1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
দুর্বিষহ মেস জীবন | Bastob Chitro24
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন

দুর্বিষহ মেস জীবন

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২০ মে, ২০২২

আকাশ রহমান। নিজের ক্যারিয়ার ও বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণে উচ্চ শিক্ষার জন্য এসেছেন ঢাকায়। ভর্তি হয়েছেন আইন বিভাগে। বাসা ভাড়া নেন যাত্রাবাড়ীতে। বাবা সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। আকাশই পরিবারের হাল ধরার একমাত্র অবলম্বন। পড়াশোনার প্রথমদিকে সবকিছু ভালো চললেও এখন দেখা যাচ্ছে টানাপড়েন। মধ্যবিত্ত পরিবারের সঙ্গে বাবা-মায়ের বয়স বেড়ে যাওয়ায় অর্থ ব্যয়ে খেতে হচ্ছে হিমশিম। পরিবারের সব খরচ চালাতে হয় তার বাবাকে। পড়াশোনার খরচের বোঝা না থাকলেও খাবার খরচ, বাসাভাড়া ও যাতায়াতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আকাশকে

চাকরি পাওয়ার আশায় শহরে পার করছেন দুর্বিষহ মেস জীবন। নিত্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় সংকট, দুশ্চিন্তায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঢাকা ছাড়ার। শুধু আকাশ নন, ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে শিক্ষা বা চাকরির জন্য মেসে বসবাস করেন অনেকে। এমন মানুষের দিনযাপন এখন কষ্টকর হয়ে উঠেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাড়তি দামের কারণে।

আকাশ বলেন, ২০১৯ সালে ঢাকায় এসেছি পড়াশোনার জন্য। এরপর আইন বিভাগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। বাবা-মায়ের স্বপ্ন আমি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে একটি ভালো চাকরি করি। তাদের একমাত্র ছেলে আমি। গত বছরের শেষ দিকে আমার একাডেমিক পড়া শেষ হয়। এরপর নিতে থাকি চাকরির জন্য প্রস্তুতি। এতদিন ভালো চললেও এখন জীবন চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একটি রুমে চারজনের মেস করে থাকি। আয় ছাড়া ব্যয় করা অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে। চাল কিনলে তেল কেনার টাকা থাকে না। এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি গ্রামে ফিরে যাওয়ার।

পশ্চিম তেজতুরী বাজারে একটি নিত্যপণ্যের দোকানে কেনাকাটা করছিলেন ফয়সাল আহমেদ। তাকে একটি ডিম ও পাঁচ টাকার মরিচ কিনতে দেখা যায়। তিনি বলেন, একটি ডিম ও পাঁচ টাকার মরিচ কিনেছি। অল্প কিছু চাল বাসায় আছে। আজ রাতে খেতে পারলে হবে। কাল আবার হাতে টাকা এলে খাবো। কখনো কখনো না খেয়ে থাকতে হয়। মাঝে মাঝে কলা-রুটি খাই। এক কেজি চাল কখনো সম্পূর্ণ কেনা হয় না। মাছ, মাংসতো চোখে দেখিনা। দুইমাস পরে কয়েকজন মিলে যদি একটা মুরগি আনা হয়। মেস ভাড়ার টাকা গোছাতে গোছাতে খাবারের টাকা থাকে না। তিনি আরও বলেন, এখনো গ্র্যাজুয়েশন শেষ করিনি। আরও দুইবছর সময় লাগবে। একরুমে তিনজন থাকি। মাসে তিন হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। বাবা খুলনায় একটি ব্যবসা করেন। টাকা পাঠাতে তারও কষ্ট হয়। গত বছরও খুব ভালোভাবে চলেছে কিন্তু এইবছর সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বেগ পেতে হচ্ছে।

নাকিব জিসান। বাগেরহাট থেকে ঢাকায় এসেছেন চার বছর আগে। পড়াশোনাও শেষ করেছেন তিনি। এখন চাকরির জন্য ঢাকায় আছেন। তিনি বলেন, চাকরির জন্য ঢাকায় আছি। কিন্তু এখন আর চাকরি করতে ইচ্ছে করছে না। এই ঢাকায় টিকে থাকতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন। সবকিছুর দাম বাড়তি। চাকরি পেতেও অনেক সময়ের প্রয়োজন। চিন্তা করেছি গ্রামে গিয়ে নিজেদের পুকুরে মাছ চাষ করবো। অল্প কিছু মাছের চাষ শুরু করেছি। হয়তো এক-দুই মাসের মধ্যে চলেও যাবো। মাঝে মাঝে ঢাকাতে আসবো। এদিকে গ্রামে বসে চাকরির খোঁজখবরও রাখবো।

রুমানা আক্তার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী। ফার্মগেটে মেস বাসায় এক রুমে দুইজন মিলে থাকেন। তিনি বলেন, পড়াশোনার আর এক বছরের মতো বাকি আছে। এতদিন বাবা সব টাকা দিয়েছেন। এখন সবকিছুর এত দাম। বাজারে গেলে টাকা থাকেনা। পড়াশোনার খরচ ও ভাড়া দিতে এমনিতেই সব টাকা শেষ হয়ে যায়। তবুও কোনো মতে চলতো। কিন্তু এখন এক কেজি চাল কিনলে টাকা থাকে না। বাবার উপরও অনেক চাপ পড়ে যাচ্ছে। একটি সুপারশপে চাকরির জন্য কথাও বলেছি। চাকরিটা হলে কিছু টাকা আয় হবে।

রুবেল হাসান বলেন, করোনার পরে ঢাকায় আসি। গত দুইমাস আগে একটি কোম্পানিতে চাকরি হয়। মোটামুটি বেতন পাই। এক রুমে চারজন মিলে মনিপুরী পাড়ায় একটি মেসে ভাড়া থাকি। প্রতিমাসে চার হাজার টাকা শুধু ভাড়াতেই চলে যায়। এরপর যাতায়াত খরচ তো আছে। এখন চলতে আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে। হোটেল বা বাসায় যেখানেই খাইনা কেন খরচ অনেক বেশি। মাস শেষ হওয়ার আগে পকেটের টাকা শেষ হয়ে যায়। খরচ বাড়লেও বেতন বাড়ে না। বাড়িতে মাকেও মাজে মাঝে টাকা পাঠাতে হয়। বাবা দুইবছর আগে মারা যান।

যাত্রাবাড়ীতে একটি মেসে থাকেন মিম রহমান। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে পান্থপথে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। প্রথমদিকে বাবার খরচ পাঠাতে কোনো সমস্যা হয়নি। ২০২০ সালে ছোট বোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোচিংয়ের জন্য আসে। দুই বোন ফার্মগেটের একটা মেসে থাকা শুরু করি। দুই বোনের খরচ দিতে বাবাকে অনেক কষ্ট করতে হয়। বাবা টাঙ্গাইলে প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। আমার কোনো ভাই না থাকায় বাবা আমাদের লেখাপড়া শিখিয়ে চাকরি করানোর আশা করেন। বাবার কষ্ট দেখে আমি দুইটা টিউশনি করা শুরু করি। এরমধ্যে করোনার প্রকোপ শুরু হয়। মেসে সিট রেখে চলে যেতে হয় গ্রামের বাড়ি। লকডাউন শেষে আবার ফিরে আসি। কিন্তু টিউশনি আর পাই না। এরপর ছোটবোন একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়। সে সেখানে চলে যায়। তিনি আরও বলেন, ছোট বোন চলে যাওয়ার পর আমি ফার্মগেট ছেড়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে চলে আসি। এদিকে তুলনামূলক ভাড়া কম। কিন্তু ভাড়া কমের জন্য এদিকে এসেও খুব একটা লাভ হয়নি। প্রায়ই ভার্সিটিতে ক্লাস করতে যেতে হয়। সে খরচ তো আছেই সেইসঙ্গে সবকিছুর দাম বাড়তি। অনেক কঠিন জীবন পার করতে হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি