1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
নোংরা পানিতে ছড়াচ্ছে ডায়রিয়া | Bastob Chitro24
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন

নোংরা পানিতে ছড়াচ্ছে ডায়রিয়া

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০২২

পানি সংকটে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। এই সংকট চলছে কয়েক মাস ধরে। অসহনীয় গরম ও রমজানের মধ্যে অপ্রতুল পানির কারণে হাঁসফাঁস অবস্থা ওইসব এলাকার মানুষের। পানির অভাবে তারা গোসল, নামাজ, রোজা, ইফতারি ও সেহ্‌রি ঠিকমতো করতে পারছেন না। এ ছাড়া কোথাও কোথাও পানি পাওয়া গেলেও তা খাওয়া ও রান্নার অনুপযোগী। এতে বাধ্য হয়েই দূষিত পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে এসব মানুষদের। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ বাড়ছে।
রাজধানীর আগারগাঁও, বাড্ডা, ফকিরাপুল ও কাঁঠালবাগানসহ কয়েকটি এলাকায় এই সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা জানান, দিনের অধিকাংশ সময়েই পানি থাকে না।

মাঝেমধ্যে পানি আসলেও তা নোংরা দুর্গন্ধযুক্ত। একেবারেই খাবার অনুপযোগী। তাই অন্য এলাকা থেকে বিভিন্ন পাত্রে করে পানি আনতে হয়। তা দিয়েই খাওয়া আর রান্নার কাজ করেন। কেউ কেউ আবার ফিল্টার করা বোতলের পানি কিনেও আনেন। তবে গোসলের জন্য নোংরা আর দুর্গন্ধযুক্ত পানিই ব্যবহার করতে হয় তাদের।
ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, গ্রীষ্মের তাপদাহের সঙ্গে রাজধানীবাসীর পানির চাহিদা বাড়লেও ঢাকা ওয়াসার উৎপাদন কমেছে। এ সময় শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গার পানিতে বেড়েছে দূষণ। এসব পানি পরিশোধন করে খাবার উপযোগী করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। ফলে সায়েদাবাদ ও চাঁদনীঘাট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট থেকে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম পানি উৎপাদন করা হচ্ছে। একইভাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ও লোডশেডিং বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর নলকূপে পানির উৎপাদনও কমে গেছে। এ অবস্থায় চাহিদার আলোকে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না ঢাকা ওয়াসা। ফলে চৈত্রের তাপদাহের মধ্যে রোজা রেখে মানহীন পানি নিয়ে চরম বিপাকে রাজধানীবাসী। নিরুপায় হয়ে এসব পানি পান করে পানিবাহিত ডায়রিয়াসহ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন নগরবাসী।
রাজধানীর আগারগাঁও এলাকার শহীদ শাহাবুদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে বসবাসরত কয়েকশ’ পরিবার দীর্ঘ দেড় মাস ধরে তীব্র পানি সংকটে ভুগছে। এই স্থানের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, টানা দেড় মাস ধরে ওয়াসার লাইনের পানি পাচ্ছি না। আমরা চরম ভোগান্তিতে আছি। কষ্ট করে প্রতিদিন ভ্যানে করে মিরপুর টেকনিক্যাল থেকে পানি কিনে নিয়ে আসতে হচ্ছে। অনেকে ঠিকমতো গোসলও করতে পারছি না। শুনেছি পানির সাপ্লাই লাইনে সমস্যা হয়েছে। নতুন করে পাম্প বসাতে হবে। এজন্য আমাদেরকে আরও প্রায় দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে। রোজার মাস চলছে, সেই সঙ্গে তীব্র গরম, এমন অবস্থায় পানি না থাকা খুব কষ্টের। তিনি বলেন, আমাদের এই এলাকায় পানি আসে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের পাশের (স্পারসো) পাম্প থেকে। আমি যোগাযোগ করেছিলাম ওখানকার লাইনম্যানের সঙ্গে। তিনি বলছেন পানি উত্তোলনে সমস্যা হচ্ছে।
একই এলাকার বাসিন্দা রোকেয়া বেগম বলেন, টানা দুই মাস ধরে পানির সমস্যায় ভুগছি। বিশুদ্ধ পানির অভাবে গোসল, নামাজ, রোজা, ইফতারি ও সেহ্‌রি ঠিকমতো করতে পারছি না। প্রতিদিন পানি টেনে পারা যাচ্ছে না। ভ্যানে করে পানি আনতে গেলে অনেক খরচ পড়ে যায়। শুনেছি ওয়াসার লাইনে সমস্যা হয়েছে। কিন্তু লাইন ঠিক করতে এত সময় লাগছে কেন বুঝতে পারছি না। বাসা মালিকদের বলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে ফকিরাপুল এলাকার বাগিচা গলি, মসজিদের গলি, গরমপানির গলিসহ আশপাশের অনেক বাড়িতে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। ফকিরাপুলের বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, আমাদের এখানে ১০ দিন ধরে ওয়াসার লাইনের পানি পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক চেষ্টা করে দিনে কয়েক গাড়ি পানি পাচ্ছি। যার জন্য গাড়িপ্রতি আমাদের দিতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে। কিন্তু এতে চাহিদা মিটছে না। রমজানে অজু, গোসল ও খাবার পানি নিয়ে আমরা খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি। এটা বলে বোঝাতে পারবো না। বিষয়টি ফকিরাপুলস্থ ঢাকা ওয়াসা অফিসে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তাদের লোকজন এসে একটি লাইনে পলিথিন পেয়েছে। সেটা পরিষ্কার করার পর অল্প কিছু পানি আসছে। কিন্তু এখনো সম্পূর্ণভাবে চালু হয়নি।
রাজধানীর কাঁঠালবাগান এলাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে পানির সংকট চলছে। একটু পানির আশায় সারাদিন অপেক্ষায় থেকেও কাঙ্ক্ষিত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঝেমধ্যে যা একটু পানি আসে, সেই পানিও ব্যবহার অনুপযোগী।
বাড্ডার খিলবাড়ীর টেকের বাসিন্দারা গত তিন সপ্তাহ ধরে পানির সংকটে রয়েছেন। গভীর রাত পর্যন্ত তারা পানির জন্য অপেক্ষা করেও স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পানি পাচ্ছেন না। রাত-দুপুরে পাইপলাইনে কিছু পানি এলেও এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর আর পানি থাকে না। এ সময় সবাই তাদের চাহিদামতো পানি সংগ্রহ করতে পারছেন না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাড্ডা এলাকায় অবস্থিত ঢাকা ওয়াসা অফিসে এলাকাবাসী অভিযোগ জানালেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। পানির লাইনে পানি না পেলেও টাকা জমা দিয়ে পানির গাড়ি মিলছে।
মধ্য বাড্ডা পোস্ট অফিস গোলির প্রায় সব বাড়িতেই রয়েছে পানির সংকট। ৯৬৪ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, পানি এত গন্ধ খাওয়ার যোগ্য না। মুখেও দেয়ার মতো না। আমরা দূর থেকে পানি আইন্যা খাই। এই পানি দিয়াই রান্না করতে হয়। এলাকার সব বাসায় পানির সমস্যা। রোজা থাইকা অনেক কষ্ট হয় পানি টানাটানি করতে।  পারুল বেগম বলেন, সারাদিন পানি থাকে না। রাত ১২টার পর পানি আসে ভোর পাঁচটার সময় চলে যায়। কিন্তু এই পানি দিয়াও কোনো কাজ করা যায় না। অনেক গন্ধ আসে। সেলিনা বলেন, খাবার পানির সঙ্গে রান্না করার জন্যও আমাদের দূর থেকে পানি আনতে হয়। আমরা কিনেও খেতে পারি না।
এদিকে পানি দূষণের ফলে সারা দেশে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি মানবজমিনকে বলেন, পানির অপর নাম জীবন। নিরাপদ সুপেয় পানি যখন খাবার অনুপযোগী বা দূষিত হয়ে যায় তখন নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা হয়। বিশেষ করে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিস এবং খাদ্যের বিষক্রিয়া বেশি হয়। এখন পানি দূষণের ফলে সারা দেশে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। দেড় হাজারের মতো রোগী প্রতিদিন আইসিডিডিআরবিতে ভর্তি হচ্ছে। ঢাকার দূষিত পানির কারণে মানুষের জীবনকে বিপন্ন করা হচ্ছে। মানুষ অসুস্থ হওয়ার কারণে তাদের শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য লাখ লাখ টাকা জাতীয় অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। মানুষ ছাড়াও পানি দূষণের ফলে অন্য প্রাণীদেরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি