কুষ্টিয়া কুমারখালী বাঁশগ্রাম আলাউদ্দিন আহম্মেদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তোফাজ্জেল বিশ্বাসের (৫২) ডানের হাতের বড় একটি অংশ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে দূর্বৃত্তরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর আনুমানিক আড়াইটার সময় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বংশীতলা নতুন ব্রিজের উপর এই ঘটনা ঘটে। আহত তোফাজ্জেল বিশ্বাস কুমারখালী বাগুলাট ইউনিয়নের শালঘর মধুয়া এলাকার জালা বিশ্বাসের ছেলে। বর্তমানে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এলাকাবাসী, পুলিশ ও শিক্ষকের পরিবার সুত্রে জানা গেছে, দুপুরের দিকে শিক্ষক তোফাজ্জেল বিশ্বাস নিজের গ্রাম শালঘর মধুয়া থেকে মটর সাইকেল যোগে কুষ্টিয়া শহরে ফিরছিলেন। সে সময় বৃষ্টি হচ্ছিলো। বংশীতলা নতুন ব্রীজের উপর দিয়ে তিনি মটর সাইকেলে আসছিলেন। রাস্তার কাজে ব্যবহৃত একটি রোলার ব্রীজের ওপর রাখা ছিলো, এর পেছনে লুকিয়ে ছিলো দেশীয় অস্ত্রধারী ১০ থেকে ১৫জন যুবক। ব্রীজের উপর আসার পর তার গতিরোধ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডান হাতের কুইয়ের নিচ থেকে কেটে নেওয়া হয়। তার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে। এ সময় ব্রীজের যন্ত্রনায় ছটফট করছিলেন তোফাজ্জেল। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মটর সাইকেলে ব্রীজের ওপর আসার আগেই একটি জায়গায় তার ওপর প্রতমে কয়েকজন হামলা চালায়। সে ভয়ে মটর সাইকেল ফেলে ব্রীজের দিকে দৌড়ে চলে আসে। এরপর ব্রীজের ওপর ওঁত পেতে থাকা দৃর্বুত্তরা তার ওপর হামলা চালায়। তার ডান হাতের নিচের অংশ পুরো বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। পিঠে কুপানো হয়। তাদের সবার হাতে ধারালো অস্ত্র ছিলো। তারা কুপিয়ে রেখে দ্রুত চলে যায়।
বৃষ্টি হওয়ার কারনে আশেপাশে তেমন লোকজন ছিলো না। দুর থেকে অনেকে দেখেন ব্রীজের একজনকে কুপানো হচ্ছে। এরপর সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে লোকজন ছুটে আসেন। পরে সেখানে পুলিশ। পুলিশ এসে লাল নিশানা টাঙিয়ে দেয় ব্রীজের ওপর। উৎসুক লোকজন ভীড় জমায় সেখানে।
শিক্ষকের পুত্র নাসমুস সাবিক বলেন,‘ তাদের প্রতিপক্ষের লোকজন পুর্ব শুক্রতার জের ধরে এ হামলা করতে পারে। তিনি হামলার পেছনে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানান। তবে কারা হামলা করেছে তাদের নাম ও পরিচয় বলতে পারেননি।
স্থাণীয়রা জানান, বাগুলাট ইউনিয়নের শালঘর মুধয়া গ্রামটি পড়েছে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে। এখানে সামাজিক দুটি দল আছে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় নানা কারনে মারামারি হয়ে আসছে। তবে দীর্ঘদিন এলাকা শান্ত রয়েছে। কোন সমস্যা হয়নি। তোফাজ্জেল হোসেন এলাকার আলী হোসেন গ্র“পের সমর্থক। এক সাথে তারা সামাজিক দল করেন।
আলী হোসেন আলাউদ্দিন আহম্মেদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক। কথা হলে আলী হোসেন বলেন, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে ১০ থেকে ১৫ জন তার উপরে হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার হাতের কবজি কেটে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কি কারণে তার উপর এই হামলা করা হয়েছে তা আমরা এখনো পর্যন্ত জানতে পারিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক মেম্বার জানান,‘ তোফাজ্জেল শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। এলাকার বাড়িতে তার এক স্ত্রী রয়েছে, সেই স্ত্রীর ঘরে ছেলে-মেয়ে রয়েছে। শহরে থাকেন আরেক স্ত্রীকে নিয়ে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পড়া এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন। এ তিন বিয়ের পর সম্প্রতি শালঘর মধুয়ার এক মেয়ে বিয়ে হয়েছিলো খোকসা উপজেলায়। ওই গৃহবুধুর দুটি সন্তান আছে। এ অবস্থায় কিছুদিন আগে তোফাজ্জেল তাকে নিয়ে চলে আসে। এ নিয়ে ঝামেলা চলছিলো। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলা হতে পারে বলে এলাকার মানুষ মনে করছেন। তবে আসল কারন কেউ জানে না।’
৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আরব আলী জানান , আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা তোফাজ্জেল। এলাকায় তার সাথে কারো ঝামেলা চলছিলো এমন ঘটনা আমার জানা নেই। তবে খোকসার এক গৃহবধুকে সে বিয়ে করেছে বলে শুনেছি। তার জ্ঞান নেই, জ্ঞান ফিরলে সে ভালো বলতে পারবে কারা তার ওপর হামলা করেছে। তিনি বলেন, ‘তার ডান হাতের একটি অংশ ব্রীজের ওপর পড়ে ছিলো। এছাড়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপানো হয়েছে সারা শরীরে।’
তোফাজ্জেল বিশ্বাসের কলেজের অধ্যক্ষ হামিদুল ইসলাম বলেন, কলেজে তার সাথে কারো বিরোধ ছিলো বলে আমার জানা নেই। আমরাও ধারনা করতে পারছি না কে বা কারা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। তিনি এখন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আমরা তার সুস্থতা কামনা করছি ও ঘটনার নিন্দা জানায়।’
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে আনার পর তোফাজ্জেল হোসেনকে অস্ত্রপচার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক ঘন্টা ধরে তারা চিকিৎসা চলে। হাসপাতালের সার্জন ডা: মনিরুজ্জামান টিপু বলেন, তার কাটা হাতের অংশ পায়নি। জখম অবস্থা হাসপাতালে আনা হয়। প্রচুর রক্তক্ষরন হয়েছে। তার পিঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপানোর বেশ কিছু জখম রয়েছে। ওই চিকিৎসক বলেন, শিক্ষকের ডান হাতের বড় একটি অংশ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।’
ঘটনার পর এলাকা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ডিবির একটি টিম রয়েছে। এলাকায় থাকা পুলিশের একটি সুত্র জানায়, একাধিক বিয়ে করাসহ নানা বিষয় নিয়ে তোফাজ্জেলের সাথে কয়েকজনের বিরোধ চলছিলো। এক নারীর জমি নিয়ে কয়েকজনের সাথে বিরোধ তৈরি হয়। তোফাজ্জেল ওই নারীর পক্ষ নিয়ে তাদের সাথে ঝামেলা করে। এই নিয়েও উত্তেজনা চলছিলো ভেতরে ভেতরে। তবে হামলাটি পরিকল্পিত। একাধিক স্থানে হামলা হয়েছে। হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে তার ওপর হামলা করা হয়েছে।
তোফাজ্জেলের বাড়ি কুমারখালী উপজেলায় হলেও ঘটনা ঘটেছে সদরের মধ্যে। দুই উপজেলার পুলিশই কাজ করছে বিষয়টি নিয়ে।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, পূর্ব বিরোধের জেরে কেউ এমন হামলা করতে পারে বলে আমরা ধারনা করছি। বেশ কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। পুলিশ কাজ করছে। আশা করছি দ্রুত হামলাকারিদের চিহিৃত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম বলেন, কে বা কারা হামলা করেছে তার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ। তার সাথে কারও ঝামেলা ছিলো কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। পরিবারের সাথে আমরা কথা বলেছি, পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থাও কাজ করছে।