1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
‘ঢাকা কলেজের আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম’ | Bastob Chitro24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৯ পূর্বাহ্ন

‘ঢাকা কলেজের আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম’

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২২

ঐতিহ্যের ঢাকা কলেজ শত ভাঙা-গড়ার সাক্ষী

গৌরবের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিদ্রোহ-বিপ্লব- প্রতিরোধের প্রাচী

বাংলাদেশের প্রথম কলেজ ঢাকা কলেজ, ১৮৪১ সালে এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে এই বঙ্গে কোনো কলেজ ছিল না, ভারত বর্ষের প্রথম কলেজ হিন্দু কলেজ, এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৮১৭ সালে। হিন্দু কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। যেটা পরে নাম পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্সি কলেজ রাখা হয়েছে। এটি ভারতের কলকাতায় অবস্থিত, আবার পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিতে রুপান্তর করা হয়েছে। ঢাকা কলেজের মত গর্বের ইতিহাস বাংলাদেশে আর কারও নেই। ১৮৪১ সালে এই কলেজটি প্রতিষ্ঠা হয় পুরনো ঢাকায়। ১৮৩৫ সালে ইংলিশ সেমিনারী স্কুল নামে সেখানে একটি স্কুল ছিল, এটি প্রতিষ্ঠা করেছিল ইংরেজরা। এটি প্রথমবারের মত সরকারি স্কুল। এই স্কুল থেকে পাস করার পর যাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল, তারা পড়তে যেত প্রেসিডেন্সি কলেজে বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে। এরপর কিছু স্থানীয় মানুষ তৎপর হতে লাগলো, এইখানে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে ভালো হত। এরপর ইংলিশ সেমিনারী স্কুলের শিক্ষক ও তৎকালীন শাসকরা উদ্যোগ নেন। পরে ইংলিশ সেমিনারী স্কুলের দ্বিতীয় তলায় তিনটা রুমের মধ্যে ঢাকা কলেজের যাত্রা শুরু হয়। এটিই ইংরেজ শাসনামলের প্রথম সরকারি কলেজ হিসেবে যাত্রা শুরু। বাংলাদেশের প্রথম সরকারি কলেজ এটি। সেই ইংলিশ সেমিনারী স্কুলের ক্লাস হত নিচতলায় আর ঢাকা কলেজের ক্লাস নেওয়া হত দ্বিতীয় তলায়। আর ইংলিশ সেমিনারী স্কুল আর ঢাকা কলেজের ক্লাস একই বিল্ডিংয়ে নেওয়া হচ্ছে পরবর্তীতে ইংলিশ সেমিনারী স্কলের নাম পরিবর্তন করে দেওয়া হয় ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল। এখনও এটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে পুরান ঢাকায়। সেখান থেকে দুই-তিন বছরের মধ্যে ঢাকা কলেজের নিজস্ব ভবন তৈরি হয় বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে। পরে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে শিক্ষাক্রমে চলে কিছুকাল। ঢাকা কলেজকে কয়েকবার জায়গা বদল করতে হয়েছে। বুড়িগঙ্গার পাড় থেকে চলে ঢাকা শহরের আরও ভিতরে চলে আসে ঢাকা কলেজ। এখন যে কবি নজরুল কলেজ, সেখানেও কিছুদিন ঢাকা কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান ছিল। এরপরে ঢাকা কলেজ চলে আসে সবচেয়ে বড় গর্বের জায়গা কার্জন হলে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। তৎকালীন সময়ে রীতিমত আন্দোলন করতে হয়েছে, এই বঙ্গে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে। এই বঙ্গের সবচেয়ে বড় ও মান সম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজ। আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছিল ১৮৫৭ সালে। আর ঢাকা কলেজের জন্ম ১৮৪১ সালে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরও আগে জন্ম হয়েছে ঢাকা কলেজের। আর ঢাকা কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স শুরু হয় ১৮৫৭ সালে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সাথে। আজকের যে কার্জন হল, সেটা ঢাকা কলেজের। এখনও গুগলে সার্চ দিলে হাইকোর্ট থেকে বঙ্গবাজারের পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা গেছে সেটার নাম কলেজ রোড আসে। কেন কলেজ রোডে আসে? মানে এটি ঢাকা কলেজের জায়গা ছিল। আর তৎকালীন সময়ে পূর্ব বঙ্গের উন্নয়নের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন ছিল। ঢাকা কলেজের শিক্ষকরাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছিল। তখন ঢাকা কলেজের বয়স ৮০ বছর। ঢাকা কলেজ থেকে পাস করে অনেকেরই উচ্চতর ডিগ্রির জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া সামর্থ ছিল না। সরকার যখন সিদ্ধান্ত নিল ১৯২১ সালের ৭ মে এক আদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের গেজেট প্রকাশিত হয়। এই দুই প্রতিষ্ঠান একসাথে যাত্রা শুরু করে। সরকার থেকে বলা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু করতে আরও দুই থেকে তিন বছর সময় লাগবে, তখন ঢাকা কলেজ সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকার করেছিল। ঢাকা কলেজ বলেছিল, আগামীকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হবে, আমাদের সমস্ত স্থাপণা ছেড়ে দিব। ঢাকা কলেজ তাঁর কার্জন হল ছেড়ে দিয়েছে, লাইব্রেরির সব বই দিয়ে দিয়েছে। ঢাকা কলেজ তাঁর ফিজিক্স, বায়োলজি, কেমিস্ট্রি, বোটানির সব ল্যাব ছেড়ে দিয়েছে, এমনকি কিছু শিক্ষকও ছেড়ে দিয়েছে। তারপরও ঢাকা কলেজ চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হোক এই বাংলায়। ঢাকা কলেজ আত্মত্যাগের মধ্যে নিজের সমস্ত কিছু দিয়ে নিরবে-নিভূতে হাইকোর্টের পুরনো একটি বিল্ডিংয়ে চলে গেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এগুলো দেওয়ার পরই ১৯২১ সালে ক্লাস শুরু হয়। ঢাকা কলেজের আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম। ওই সময়ে ঢাকা কলেজ ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। তৎকালীন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নতুন হওয়ায় কেউ ভর্তি হতে চাইতো না, সবাই ঢাকা কলেজে ভর্তি হত। কারণ ঢাকা কলেজের সার্টিফিকেট দিবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। তখন ঢাকা কলেজ আরেকটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়, ১৯২২ সাল থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত অনার্স-মাস্টার্সে ভর্তি বন্ধ করে দেয়। অনার্স-মাস্টার্স কলেজ সরাসরি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ হয়ে যায়। যেহেতু ঢাকা কলেজে অনার্স-মাস্টার্স বন্ধ, সবার পক্ষে কলকাতা গিয়ে সবার পক্ষে পড়া সম্ভব নয়। পরে তারা বাধ্য হত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। ১৯৩৬ সালে ঢাকা কলেজ নতুন করে আবার অনার্স-মাস্টার্স ভর্তি নেওয়া শুরু করে। তখন আবার নতুন ঢাকা কলেজ অধিভুক্তি নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট ভবনও ছেড়ে দিতে হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে। কারণ ওই সময়ে ঢাকা কলেজের সব ভবন আর্মিরা এসে দখল করে নেয়, আজকে পল্টন ওইখানে আর্মির বেড়া ছিল। তখন আবার বাধ্য হয়ে ঢাকা কলেজ চলে যায় সিদ্দিকবাজারের কয়েকটা ভাড়া বাড়িতে। সেখানে কয়েকটা হোস্টেলও ছিল, সেই হোস্টেলের বাসিন্দা ছিলেন ভাষা সৈনিক ও ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গা একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের লেখক আব্দুল গাফফার চৌধুরি। আজকে সারা বিশ্বে এই গান প্রশংসনীয়। ঢাকা কলেজের মত গর্ব ও আত্মা ত্যাগের ইতিহাস বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেই। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ঢাকা কলেজ অনেক কিছু ত্যাগ করেছিল। যেখান পরবর্তী সময়ে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালিত হয়ে ছিল। সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা কলেজের কাছে ঋণী। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঢাকা কলেজের আটজন শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি