পবিত্র রমজান মাসে মানুষ নানা ধরনের দানে নিজের হাতকে স¤প্রসারিত রাখেন। সত্তর থেকে সাত শত গুণ সওয়াবের আশায় অধিকাংশ মানুষই তার যাকাতের অর্থ বিতরণ করে থাকেন এ মাসেই। আল্লাহর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘সাত প্রকারের লোক কিয়ামতের কঠিন দিনে আল্লাহর আরশের ছায়াতলে স্থান পাবে যেদিন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। সেই সাত প্রকার মানুষের মধ্যে এক প্রকার হচ্ছে সেই মানুষ যার এক হাত দান করে কিন্তু অপর হাত জানে না কী দান করা হয়েছে। এর মাহাত্ম্য হচ্ছে গোপনীয়তা।
কিন্তু পক্ষান্তরে সমাজের দিকে তাকালে পরিলক্ষিত হয় যে, নিজের সম্পদে থাকা গরীবের হক বের করে দেয়ার জন্যও কত আনুষ্ঠানিকতার আশ্রয় নেয়া হয়, ভিডিও করা হয়, লাইভে প্রচার করা হয়, প্রেস রিলিজ দিয়ে মানুষকে জানানোর চেষ্টা করা হয় উমুক গ্রæপ, উমুক শিল্পপতি এত এত যাকাত প্রদান করেছে। নাউযু বিল্লাহ। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারিত তারিখের ঘোষণা দিয়ে যাকাত দিতে গিয়ে কত নিরীহ প্রাণ যে পদতলে পিষ্ট হয়ে মারা গেছে তা পূববর্তী বছরগুলোর পত্রিকার পাতা ওল্টালেই জানা যাবে।
নির্ধারিত তারিখ দিয়ে যাকাত প্রদান করতে গিয়ে আরো যেসব অনিয়মের দেখা মেলে তা হচ্ছে নিম্নমানের পণ্যের যাকাত প্রদান। যাকাতের শাড়ি বা যাকাতের লুঙ্গি নামে এক প্রকারের অতি নিম্নমানের শাড়ি-লুঙ্গি প্রদান করা হয়ে থাকে। এর ফলে গ্রহিতাকে বঞ্চিত করা হয় না, বরং গরীব ঠকানোর বিপরীতে বরং নিজেকেই ঠকানো হয়। লোক দেখানোর জন্য এসব করতে গিয়ে বরং আশ-শিরকুল আসগার বা ছোট শিরকে লিপ্ত হবার প্রবল আশঙ্কা থেকে যায়। সেক্ষেত্রে সওয়াব তো দূরের কথা বরং গুনাহ অনিবার্য হয়ে যাবে।
আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে, যাকাত কোন অনুদানের নাম নয়, বরং তা হচ্ছে আমাদের সম্পদের মাঝে লুকিয়ে থাকা গরীবের সম্পদ যা আমার সম্পদকে অপবিত্র করে রেখেছে। নিজের সম্পদকে পবিত্র করার জন্য যত দ্রæত সম্পদ তা আমার সম্পদ থেকে বের করে তা হক্বদারদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তবেই আমার সম্পদ হবে পবিত্র ও প্রবৃদ্ধিশীল। স্বর্ণে সাড়ে ৭ ভরি, রৌপ্যে সাড়ে ৫২ তোলা হলে এবং পূর্ণ এক বছর কারো মালিকানায় থাকলেই তার যাকাত দিতে হবে। অনলাইনে নানা ধরনের যাকাত ক্যালকুলেটর রয়েছে, যে কোনো যাকাতদাতা নিজেই সেই ক্যালকুলেটরের সাহায্যে সহজে যাকাত নির্ধারণ ও প্রদান করতে পারেন। আমাদের আমাদের জন্য যাকাত আদায় সহজ করে দিন। আমীন।