প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ এগিয়ে যাবে। জনগণের ওপর আমাদের ভরসা আছে। জনগণ আমাদের পাশে আছে। বাংলাদেশকে জাতির পিতাই তো বলে গেছেন, কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না। এদিকে অপর এক অনুষ্ঠানে নৌ ও বিমানবাহিনীতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস, সততা, পেশাগত দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২২ উদযাপন এবং জাতীয় মৎস্য পদক-২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। বক্তব্য রাখেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. ইয়ামিন চৌধুরী। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২২’ উদযাপন উপলক্ষে গণভবন লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। নিরাপদ মাছে ভরবো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারা দেশে গত ২৩ জুলাই থেকে আগামী ২৯ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পালিত হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা নাই নাই, গেল গেল, হায় হায় করে বেড়াচ্ছে, সেই হায় হায় পার্টি হায় হায় করতেই থাকুক। মাঝে মাঝে তাদেরও তো একটু বলতে দিতে হবে। আর আমরা আমাদের কাজ করে যাই। দেশ এগিয়ে যাক এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। পদ্মা সেতুতে বাধা দিয়েছিল, সে বাধা অতিক্রম করে এই সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করে বিশ্বকে আমরা এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছি যে বাংলাদেশ পারে। আমরাও পারি। সবাই মাছে-ভাতে, সবাই সুস্থ থাকুন। সুন্দর জীবন হোক। এই মৎস্য প্রক্রিয়াজাত করা বা এদিকে সবাই এগিয়ে আসুন। তিনি বলেন, আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি। এই মাছে-ভাতে বাঙালি হিসেবেই যেন আমরা থাকতে পারি। এখন মাছের কাঁটা একটা সমস্যা। অনেকে মাছ খেতে চায় না। কিন্তু প্রক্রিয়াজাত করলে এই কাঁটা; কিন্তু নরম করে ফেলা যায় এবং খাওয়া যায়। সেটা খুব বেশি কঠিন না, এমনকি ঘরে ঘরে করতে পারেন। আপনারা যদি প্রেসার কুকারে মাছ এক ঘণ্টা ১০ মিনিট সিদ্ধ করেন, মাছের কাঁটা কিন্তু নরম হয়ে যায়। মাছ মাছের মতোই থাকবে; কিন্তু কাঁটা নরম হয়ে যাবে। আপনারা সেটা বাচ্চাদেরও খাওয়াতে পারবেন। এতে কোনো অসুবিধা হয় না। কাজেই এটা কিন্তু আমরা করি। একটু রেসিপিও দিয়ে দিলাম সঙ্গে। যাতে আপনাদের ঘরে কাঁটার সমস্যাটা না থাকে। বিশেষ করে ইলিশ মাছে একটু বেশি সময় লাগে, সমুদ্রের মাছ। অন্যান্য মাছ আরো কম সময়ে হয়ে যায়। প্রধামন্ত্রী বলেন, আমি বলছি যেটা ওটা হলো ঘরে। কিন্তু আমরা যদি এ ধরনের ইন্ডাস্ট্রি করি, এই যে প্রেসার দিয়ে মাছের কাঁটাগুলো নরম থাকবে, মাছ যেমন আছে, তেমনই থাকবে। সেভাবে যদি আমরা টিনজাত করতে পারি, প্রক্রিয়াজাত করতে পারি এবং দেশে-বিদেশে রপ্তানি করতে পারি, পৃথিবীর বহু দেশ এই মাছ কিন্তু নেবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাছের বিভিন্ন পণ্য আমরা তৈরি করে রপ্তানি করতে পারব। আমি মনে করি, আমাদের নতুন প্রজন্ম আরো এগিয়ে আসবে। তাতে কর্মসংস্থান যেমন হবে, দেশে বেকারত্ব দূর হবে। সেই সঙ্গে সঙ্গে দেশও রপ্তানিযোগ্য পণ্য পাবে। আর দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদাও মিটবে। কাজেই সেভাবেই আমাদের দেশকে আমরা আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, তার সরকারের বিভিন্ন গবেষণালব্ধ উদ্যোগের ফলে বিলুপ্ত প্রজাতির অনেক মাছকে আবার জলাশয়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে এবং মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি। আমাদের যে চাহিদা, সে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি মাছ এখন উৎপাদন করতে পারি। সবচেয়ে নিরাপদ পুষ্টি পাওয়া যায় মাছ থেকে। যেটা মাংস থেকে হয় না। মাছের যে আবাসস্থল অর্থাৎ অভয়ারণ্য তৈরি করাÑ এগুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। পানির প্রবাহ ভালো থাকা, পানি যাতে দূষণ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার এবং কুয়াকাটাসহ সমুদ্র এলকায় চিংড়ি চাষে হ্যাচারি শিল্প গড়ে তোলার গুরুত্বারোপ করে বলেন, নেট দিয়ে চিংড়ির পোনা আহরণে অনেক প্রজাতির মাছ নষ্ট হয়। কাজেই সেগুলো বন্ধ করতে হবে এবং সেখানে হ্যাচারি শিল্প গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত চিংড়ি পোনা দেশব্যাপী সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়ারও প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশের প্রকৃতি এবং পরিবেশ যে কোন ধরনের উৎপাদন অনুকূল বলেও তার অভিমত ব্যক্ত করেন এবং সেটা সকলকে কাজে লাগানোরও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নৌ এবং বিমানবাহিনী নির্বাচনী পর্ষদ-২০২২’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, পেশাগত দক্ষতা, নেতৃত্বের গুণাবলি, শৃঙ্খলার মান, সততা, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের ওপর গুরুত্বারোপের নির্দেশনা দেন। এ পর্ষদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ভবিষ্যতে তাদের সুযোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে বিমানবাহিনীকে দেশমাতৃকার সেবায় আরও ভালোভাবে সম্পৃক্ত করবেন বলে শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী সদর দফতরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নৌবাহিনীর ক্ষেত্রে ক্যাপ্টেন থেকে কমডোর, কমান্ডার থেকে ক্যাপ্টেন এবং লে. কমান্ডার থেকে কমান্ডার পদবিতে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। নৌবাহিনীর সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত এ পর্ষদ, সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে নৌবাহিনীর ভবিষ্যৎ জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বের জন্য যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তা নির্বাচন করবে। অন্যদিকে বিমানবাহিনীর ক্ষেত্রে এয়ার কমডোর, গ্রুপ ক্যাপ্টেন এবং উইং কমান্ডার পদে যোগ্যপ্রার্থীদের পদোন্নতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত এ পর্ষদের মাধ্যমে বিমানবাহিনীর ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য মেধাবী, যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তারা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে পদোন্নতি পাবেন। নির্বাচনী পর্ষদ-২০২২ আগামী বুধবার সমাপ্ত হবে।
শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠনে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রিয় মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একটি অত্যাধুনিক, প্রশিক্ষিত ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বর্তমান সরকার প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।