাহিনীর সদস্যরা রাজাপাকসে ও তার পরিবারের সদস্যদের টেম্পল ট্রিজ ত্যাগের ব্যবস্থা করেন। হেলিকপ্টারে করে সপরিবারে কলম্বো ছাড়েন।
শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে রাজাপাকসে পরিবার অত্যন্ত প্রভাবশালী। গত ২০ বছর ধরে দেশটির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন এই পরিবারের সদস্যরা। এই পরিবারের সদস্য ৭৬ বছর বয়সী মাহিন্দা রাজাপাকসে ২০০৪ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তারপর ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, ২০১৯ সালে ফের প্রধানমন্ত্রী হন। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে তার আপন ছোট ভাই। গত ৫ মার্চ শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের পদত্যাগের আগ পর্যন্ত রাজাপাকসে পরিবারের আরো ৩ জন সদস্য সরকারে ছিলেন। এরা হলেন বাসিল রাজাপাকসে (অর্থমন্ত্রী), চামাল রাজাপাকসে (সচমন্ত্রী) ও মাহিন্দার ছেলে নামাল রাজাপাকসে (যুব ও ক্রিড়ামন্ত্রী)। দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই জানায়, ইতোমধ্যে দেশটির বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী ও এমপি গোপনে দেশত্যাগ করেছেন।
এক সময়ের অনুসরণ করা দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কটে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জোগাড়ে দিশেহারা মানুষ। খাদ্যপণ্য, ওষুধ ও জ্বালানির অভাব দেশজুড়ে। অর্থনৈতিক এই বিপর্যয়ের কারণে বিক্ষোভে ফুঁসছে জনগণ। বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষ। তারপরও বিক্ষোভ-সহিংসতা থামেনি। কারফিউ দিয়ে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে দেশটির পুলিশ ও সেনাবাহিনী।
শ্রীলঙ্কার এ অবস্থার জন্য দায়ী মূলত কর্তৃত্ববাদ ও পরিবারতান্ত্রীক শাসন। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দেশটির প্রতিবাদী মানুষের বড় এক বিজয়। কিন্তু পাশাপাশি সেখানে কারফিউ জারি হয়েছে। কারফিউর অন্তত একটা মানে প্রধানমন্ত্রীর বিদায়ে সেখানে মানুষ যথেষ্ট সন্তুষ্ট নয়। মানুষের চাওয়া আরও বড় কিছু, আরও বেশি কিছু। ক্ষমতা থেকে রাজাপক্ষের বংশের যে কারও বিদায় শ্রীলঙ্কায় বহুজনের জন্য আনন্দদায়ক অগ্রগতি। কিন্তু মাহিন্দা রাজাপক্ষে বাড়ি ফিরে গেলেও সঙ্কটের সামান্যই জট খুলবে। দেশটির বর্তমান সঙ্কটের বড় এক উৎস নির্বাহী প্রধান ‘প্রেসিডেন্ট’। তার হাতে যাবতীয় ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন ঘটে আছে সাংবিধানিকভাবে। এর সংস্কার বিষয়ে এখনো কোনো জাতীয় ঐকমত্য হয়নি। প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করতে আগ্রহী নন-যদিও তিনি কৌশলগতভাবে নমনীয় অবস্থান নিয়ে আছেন। তার পেছনে সামরিক আমলাতন্ত্রের মদদ আছে। সামরিক বাহিনীতে তার ব্যক্তিগত প্রভাবও আছে।
মাহিন্দা রাজাপক্ষের পদত্যাগের পর বিরোধী দলকে সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। তবে তারা প্রেসিডেন্ট নিজেও পদত্যাগ না করলে সরকার গঠনে রাজি নয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, করোনা মহামারির সময় নির্বাহী ক্ষমতার মাধ্যমে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট। আর এসবের মাধ্যমে দেশটির বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছেন গোটাবায়া। দেশটিতে বৈদেশিক রিজার্ভ নেই, ডিজেল, বিদ্যুৎ আমদানির জন্য সরকারের কাছে অর্থ নেই। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সঙ্কটের কারণে জনগণকে দিনের অর্ধেকের বেশি সময় থাকতে হচ্ছে অন্ধকারে। রাস্তায় চলছে না বাস, গাড়ি।
মহামারি করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দেশটির অর্থনৈতিক সঙ্কটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তবে এই সঙ্কট এক দিনে তৈরি হয়নি। এর পেছনে রয়েছে একাধিক ভুল সিদ্ধান্ত। উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বিপর্যস্ত অর্থনীতি কাঁধে নিয়ে ২০১৯ সালে দায়িত্ব নেন প্রেডিডেন্ট গোটাবায়া। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর দ্রুতই কাজে নেমে পড়েন তিনি। কিন্তু সন্ত্রাসী হামলা ও রাজনৈতিক সঙ্কট দেশটিকে মারাত্মক বির্পযয়ে ফেলে। রাজধানী কলম্বোতে গির্জা ও হোটেলে ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলায় ২৯০ জন নিহত হন। পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বৈদেশিক মুদ্রার মূল উৎসে ভাটা পড়ায় গোটাবায়া অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে দেয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি।
এছাড়া, করোনা মহামারির সময় তার সরকার বিভিন্ন খাতে কর ছাড় দেয়ার পাশাপাশি বাজারে নগদ অর্থ ছাড়তে শুরু করে। এতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়। কমে যায় কর আদায়। বেড়ে যায় বাজেট ঘাটতি। নজিরবিহীন এই আর্থিক সঙ্কটের পেছনে বৈদেশিক ঋণ নেয়াকেও দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে চীনের কাছ থেকে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি ঋণ নিয়ে অবকাঠামো খাতে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকে বিপর্যয়ের মুল কারণ বলা হচ্ছে। এই প্রকল্প থেকে আয় হয়েছে সামান্য। বিপরীতে এই ঋণ গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া, শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি কর কমানের সিদ্ধান্ত এই সঙ্কটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সিংহলি বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা রাজাপক্ষদের শাসনে ত্যক্তবিরক্ত হলেও তাদের একাংশ এটাও চাইছে-অন্তত একজন রাজাপক্ষ ক্ষমতায় থাকুক। এর মধ্যেই হাম্বানটোটায় রাজপক্ষর রাজনৈতিক বংশের গোড়াপত্তনকারী মাহিন্দা ও গোটাবায়ার পিতা ডন এলোইন রাজাপক্ষর স্মৃতিসৌধ জনতা উপড়ে ফেলেছেন, যা সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সিংহলি রাজনীতিবিদদের মধ্যে যারা প্রেসিডেন্ট পদের ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ চাইছেন, তাদের মধ্যে আছেন সাজিথ প্রেমাদাসা। তিনি আরেক পলিটিক্যাল ডাইনেস্টির লোক। রানাসিংহে প্রেমাদাসার ছেলে। সাজিথ সংস্কারপন্থী। তার প্রতি তামিলদের সমর্থন আছে। কিন্তু বিরোধীদলীয় অপর নেতা রনিল বিক্রমাসিংহের সংস্কার প্রস্তাবে প্রবল সমর্থন দেখা যাচ্ছে না। জনতা বিমুক্তি পেরামুনাসহ অন্য বিরোধী দলগুলোও জনতাকে সঙ্গে নিয়ে গণ-অভ্যুত্থান ঘটাতে ব্যর্থ।
এর মধ্যে জনবিক্ষোভ, রাজনৈতিক সহিংসতা, প্রধানমন্ত্রীর বিদায় এবং কারফিউ বড় খবর হলেও দেশটিতে গ্যাস ফুরিয়ে আসছে। খাদ্যপণ্য ও ওষুধের সঙ্কট তো আছেই। আইএমএফ ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও অর্থনৈতিক সংস্কারও চাইছে। যে নির্মম অর্থনৈতিক সংস্কার এগিয়ে নেয়া কেবল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষেই সম্ভব। আইএমএফ পরোক্ষে সেটাই গড়তে বলছে রাজনীতিবিদদের। সেটার বাস্তবায়ন স্বভাবত কঠিন। যদিও তার বিকল্প হয়ে উঠতে পারে সামরিক বাহিনীর সরকার। তাতে অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান নয়, কেবল ধামাচাপাই ঘটতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমগুলো কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত দেশটির অর্থনৈতিক দুর্দশার কথা বলছে। কেউই এর পেছনের সামাজিক কারণটির কথা বলছে না। শ্রীলঙ্কা কেবল তীব্র ডলার সঙ্কটে ভুগছে না, সামাজিক পুঁজির সঙ্কটেও ভুগছে। যে সঙ্কটের শুরু রাজাপক্ষদের হাত ধরেই, তবে আজ থেকে বহু আগে, শতাব্দীর প্রথম দশকে। আজকে দেশটির বুদ্ধিজীবীরা সঙ্কটের সমাধান হিসেবে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের যে কথা বলছেন, ২০ বছর আগে তামিলরা সে কথা বলেই মার খায়। ২০০৯ সালে তামিল সশস্ত্রতা নির্মূলের মাধ্যমে সিংহলিরা যে বিজয় উৎসব করেছে, প্রকৃত প্রস্তাবে সেখান থেকে দেশটির আজকের সঙ্কটের শুরু। আজকের মাহিন্দা সে সময় প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং গোটাবায়া ছিলেন প্রতিরক্ষাসচিব। তখন থেকে রাজাপক্ষদের সিংহলিরা ‘টারমিনেটর’ বলতে ভালোবাসে। সেই ভালোবাসার করুণ প্রতিদানে তারা মানসিকভাবে বেশ বিধ্বস্ত এখন। এটা তামিল রাজনৈতিক মনীষার কাছে সিংহলি উগ্রতার এক বড় পরাজয়ও বটে।
তামিলদের সংস্কারের আকাক্সক্ষা দমনের ভেতর দিয়ে শ্রীলঙ্কায় দুটি ঘটনা ঘটে। প্রথমত, উগ্র সিংহলি জাতীয়তাবাদের জন্ম হয়। দ্বিতীয়ত, সেই জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসেবে রাজাপক্ষ পরিবারের হাতে সিংহলিরা যাবতীয় ভবিষ্যৎ সঁপে দেয়। এর সুযোগ নিয়ে রাজাপক্ষরা দেশটির শাসনব্যবস্থাকে সংসদীয় ধরন থেকে একচেটিয়া ক্ষমতা সম্পন্ন প্রেসিডেনশিয়াল ধরনে রূপান্তর করে নেন। এভাবে দেশটিতে প্রশাসনিক পিছু হটা সম্পন্ন হয় পুরো ৩৬০ ডিগ্রি মাত্রায়। যেখানে আগের সংসদীয় ব্যবস্থার মধ্যে হিন্দু ও মুসলমান তামিলরা বাড়তি প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন চাইছিল, সেখানে রাজাপক্ষেরা ঘটান উল্টো। আবার একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী সবই আসতে থাকে একই পরিবার থেকে। এ সময়ের শাসন–সংস্কৃতির আরও দুটি বড় উপাদান ছিল কর্তৃত্ববাদের সঙ্গে মানবাধিকারের ইচ্ছামতো দলন এবং খেয়ালখুশিমতো অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়া।
এ রকম এক অবস্থারই দীর্ঘ ফসল আজকের লঙ্কা, যাকে ব্রিটিশরা বলত ‘ক্রাউন অব দ্য জুয়েল’। এই দেশকে আগেকার স্বাভাবিক অর্থনৈতিক পরিসরে নেয়ার প্রধান শর্ত সিংহলিদের মধ্যে এ রকম উপলব্ধি হওয়া যে জাতিগত উন্মাদনায় পড়ে গত দশকে তারা ভুল করেছে। এ রকম উপলব্ধি তৈরি আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। লঙ্কার নাগরিকদেরই এই জাতিগত ও ধর্মীয় বিভেদরেখা মুছতে হবে। কিন্তু কাজটি দুরূহ। সূত্র : বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স।