বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, সঠিকভাবে ভোট গণনা এবং নির্বাচনের যথাযথ ফলাফল প্রকাশের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি সব নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, সঠিকভাবে ভোট গণনা এবং নির্বাচনের ফলাফল সবার দ্বারা সমর্থিত হওয়ার বিষয়গুলোকেও গুরুত্ব দিতে হবে। গতকাল রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং ফ্রেডরিক-এবার্ট-স্টিফটুং বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে তিনি এ পরামর্শ দেন।
হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন বলেন, এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের পরও যুক্তরাজ্য তাদের শুল্কমুক্ত বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখবে। ব্রিটিশ সরকার বিদ্যমান জিএসপি ব্যবস্থার স্থলে ‘ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিম’ নামে একটি নতুন স্কিম ঘোষণা করেছে। নতুন এ স্কিম অনুযায়ী এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ পণ্য শুল্ক সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হবে।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন তার বক্তব্যে বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রতিরক্ষা নীতি, সমুদ্র নীতি, রোহিঙ্গা সমস্যা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেন। আলোচনায় তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, গণতন্ত্রকে সুসংহতকরণ করার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক গুণগত মান বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে প্রথমবারের মতো প্রতিরক্ষা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা এই দুই রাষ্ট্রের সম্পর্ককে আরো জোরদার করেছে।
বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং এর সঠিক প্রয়োগ, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কট প্রসঙ্গে ডিকসন বলেন, যুক্তরাজ্য নিরলসভাবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, আর্থিক সহায়তা, শিক্ষার সুযোগ প্রদানসহ নানা বিষয়ে তারা কাজ করছে। এছাড়াও জাতিসংঘের নিরাপত্তা বিভাগে এটি নিয়ে তারা আলোচনা করছেন। আফগানিস্তান, ইয়েমেন এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সমস্যা প্রকট হওয়ার কারণে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে অর্থায়নে কিছুটা সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও তারা এ নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কট বাংলাদেশের আরএমজি সেক্টরে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কট যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প রফতানিতে নেতিবাচক কোনো প্রভাব ফেলেনি। এলডিসি থেকে টেকসই উত্তরণের জন্য যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে ইচ্ছুক বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশ যুক্তরাজ্য থেকে বড় একটি ক্লাইমেট ফান্ড পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে ব্রিটিশ হাইকমিশনার এক্ষেত্রে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ, গ্রীন এনার্জি, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
বাংলাদেশে নারীদের ক্ষমতায়ন এবং সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য তিনি মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কেবলমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর জোর না দিয়ে তিনি মানব উন্নয়নের ওপর কাজ করতে বলেন।
বিজিএমইএ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের ৩য় বৃহত্তম রফতানি গন্তব্যস্থল। ২০২১-২২ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে ৪৪৯ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে এবং গত কয়েক দশক ধরেই দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ-এর চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর এ চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান এবং ফ্রেডরিখ-এবার্ট-স্টিফটাং বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সাধন কুমার দাস প্রমুখ।