কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার মহিষাডোরা এলাকায় দফাদার ফিলিং স্টেশনে আগুন লেগে সাহাজুল (৩০) ও স্কুলছাত্র বিজয় (১৫) নামে দু’জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে অগ্নিকান্ড ঘটে তাদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে রিমন (১৪), রজিব (২৬) ও বিদ্যুৎ (২৩) ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনষ্টিটিউিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরাও শঙ্কামুক্ত নয় বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, দৌলতপুর উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়নের দিঘলকান্দি গ্রামের সাহাজুদ্দিন। পেশায় তিনি খুচরা মুদি ব্যবসায়ী। মুদি ব্যবসার সাথে তিনি পেট্রোলও বিক্রয় করে থাকেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তিনি ছেলে সাহাজুল, একই এলাকার স্বামী পরিত্যক্তা দরিদ্র নারী আকালী খাতুনের ছেলে রিমন (১৩) ও তৌহিদুল ইসলামের ছেলে অষ্টম শ্রেণীর স্কুল ছাত্র বিজয়কে সঙ্গে নিয়ে ভ্যান যোগে দফাদার ফিলিং স্টেশনে পেট্রোল কিনতে যান। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে ফিলিং স্টেশনের তেল সরবরাহকারী কর্মচারী রাজিব, বিদ্যুৎ ও রনি মাটির নীচে থাকা তেলের ট্যাংক থেকে পেট্রোল উত্তোলন করে ড্রামে ভরছিলেন। এসময় পূর্ব পরিচিত হওয়ার কারণে সাহাজুল তার সঙ্গে থাকা বিজয় ও রিমনকে সাথে তেল উত্তোলনস্থলে গেলে হঠাৎ আগুন লেগে বিষ্ফোরণ ঘটে। এতে সাহাজুল ও বিজয় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হোন রিমন, রাজিব, বিদ্যুৎ ও রনি। এদের মধ্যে রনি গুরুতর আহত না হওয়ায় স্থানীয় একটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। বাঁকী ৩জন রিমন, রাজিব, বিদ্যুৎকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। তবে ধারনা করা হচ্ছে সাহাজুলের সঙ্গে থাকা কারও হাতে জলন্ত সিগারেট ছিল। সিগারেটের আগুন থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। অগ্নিকান্ডের পর বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারে বিষ্ফোরণ ঘটে। বৈদ্যুতিক শটসার্কিট হলে আগুন ধরার আগেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত, এমন মন্তব্য করেছেন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা। দফাদার ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার আব্দুল মান্নান জানান, অগ্নিকান্ডে দগ্ধ হয়েছেন ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী দৌলতপুর উপজেলার আমদহ গ্রামের রাজিব, সোনাইকুন্ডি গ্রামের বিদ্যুৎ, ভেড়ামারা উপজেলার পরানখালী গ্রামের রনি (২৭) এবং ফিলিং স্টেশনে আসা দৌলতপুরের দিঘলকান্দি গ্রামের রিমন। এদের মধ্যে পরানখালী গ্রামের রনি বাদে বাঁকী ৩জন ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দফাদার ফিলিং স্টেশনের মালিক আফানুজ্জামান জুয়েল জানান, বাইরে থাকায় আমি এখনও ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারিনি। বৈদ্যুতিক শটসার্কিট বা কিভাবে আগুন লেগেছে তা ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তদন্ত করছেন। আহতরা ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল শনিবার দুপুর ২টার দিকে দিঘলকান্দি কবরস্থানে অগ্নিকান্ডে নিহত সাহাজুল ও বিজয়ের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। দাফনকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা রিফাইতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জামিরুল ইসলাম বাবু জানান, সাহাজুদ্দিনের সঙ্গে তার ছেলে সাহাজুল, বিজয় ও রিমন দফাদার ফিলিং স্টেশনে পেট্রোল কিনতে গিয়েছিল। সাহাজুল ও স্কুলছাত্র বিজয় আকষ্মিকভাবে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ায় এলাকাবাসী শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছে। দরিদ্র স্বামী পরিত্যক্তা নারী আকালী খাতুনের ছেলে রিমন ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছে। উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়নের কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কের পাশে মহিষাডোরা এলাকার দফাদার ফিলিং স্টেশনে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ভেড়ামারা ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।