মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানসহ দেশের ১৬৭টি চা বাগানের শ্রমিকরা ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন। ধর্মঘট চলাকালে চা পাতা উত্তোলন ও ফ্যাক্টরিতে চা পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজসহ সবধরনের কাজ বন্ধ রেখেছেন শ্রমিকরা। কাজ বন্ধ রাখায় ফ্যাক্টরিগুলোতে প্রক্রিয়াজাতকরণের অপেক্ষায় থাকা চা পাতাগুলো যেমন পচে নষ্ট হচ্ছে। তেমনি বাগান থেকে সময়মতো চা পাতা উত্তোলন না করায় তাও প্রক্রিয়াজাতের অনুপযোগী হচ্ছে। চলতি ভর মৌসুমে শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে চা উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ বন্ধ রাখাসহ ক্রমবর্ধমান লোডশেডিংয়ে চা পাতা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, গেল কয়েকদিন থেকে প্রতিদিনই প্রায় ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে চা শিল্পের সংশ্লিষ্টরা। তবে আন্দোলন অব্যাহত থাকলে ক্ষয়ক্ষতির ওই পরিসংখ্যান আরও বাড়বে এমনটিই তথ্য দিচ্ছেন চা বাগান মালিক, স্টাফ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
গত মঙ্গলবার বিকেলে চলমান ধর্মঘট নিরসনে দ্বিতীয় দফা আন্দোলনরত চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের নিয়ে বাংলাদেশ শ্রম অধিদফতরে মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা শ্রীমঙ্গলে বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ায় সিদ্ধান্ত হয় গতকাল বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ শ্রম অধিদফতরের ঢাকার কার্যালয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত যানা যায়নি বৈঠকের।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা ইনকিলাবকে জানান, শ্রমিকদের দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তবে চলমান ওই আন্দেলনের মধ্যে আলোচনাও চলবে। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে তবেই ধর্মঘট প্রত্যাহর করে কাজে ফিরবেন শ্রমিকরা।
উল্লেখ্য, চা শ্রমিকদের দৈনিক ১২০ টাকা থেকে মজুরি ৩০০ টাকা বৃদ্ধি করার দাবিতে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন গত ৯ আগস্ট থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ২ ঘণ্টা করে পালন করে। এরপর ১৩ আগষ্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস চা শ্রমিক ধর্মঘট পালন করে। ১৪ ও ১৫ আগষ্ট ২ দিন স্থগিত থাকার পর ১৬ আগস্ট থেকে পূর্ণদিবস ধর্মঘট পালন করছেন চা শ্রমিকরা।
এদিকে শ্রমিক নেতারা বলেন, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের মূল্য বাড়ছে, এতে পরিবার নিয়ে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরির দাবি জানিয়ে প্রায় দুই বছর আগে আবেদন করলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। এছাড়া প্রতি দুই বছর পর পর চুক্তি নবায়ণ করার নিয়ম থাকলেও এবার তা বাস্তবায়নে বাগান কর্তৃপক্ষ কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না ।