ঢাকা অফিস:
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রি থেকে একঝাঁক মনোয়ন প্রত্যাশী অভিনয় শিল্পী দেখা গেল। যে সংখ্যা গোটা ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসেই প্রথম। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিল্পীদের মধ্যে এমন নির্বাচনমুখী হওয়ার ইতিহাসও আবার খুব বেশি বছরের নয়। মোটামুটি নব্বই দশক থেকে এই প্রবণতার শুরু। এর আগে ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে এত বাঘা বাঘা হেভিওয়েট অভিনয় শিল্পী ছিলেন অথচ তাদের নির্বাচনমুখী হওয়া দূরের কথা রাজনীতি নিয়েও তারা কোনো দিন মাথা ঘামাতেন না। তবে যুগ পাল্টেছে। যুগের ধরনও পাল্টেছে। অভিনয় শিল্পীদেরও সব পাল্টে গেছে। তারাও এখন অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতি প্রিয় হয়ে উঠছেন।
অভিনয় শিল্পীদের রাজনীতিতে জড়ানোর ঘটনা উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ভারতে। যেখানে এমনটি রামা রাও, জয় ললিতা, অমিতাভ বচ্চন, মিঠুন চক্রবর্তীদের মতো বেশ কিছু হেভিওয়েট তারকাদের এমপি হতে দেখা গেছে।
যদিও এই নির্বাচনমুখী অভিনয় শিল্পীদের সবাই বাঘা বাঘা হেভিওয়েট জনপ্রিয় শিল্পী এমন নয় বরং মাঝারি মানের শিল্পীরাই বেশি মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। এ থেকেও আন্দাজ করা যায় শিল্পচর্চার বাইরে এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা বাড়তি আগ্রহ দেখাচ্ছেন সঙ্গীত ও অভিনয় শিল্পীরা। সেইসঙ্গে দেশের নামকরা ক্রীড়াবিদরাও আছেন। ক্রীড়াবিদদের মধ্যে অবশ্য মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসানের মতো হেভিওয়েটরাই মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন। হয়ত তারা প্রার্থিতা পেয়েও যেতে পারেন।
তবে মনোয়ন প্রত্যাশী অভিনয় শিল্পীদের মধ্যে কতজন মননোয়ন পান সেটাই এখন দেখার বিষয়। এখন যারা এই মনোনয়ন দৌড়ে আছেন তাদের মধ্যে যাকে সবচেয়ে প্রভাবশালী হিসেবে ধরা যায় তিনি অভিনেতা ডিপজল। তিনি ঢাকা-১৪ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম তুলেছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে এক সময়ের কুংফু-কারাতে গল্পের সিনেমার সুপারস্টার মাসুম পারভেজ রুবেল মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন বরিশাল-৩ আসন থেকে। তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন বলে জানা গেছে।
নির্বাচনমুখী হয়েছেন একসময়ের ব্যস্ততম চিত্রতারকা শাকিল খান। তিনি বাগেরহাট-৩ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। গত নির্বাচনেও তিনি এই একই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। সেবার মনোনয়ন না পেলেও এলাকায় তিনি নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন। এবার তিনি সেই স্বীকৃতির প্রত্যাশায় গেল ১৮ নভেম্বর একই আসন থেকে দলটির মনোনয়ন ফরম তুলেছেন।
‘ফেনী-৩’ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম তোলেন দুই প্রজন্মের দুই অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী ও শমী কায়সার। তারা দু’জনেই দলীয় হাইকমান্ডের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছেন।
অভিনয়শিল্পী, সংগঠক ও রাজনীতিবিদ রোকেয়া প্রাচী ২০ নভেম্বর সোমবার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে ওই দিনই জমা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপকমিটির সদস্য রোকেয়া প্রাচীর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী হওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল।
শমী কায়সার অবশ্য এবারই প্রথম এই আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন। তিনিও ২০ নভেম্বর সোমবার তার মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। একই আসনে যেহেতু অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীও মনোনয়ন চেয়েছেন কাজেই সেক্ষেত্রে তার এই মনোনয়ন নিয়ে তিনি কতটা আশাবাদী এমন প্রশ্নে শমী কায়সার বলেন, ‘দেখা যাক, আমি তো আমার এলাকার স্বার্থে কাজ করছি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরেই এখানকার সামাজিক ও শিল্প-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছি আমি। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখছি। পারিবারিকভাবেও এই এলাকাটি আমার জন্য ভালোবাসা ও প্রত্যাশার জায়গা। আমি আশা করছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে নিরাশ করবেন না।’
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দুই আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ছোট পর্দার অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান, যিনি পরিচিত সিদ্দিক নামে। ২০ নভেম্বর সোমবার দুপুরে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ঢাকা-১৭ এবং টাঙ্গাইল-১ আসনের ফরম সংগ্রহ করেছেন সিদ্দিক। তিনি এর আগে ঢাকা-১৭ আসনে প্রয়াত অভিনেতা ফারুকের শূন্য আসনের জন্যও প্রার্থী হতে চেয়ে ব্যর্থ হন। এই আসনে তখন প্রার্থিতা পান এবং নির্বাচিত হন মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
পরে ওই আসনে ভোটের টিকিট না পেয়ে ফের ফেসবুক লাইভে এসে ‘মন ভালো করতে’ দুবাই বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে আলোচনায় আসেন অভিনেতা। সেবারে সিদ্দিক বলেছিলেন, তিনি আশা ছাড়ছেন না, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে প্রার্থী হতে ফের তিনি মনোনয়ন সংগ্রহ করবেন।
সিদ্দিকের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা আরেকটি আসন টাঙ্গাইল-১ জেলার মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত। ওই আসনের বর্তমান সংসদ আওয়ামী লীগের আব্দুর রাজ্জাক।
এই একই আসন থেকে চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদও সেই উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও প্রার্থী হতে চেয়ে বলেছিলেন, ‘আমি শুধু পর্দারই নয়, মাঠেরও নায়ক হতে চাই।’ সেই সুবাদে এবারও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ফেরদৌস আহমেদের আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার কথা শোনা গিয়েছিল। তবে শেষপর্যন্ত তিনি এই আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেননি বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে ‘ভালোবাসার রং’ সিনেমা দিয়ে অভিষেক ঘটা ঢাকাই চলচ্চিত্রের ‘অগ্নিকন্যা’ খ্যাত মাহিয়া মাহী বর্তমানে তার অভিনয়ের গতি কমিয়ে রাজনীতিতেই বেশি উৎসাহী। আসন্ন নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (ভোলাহাট-গোমস্তাপুর-নাচোল) আসন থেকে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন মাহিয়া মাহী। সোমবার বিকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দেন তিনি। এর আগে শনিবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মাহীর পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তার প্রতিনিধি।
মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়া শেষে মাহী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি নারীদের জন্য কাজ করতে চাই। প্রার্থী হতে পারলে আমি আমার সব মন-প্রাণ দিয়ে দেশের জন্য কাজ করব। আমি শতভাগ আশা করছি, নৌকা প্রতীকে নমিনেশন পাব। আশা আছে প্রধানমন্ত্রী আমাকে নিরাশ করবেন না।’
প্রসঙ্গত, যদি কোনো কারণে তফসিলে পরিবর্তন না হয় তাহলে এবার নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ থাকছে ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।