প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যহত করতে অনেক চক্রান্ত চলছে। আমি বিশ^াস করি যত চক্রান্তই করুক বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি অপ্রতিরোধ্য গতিতে, ইনশাল্লাহ এগিয়ে যাব। কোন ষড়ডযন্ত্রই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে থামাতে পারবে না।
তিনি বলেন, ঝড়-ঝাপটা এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশের কারণে অনেক কিছুই মোকাবিলা করতে হবে। আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে যেমন চলি, তেমনি বৈশি^ক যে দুর্যোগ সেটাও মোকাবিলা করে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো, সে বিশ^াস আমার আছে।
গতকাল স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে রাজধানীর ফার্মগেটস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় দেশে পেট্রোল-অকটেনের ঘাটতি নিয়ে মিথ্যা কথায় বিভ্রান্ত না হতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চাহিদার চেয়ে বেশি পেট্রোল-অকটেন দেশে আছে। ডিজেল আমাদের কিনতে হয় ঠিক। কিন্তু পেট্রোল-অকটেন কিনতে হয় না। সমালোচকরা অনেক বেশি জ্ঞানী তো, ছোট বিষয়গুলো ভুলে যান!
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ দিয়েছি সত্য, কিন্তু সারা বিশ্বে বর্তমানে কেমন অবস্থা বিরাজ করছে তা আপনারা জানেন। বিপদে যাতে না পড়ি সেজন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা সাশ্রয়ী হবো। তার মানে এই না যে বিদ্যুৎ নেই।
তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্ব মুদ্রাস্ফীতির জন্য হিমসিম খাচ্ছে। করোনা মোকাবিলা করতে করতেই আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা। ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি খাদ্যের সঙ্কট। সব দেশ বিদ্যুৎ জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী। ইংল্যান্ড, জার্মানি প্রতিটি দেশে দুঃসময় চলছে। বাংলাদেশে যেন তেমন দুঃসময় না আসে সেজন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। তারপরও ভর্ভুকি দিয়ে যাচ্ছি। উৎপাদন যেন অব্যাহত থাকে।
তিনি আরও বলেন, এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে। সেনা থেকে সব বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি যাতে এক ইঞ্চি জমি খালি না থাকে। বিএনপি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে কীভাবে পিছিয়ে নিতে হয় সেটা বিএনপি ভালই জানে। এদের হাতে বাংলাদেশ কখনও নিরাপদ নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগকে আজ এটাই বলবো তোমাদের কাজ হবে আমরা যে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি সে উন্নয়নের কথাগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।
দেশে কোন গৃহহীন পরিবার থাকলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের নিজ এলাকায় খুঁজে দেখার আহ্বান জানান তিনি। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, কে কি বললো সেদিকে না যেয়ে আমরা মানুষের জন্য যে উন্নয়ন করেছি সেই উন্ন্য়নের কথাগুলো একেবারে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। বার বার বলতে হবে। এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে এবং এই কাজটা করতে হবে।
আমরা বিস্মিত জাতি বিধায় এগুলো বার বার মানুষের কাছে তুলে ধরায় গুরুত্বারোপ করে সরকার প্রধান বলেন, ষড়ঋতুর দেশ আমাদের। দুই মাস পর পর ঋতু বদলায়, মানুষের মনও বদলায় এবং ভুলেও যায়। কাজেই দুই মাস পর ভুলে যেন না যায়, সে জন্য আমরা কি কাজ করেছি মানুষের কাছে বার বার সেটা বলতে হবে, বোঝাতে হবে। কারণ একটা শ্রেণি আছে যারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। এই জ্ঞানপাপীদের কথা শুনে অজ্ঞান হয়ে কেউ যেন বিভ্রান্ত না হয়।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু। স্বেচ্ছাসেবক লীগের গত এক বছরের কর্মকাণ্ড এবং সদ্য প্রয়াত দলটির সাবেক সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহের ওপর দু’টি পৃথক ভিডিও চিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘স্বেচ্ছাসেবার ১ বছর’ শীর্ষক প্রকটি প্রকাশনার মোড়কও উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
ডি-৮ দেশগুলোর শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্লক গড়তে গুরুত্বারোপ : ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্লকে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একসঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আসুন, আমরা একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে আমাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একত্রে কাজ করি।
গতকাল ঢাকায় অর্থনৈতিক সহযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক জোট ডি-৮ এর ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন এবং ডি-৮ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ২০তম অধিবেশনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেওয়া ভাষণে তিনি এই আহ্বান জানান। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠানের আয়োজন কর হয়।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় একটি পাঁচ-দফা প্রস্তাবও রেখেছেন, যাতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) প্রয়োগ করা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর মাধ্যমে ব্যবসায়িক সম্ভাবনার সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং পরবর্তী দশকে ১২৯ বিলিয়ন ডলার থেকে আন্তঃ-ডি-৮ বাণিজ্য দ্বিগুণ করার সুযোগ রয়েছে।
সংগঠনটির সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ ঐতিহাসিক এই মুহূর্তটি উদযাপন করায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ২৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ডি-৮ এখন সমন্বয় তৈরির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণ করতে প্রস্তুত।
শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং আমাদের সরকারি ও বেসরকারি খাতের অর্থপূর্ণ সহযোগিতার মাধ্যমে এটা সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমাদের অপার সম্ভাবনা যদি সঠিকভাবে উপলব্ধি করা যায়, তাহলে একটি অর্থনৈতিক ব্লক হিসেবে শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া ও তুরস্কের মতো অন্তর্ভুক্ত ডি-৮ দেশগুলো অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করছে শুনে তিনি আনন্দিত। তিনি আরও বলেন, এটি আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সাহায্য করবে। বাধাগুলিকে উদারীকরণ করবে।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, ডি-৮ মহাসচিব রাষ্ট্রদূত ইসিয়াকা আব্দুল কাদির ইমাম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং ডি-৮ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডি-৮সিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। অনুষ্ঠানে ডি-৮-এর ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
আজ ২৪টি টিটিসি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে দেশের ২৪টি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) আজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে তাদের বিদেশে পাঠানোর উদ্দেশ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো উপজেলা পর্যায়ে এসব কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাস্তবায়ন করছে।
রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এই ২৪টি টিটিসি উদ্বোধন করবেন। এর আগে এসব উপজেলায় কোনও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল না। যার কারণে বিদেশ গমনেচ্ছুদের আশেপাশের জেলায় যেতে হতো।
নতুন তৈরি এসব টিটিসিতে আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। একসঙ্গে ৬৫ জন এখানে থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। তবে দূর থেকে যারা আসবেন তারাই এখানে থাকার সুযোগ পাবেন। ২৪টি টিটিসি যেসব উপজেলায় হচ্ছে সেগুলো হলো- গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেন্টেনিয়াল টিটিসি, রংপুরের পীরগঞ্জে ও গঙ্গাচড়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পাবনার সুজানগর, নরসিংদীর মনোহরদি, সিরাজগঞ্জ সদর ও কামারখন্দ, মুন্সিগঞ্জ সদর, দিনাজপুরের খানসামা, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা ও নগরকান্দায়, খুলনার দিঘলিয়া, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে, যশোরের কেশবপুরে, চট্টগ্রামের রাউজান ও সন্দ্বীপে, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ও চৌদ্দগ্রামে, গাজীপুরের কাপাসিয়ায়, শেরপুর সদরে, টাঙ্গাইলের কালিহাতী ও নাগরপুর, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা এবং কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলায়।