বিশ্ব এক চরম খাদ্য সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাই এই সাবধানবার্তা দিয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম। এবার এই সংকটের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করলো যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির দাবি, রাশিয়া খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা স্থবির করে দিয়ে বিশ্বে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করছে। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এভাবেই আঙ্গুল তোলে ওয়াশিংটন। অপরদিকে চলমান সংকটের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা দায়ী করেছে মস্কো। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান। যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেনে যেভাবে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে তাতে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। এর আগে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ সাবধান করে জানিয়েছিলেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা না উঠলে রাশিয়াও খাদ্যের শিপমেন্ট ছাড়বে না
যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার এই মনোভাবের দিকেই আঙুল তোলে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে। এতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, রাশিয়াকে অবশ্যই ইউক্রেনের বন্দরগুলোর ওপর থেকে অবরোধ তুলে নিতে হবে। কৃষ্ণ সাগরের তীরে ইউক্রেনের যেসব বন্দর রয়েছে তা দিয়ে খাদ্য এবং সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে মস্কোর ওপর চাপ দেন তিনি।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাশিয়ার সরকার খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের ধারণা, যুদ্ধে তাদের উদ্দেশ্য হাসিলে এটি কাজ করবে। কিন্তু এভাবে ইউক্রেনীয় জনগণের মনোবল ভেঙে দেয়া যাবে না। তাই যেসব দেশ রাশিয়ার আগ্রাসনের সমালোচনা করছে, সেসব দেশে খাদ্য ও সার রপ্তানি বন্ধের হুমকি থেকে সরে আসা উচিত। ইউক্রেনীয়সহ বিশ্বের লাখো মানুষের জন্য খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা আক্ষরিকভাবেই অবরুদ্ধ করে রেখেছে রুশ সেনাবাহিনী।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই অভিযোগের জবাবে পাল্টা যুক্তরাষ্ট্রকেই খাদ্য সংকটের জন্য দায়ী করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া। তিনি বলেন, বিশ্বের সব দুর্দশার জন্য তার দেশকে দোষারোপ করা হচ্ছে। অথচ বিশ্ব দীর্ঘদিন ধরেই খাদ্য সংকটে ভুগছে। এই সংকটের পেছনে পশ্চিমা বাজারও দায়ী। তাছাড়া ইউক্রেন নিজেই তার বন্দরগুলো অবরোধ করে রেখেছে। কৃষ্ণসাগর উপকূলে তারা মাইন পুঁতে রেখেছে। বন্দরে আটকা পড়ে থাকা বেশকিছু বিদেশি পণ্যবাহী জাহাজ ছেড়ে দিতে শিপিং কোম্পানিগুলোকে সহায়তা করছে না ইউক্রেন। বক্তব্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেন ভাসিলি। বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে।
উল্লেখ্য, রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয় দেশই বিশ্বের অন্যতম প্রধান দুই খাদ্য উৎপাদনকারী দেশ। দেশ দুটি বিশ্বের মোট গমের ৩০ শতাংশ উৎপাদন করে। সানফ্লাওয়ার তেলের ৬৯ শতাংশ আসে এই দুই দেশ থেকে। তবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং রাশিয়ার অবরোধে এখন এ অঞ্চল থেকে খাদ্য সরবরাহ পদ্ধতি অচল হয়ে আছে। সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট মেদভেদেভ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পশ্চিম যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ না তুলে নেয় তাহলে রাশিয়াও খাদ্য রপ্তানি বন্ধ রাখবে। আমাদের উপরে কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। অথচ তারা এখন আমাদের খাদ্য চাইছে। কিন্তু এভাবে সবকিছু কাজ করে না, রাশিয়া মোটেও নির্বোধ নয়।