আবারও উত্তেজনা বাড়াচ্ছে করোনাভাইরাস। ভারতের মুম্বাইতে সম্প্রতি ভাইরাসটির নতুন ভ্যারিয়েন্ট এক্সই এবং কাপার একটি করে কেস পাওয়া গেছে। এটি ভারতে এক্সই ভ্যারিয়েন্টের প্রথম কেস। চীনে ছড়াচ্ছে ওমিক্রনের সাব ভ্যারিয়েন্ট বিএ.২। অনেক দেশেই আবার বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। প্রতিবেশী দেশের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ঘিরে করোনা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে বাংলাদেশেরও।
জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সরকারের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা টিমের সদস্য ড. আবু জামিল ফয়সাল বলেছেন, পৃথিবীর অনেক দেশে ফের করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। চতুর্থ ঢেউ আসতে পারে। এ জন্য আমাদেরকে আগে থেকেই সচেতন থাকতে হবে। সব ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জারি রাখতে হবে। কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করতে হবে। নমুনা পরীক্ষা বাড়াতে হবে। শনাক্ত হলেই বাধ্যতামূলক আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে।
জানা গেছে, জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের সময় মোট ৩৭৬টি নমুনা নেওয়া হয়েছিল, এর মধ্যে ২৩০টি ছিল মুম্বাইয়ের। এটি ছিল জিনোম সিকোয়েন্সিং ট্রায়ালের ১১তম ব্যাচ। ২৩০টি নমুনার ২২৮টি নেওয়া হয় ওমিক্রন থেকে, বাকি দুটি এক্সই ও কাপা ভ্যারিয়েন্টের। করোনার একটি নতুন মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট এক্সই, যা ওমিক্রনের সাব ভ্যারিয়েন্ট বিএ.২ থেকে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি সংক্রামক হতে পারে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এক্সই হলো ওমিক্রনের দুটি উপরেখা বিএন.১ এবং বিএ.২ এর একটি পুনঃসংযোজক স্ট্রেন। ডব্লিউএইচও বলছে, যতক্ষণ না এর সংক্রমণ হার এবং রোগের আচরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা না যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এক্সই স্ট্রেন প্রথম শনাক্ত হয়েছিল ১৯ জানুয়ারি, যুক্তরাজ্যে। এরপর ৬০০টিরও বেশি কেস নিশ্চিত করা হয়েছে।
ব্রিটেনের হেলথ প্রোটেকশন এজেন্সির প্রধান চিকিৎসা উপদেষ্টা সুজান হপকিন্স বলেছেন, এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রামকতা, তীব্রতা বা তাদের বিরুদ্ধে কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে উপসংহার টানতে এখনো যথেষ্ট প্রমাণ নেই। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, তারা এক্সইর মতো রিকম্বিন্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট থেকে হওয়া বিপদের ওপর ক্রমাগত নজর রাখছে।
এই সম্পর্কিত প্রমাণ সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে আপডেট করা হবে। এক্সই ছাড়াও আরেকটি রিকম্বিন্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট এক্সডির দিকে নজর রাখছে ডব্লিউএইচও, যা ডেল্টা এবং ওমিক্রনের একটি হাইব্রিড। ফ্রান্স, ডেনমার্ক এবং বেলজিয়ামে এটি পাওয়া গেছে। চীনে বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। এর জন্য দায়ী ওমিক্রনের সাব ভ্যারিয়েন্ট বিএ.২। ধরনটির কারণে এক বছরের বেশি সময় পর ফের মৃত্যু দেখেছে চীন। আবারও লকডাউন দিয়েছে দেশটি। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে চতুর্থ ঢেউয়ের। হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে হুহু করে বাড়ছে সংক্রমণ। এক দিনেই সাড়ে ৩ লাখের বেশি আক্রান্ত শনাক্ত হচ্ছেন অনেক দেশে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেছেন, চীনে নতুন করে করোনার যে ঢেউ শুরু হয়েছে, এর পেছনে ওমিক্রনেরই একটি সাব ভ্যারিয়েন্ট দায়ী। আগে ছিল বিএ.১ ভ্যারিয়েন্ট। এখন সেই জায়গাটা দখল করে নিচ্ছে বিএ.২ ভ্যারিয়েন্ট। পূর্ব এশিয়াতে এগুলো আস্তে আস্তে বাড়ছে। যারা টিকা নেয়নি তারা বিপদে পড়ছে। যেমন হংকংয়ে অনেকেই টিকা নেয়নি, এ জন্য মৃত্যুর সংখ্যাটা সেখানে বেশি। অন্যত্র সংক্রমণ বাড়লেও মৃত্যু কম। তিনি বলেন, আমাদের দেশেও বিএ.২ পাওয়া গেছে। বিএ.১ এর চেয়ে বিএ.২ আরও দ্রুত ছড়ায়। তাই এই ভ্যারিয়েন্টটি দ্রুত সংক্রমণ হার বাড়াবে। নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্টের জন্ম না হলেও তিন মাস পর করোনার আরেকটি ঢেউ আসতে পারে। কারণ, সংক্রমণের ফলে তৈরি হওয়া এন্টিবডি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ফলে একবার সংক্রমিত হলেও পরে আবার সংক্রমিত হতে পারে। আর নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হলে যে কোনো সময় ঢেউ শুরু হতে পারে। সেটা এক মাসের মধ্যেও হতে পারে।