আকাশি-সাদা জার্সি মানেই আর্জেন্টিনা। ঐতিহ্যবাহী এই জার্সির মাহাত্ম্য ফুটবলার থেকে শুরু করে সমর্থক—সবার কাছেই অন্য রকম এক আবেগ।
আর্জেন্টিনার জার্সিকে তুলনা করা চলে আকাশের সঙ্গে। আকাশের ‘আকাশি’আর মেঘের ভেলার ‘সাদা’রং। এ দুইয়ে মিলেই আর্জেন্টিনার ট্রেডমার্ক জার্সি।
আর্জেন্টিনার জার্সি প্রস্তুত করে থাকে জার্মানির অ্যাডিডাস। মাঝের তিন বছর (১৯৯৯-২০০১) বাদ দিয়ে বিশ্ব বিখ্যাত এই ব্র্যান্ডের জার্সি গায়ে দিয়ে সেই ১৯৯০ বিশ্বকাপ থেকে এখন পর্যন্ত খেলে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। কাতার বিশ্বকাপের জার্সি বানানো হয়েছে অনেকটা ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের জার্সির ঢঙে। এবারের জার্সিতেও গলার কাছে কালো বর্ডার দেয়া।
১৯৩০ বিশ্বকাপ থেকেই আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের গায়ে শোভা পেত এই আকাশি-সাদা জার্সি। তবে তখন জার্সির সঙ্গে শোভা পেত ঘন নীল রঙের শর্টস। ১৯৭৮ বিশ্বকাপের পর থেকে গাঢ় নীল শর্টস বাদ দিয়ে কালো শর্টস পরে খেলা শুরু করেন আর্জেন্টাইন ফুটবলাররা।
১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইনদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল তাপমাত্রা আর আর্দ্রতা। আকাশি-সাদা ডোরাকাটা মূল জার্সিতে খুব একটা সমস্যা নেই। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তো আর সেই জার্সিতে নামা যাবে না, তাই পরতে হবে গাঢ় নীল রঙের দ্বিতীয় জার্সি। কিন্তু তা নিয়েই বিপত্তি।
অতিরিক্ত গরমের মধ্যে সে জার্সি গায়ে চাপানোই কষ্টকর হয়ে ওঠে। পাতলা কাপড়ের নতুন জার্সি বানানোরও হাতে সময় ছিল না। কোচ কার্লোস বিলার্দো সহকারীকে পাঠালেন মেক্সিকো সিটির দোকান ঘুরে যদি কোনো নীল রঙের একটু আরামদায়ক কাপড়ের জার্সি পাওয়া যায়। সহকারী কোচ রুবেন মোশেল্লা হাজির হলেন অপেক্ষাকৃত দুটি পাতলা জার্সি নিয়ে। সেখান থেকে অধিনায়ক দিয়েগো ম্যারাডোনা একটি হাতে নিয়ে বললেন, ‘এটা গায়ে জড়িয়েই আমরা ইংল্যান্ডকে হারাব।
সেই দোকান থেকেই আরও ৩৮টি ওই রকম জার্সি কিনে আনা হলো। তড়িঘড়ি করে প্রতিটিতে সেলাই করে লাগানো হলো আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ব্যাজ। কয়েক ঘণ্টা পরে সেই জার্সি গায়েই মাঠে নামল আর্জেন্টিনা দল। আর সেদিনের সেই কোয়ার্টার ফাইনালে কী হয়েছিল তা তো আর বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই! ম্যারাডোনার হ্যান্ড অব গড আর গোল অব দ্য সেঞ্চুরি—দুটো গোলেই ইতিহাস হয়ে আছে মেক্সিকোর গলি-ঘুপচি ঘুরে বের করে আনা সেই গাঢ় নীল রঙের পাতলা জার্সি।