তীব্র তাপদাহে পুড়ছে রাজশাহীসহ পুরো বরেন্দ্র অঞ্চল। গ্রীষ্ম মওসুমটা অগ্নিদহনে প্রাণহীন হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। জীবন যাত্রা ব্যাহত হচ্ছে দিন-দিন। কৃষক-মজুরসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠছে। তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠা নামা আর চারমাস ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় আবহাওয়ায় বিরাজ করছে রুক্ষতা। সকালের সূর্য উঠছে যেন আগুনের হল্কা নিয়ে। তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ছুঁইয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যে, বর্তমানে রাজশাহীতে মাঝারি তাপাদহ বিরাজ করছে। এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে বৃষ্টি ও শীতল হাওয়ার ছোঁয়া পেতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে নগরবাসী। তাপমাত্রা উঠানামা করছে ৩৯ থেকে ৪১ ডিগ্রির ঘরে। নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মরা পদ্মার বিশাল বালুচর থেকে ভেসে আসা উতপ্ত বালুর ঝাপটা চোখে মুখে জ্বালা ধরাচ্ছে। মাইলের পর মাইলজুড়ে থাকা বালুচর দুপুরের আগেই উত্তপ্ত কড়াইয়ে পরিণত হচ্ছে।
প্রচণ্ড রোদে মানুষের চেহারার রঙে পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। ফর্সা মুখগুলো পুড়ে তামাটে বর্ণ ধারণ করেছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। বিশেষ করে রিকশা, ভ্যানচালক দিন মজুররা। ঈদের পসরা নিয়ে ফুটপাতে বসা মানুষগুলোর দুর্ভোগের শেষ নেই। প্রচণ্ড খরতাপ মাথায় নিয়ে রাস্তার ধারে বসে থাকছে ক্রেতার আশায়। ক্রেতা বিক্রেতা উভয় পুড়ছে তাপদাহে।
আগুন ঝরা রোদ্র ও ভ্যাপসা গরমে মানুষ পশু পাখি কাহিল হয়ে পড়েছে। পুড়ছে মানুষ পুড়ছে প্রকৃতি। ফসলের ক্ষেত, পুকুরে মাছের আবাদ, মুরগির খামার সবকিছুতেই বিরুপ প্রভাব। এবার আম নিয়ে আম চাষিরা স্বপ্ন দেখলেও গরমের তীব্রতা সইতে না পেরে গুটি ঝরে পড়ছে। সেচের পর সেচ দিয়ে গুটি রক্ষার চেষ্টা করছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে ৪০ শতাংশ গুটি ঝরে পড়েছে।
সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে আছে নদী পাড়ের বাসিন্দারা। বিশেষ করে টিনের ঘরে বসবাস করা মানুষ। খরতাপ যেন টিনের চাল চুঁইয়ে চুঁইয়ে নামছে। জানালা খোলার উপায় নেই উত্তপ্ত বাতাসের কারনে। ফলে ঘরের মধ্যে দম বন্ধকর অবস্থায় বসবাস। দিনের বেলা লু হাওয়া আর রাতের বেলা ভ্যাপসা গরম মানুষকে কাহিল করে ফেলেছে।
প্রচণ্ড খরতাপ থেকে মুক্তির জন্য মানুষ পশু খুঁজছে পুকুর।
নগরায়নের দাপটে আর পুকুর খেকোদের কারনে বিপুল সংখ্যক দিঘী পুকুর ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এখনও তা অব্যাহত আছে। পুকুর ভরাট ঠেকাতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা। যাদের এসব দেখভাল করার কথা তাদের সাথে সমঝোতা আর রাজনৈতিক ক্ষমতায় সব ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এলাকার মানুষ প্রতিবাদ করে উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছে। এক সময়ের পুকুরের শহর এখন পুকুরশূন্য নগরীতে পরিণত হয়েছে।
বিভিন্ন বিল্ডার্স কোম্পানির নজর পুকুরের দিকে। যে কয়েকটি টিকে আছে সেগুলো নানা কোম্পানির ভরাটের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। ফলে আবহাওয়া ও পরিবেশ আরো রুক্ষ হচ্ছে। মানুষ পশু পাখিরা একটু গা ভেজানোর স্থানের বড্ড অভাব। একদিকে মরা পদ্মা আর ভেতরের পানির আধারগুলো ভরাট এক অসনীয় অবস্থার সৃষ্টি করেছে। ভূগর্ভস্ত পানির স্তর নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। চলছে পানির সঙ্কট। সব মিলিয়ে প্রকৃতি তার নির্মম প্রতিশোধ নিচ্ছে। তীব্র দাবাদহের প্রভাব পড়েছে মানব শরীরে। দাবাদহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিভিন্ন রোগ। ডায়রিয়া, জন্ডিস, রক্তচাপ, বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, গত কয়েকদিন ধরে রাজশাহীর তাপমাত্রা বাড়ছেই। সাধারণত তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং ৪০ থেকে ৪২ হলে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে ধরা হয়। এছাড়া সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠলে তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। ফলে রাজশাহীর ওপর দিয়ে এখন তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যদিও এখন তাপমাত্রা সামান্য কমেছে কিন্তু গরম কমেনি। বৃষ্টিপাত না হলে স্বস্তি নেই।
মানুষ চেয়ে আছে আল্লাহর রহমতের বৃষ্টির দিকে। নামাজ শেষে মোনাজাতে মসজিদে মসজিদে আল্লাহর রহমত কামনা করে দোয়া করা হচ্ছে।