২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব তুলেছে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি)। একই সাথে নারী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী করদাতাদের করমুক্ত আয় সীমা ৫ লাখ টাকা করারও প্রস্তাব তাদের। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আইসিএমএবির প্রেসিডেন্ট মামুনুর রশিদ। গতকাল শনিবার রাজধানীর ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরামের (আইআরএফ) মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা আগের বছরের মতো ৩ লাখ টাকাই রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির বার্ষিক আয় ৩ লাখ টাকার বেশি হলে তাকে আয়কর দিতে হবে। ৩ লাখ বা এর নিচে আয় হলে কর দিতে হবে না।
আইসিএমএবি পক্ষ থেকে দেশের হিসাব ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার জন্য ফিনান্সিয়াল অডিটের পাশাপাশি কস্ট অডিট বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। কস্ট অব গুডস সোল্ড স্টেটমেন্ট যদি কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টদের মাধ্যমে অডিট করা যায় তবে কস্ট ইফিসিয়েন্সি বাড়বে, খরচ কমবে এতে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ট্যাক্সেস আপিলাত ট্রাইবুনালের প্রতি বেঞ্চে একজন করে বিচার বিভাগীয় সদস্য ও আইসিএমএবির সদস্য নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সংগঠনের পক্ষ থেকে অ্যাডভাইজরি, কনসালটেন্সি প্রফেশনাল, টেকনিক্যাল ইত্যাদি সার্ভিস ফি থেকে উৎসে আয়কর কর্তনকে চূড়ান্ত কর হিসেবে গণ্য করা এবং সিনিয়র নাগরিক যাদের আয়ের উৎস শুধুমাত্র পেনশন এবং সঞ্চয়পত্রের সুদ তাদের রিটার্ন দেওয়া থেকে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন পুনর্বিবেচনার দাবি করা হয়। এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা, শিল্পায়ন, ব্যবসা প্রসার ও পুঁজি বাজার উন্নয়ন, গার্মেন্টস সেক্টরে বিশেষ সুবিধা প্রদান, পরিবহন শিল্প এবং বিমান পরিবহন শিল্পের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদানসহ এ খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য প্রতিযোগী দেশগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে কর্পোরেট ট্যাক্স পুনর্গঠন এবং বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আনতে ধারাবাহিক কর নীতি ও ব্যক্তিগত করদাতাদের করের হার পুনর্গঠন করারও প্রয়োজন, যাতে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠি স্বস্তি পায়। এনবিআরের ডিজিটাইজেশন, ট্যাক্স রিফর্ম, মহিলা উদ্যোক্তা এবং ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের প্রনোদনা,ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পে আরও প্রনোদনা প্রদান, স্বাস্থ্য প্রণোদনা, স্বাস্থ্য ইনসুরেন্স, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ভ্যাট ও ট্যাক্স-এর হার সরল করা প্রয়োজন বলে মনে করেন আইসিএমএবি।
সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মামুনুর রশিদ বলেন, কর কাঠামোতে স্টার্টআপ সেন্ড বক্স একটি ভালো উদ্যোগ, এখানে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সব ধরনের উদ্যোগকে সমান সুযোগ দেওয়া উচিত। যাতায়াত খরচ সকলের অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের জন্য যাতায়াত ভাতায় করমুক্ত সীমা ৩০ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৬০ হাজার করা উচিত। বিনিয়োগের মাধ্যমে কর রেয়াত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগের খাতগুলো বৃদ্ধি করা উচিত। শেয়ার মার্কেট সকলে বোঝেন না, তাই ডিপিএস সীমা ৬০ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে ১ লাখ ২০ হাজার করা উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ব্যক্তি খাতে লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর্তনকৃত করকে চূড়ান্ত কর হিসেবে ধার্য করার ব্যবস্থা করা উচিত। কারণ, এই খাতে আয়ের ওপর কর কর্তনের প্রমাণ সংগ্রহ করা অনেক সময়েই সম্ভব হয় না এবং কষ্ট সাধ্য ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হয়, মাঠ পর্যায়ে করদাতাকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এ বছর মূসক আইনে অনেক বাস্তবমুখী এবং ব্যবসাবান্ধব করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তারপরও ব্যবসা সহজ, স্বচ্ছতা ও রাজস্ব বৃদ্ধি করার স্বার্থে আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাউথ এশিয়া ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টসের (সাফা) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট এ কে এম দেলোয়ার হোসেন, আইসিএমএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট মনিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক এ কে এম কামরুজ্জামান ও ট্রেজারার মো. আলী হায়দার চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিএমএবির সদস্য ও শফিকুল আলম অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের সিইও মো. শফিকুল আলম।