1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
অসৎ সিন্ডিকেট | Bastob Chitro24
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৮ অপরাহ্ন

অসৎ সিন্ডিকেট

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২২

আগে থেকেই বেসামাল ছিল নিত্যপণ্যের বাজার। হঠাৎ জ্বালানি তেলের রেকর্ড পরিমাণ দাম বাড়ায় বাড়তি বাজারের আগুনে ঘি ঢেলে দেয় চক্রটি। দাম বাড়ার অজুহাতে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় অনেক নিত্যপণ্যের দাম। তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে এই মূল্যবৃদ্ধির কোনো মিল নেই। বলা হচ্ছে বাজারে বিদ্যমান অসৎ সিন্ডিকেটের কারণে অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের এই কারসাজির বিষয়টি গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও স্বীকার করেছেন। বলেছেন, তেলের দাম বাড়ার পর ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি সুযোগ নিয়েছেন। চাল, ডিম, চিনি, ডাল, পিয়াজ, কাঁচামরিচ, ভোজ্য তেল, শিশুখাদ্য ও মাছ-মাংসের অস্বাভাবিক দামের পেছনে সিন্ডিকেটের কারসাজি দায়ী বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। অনেক নির্দিষ্ট আয়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষেরা এসব খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। বাজেটের মধ্যে থাকতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাতেও খরচ কমানোর পরিকল্পনা করছেন তারা।

অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে টানা দুই মাসের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন পণ্যের দরপতন অব্যাহত রয়েছে। বাজার তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের নভেম্বর থেকে জ্বালানি তেলের ৭৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধি এবং চরম ডলার সংকটের প্রেক্ষাপটে গত ৮ মাসে নিত্যপণ্যের দাম অন্তত ৪০ শতাংশ বেড়েছে। চাল, ডাল, ভোজ্য তেলের মতো রান্নাবান্নায় আবশ্যক পণ্যের পাশাপাশি সাবান, টুথপেস্ট, প্রসাধনী ও বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্যের দাম আরও বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত সপ্তাহের তালিকা ধরে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোটা চালের দাম ১৪%, মসুর ডাল ২৩%, খোলা সয়াবিন ১৯%, ডিম ৪৫%, ব্রয়লার মুরগি ১৮%, আটা এক প্যাকেট ৩৮%, চিনি ১৩%, শুকনা মরিচ ৭৫%, আলু ২০%, হলুদ ১৩% এবং দেশি আদার দাম ১৭ শতাংশ বেড়েছে। টিসিবি’র তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ৫ই আগস্ট তেলের দাম বৃদ্ধির পর গত দুই সপ্তাহের মধ্যে ডিম ৩১%, ব্রয়লার মুরগি ২৯%, পিয়াজ ২৫%, আটা ১০%, চিনি ১০%, শুকনা মরিচ ৯% ও মোটা চালের দাম ৪ শতাংশ বেড়েছে। তবে বাজারে এসব পণ্যের প্রকৃত দাম টিসিবি’র দেয়া হিসাবের চেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

জ্বালানি তেলে দাম বৃদ্ধির অজুহাতে চালের বাজারে চালবাজি শুরু হয়েছে। অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে দাম। যেখানে প্রতি কেজি চালে পরিবহন খরচ সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা; সেখানে ঢাকার মোকামে চালের দাম কেজিতে ৩-৫ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ভোক্তা আর খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে যারা সিন্ডিকেট করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে। তাহলে এই দাম অনেক কমে যাবে। রাজারবাগ বাজারের বিসমিল্লাহ রাইস এজেন্সির পাইকার মামুন হোসেন। চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে এক ট্রাক চালের ফরমায়েস দিয়েছেন। ট্রাকে ৫০ কেজি ওজনের ২৮০ বস্তা চাল ঢাকায় আসবে। এতে তার ট্রাক ভাড়া খরচ হবে ১৬ হাজার টাকা। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির আগে তার এই পরিবহন খরচ ছিল ১৩ হাজার টাকা। সে হিসেবে ২৮০ বস্তা চালে তার ৩ হাজার টাকা পরিবহন খরচ বেড়েছে, যা বস্তার হিসাবে ১১ টাকা আর কেজির হিসাবে মাত্র ২২ পয়সা। এদিকে রাজধানীর মুগদা এলাকার মিতালি রাইস এজেন্সির মো. সবুজ জানান, কুষ্টিয়া থেকে এক ট্রাক চাল ঢাকায় আনতে সর্বোচ্চ পরিবহন ব্যয় হয় ১৭ হাজার টাকা। এই ট্রাকে ২৬০-২৮০ বস্তা চাল আনা হয়। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ৪-৫ হাজার টাকা পরিবহন খরচ বেড়েছে। এখন ব্যয় হয় ২২-২৩ হাজার টাকা। সে হিসাবে বস্তায় খরচ বেড়েছে ১৫-১৭ টাকা আর কেজির হিসাবে ৩০-৩৫ পয়সা।

অথচ বাজারে চালের দাম বেড়েছে ৭-৮ টাকা পর্যন্ত। চালের এই দাম বৃদ্ধিতে বিস্মিত খোদ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তার মতে, ব্যবসায়ীরা জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ একবারে লাফ দিয়ে নিয়েছেন। যে পরিমাণ বাড়ার কথা, তার থেকে অনেক বেশি সুযোগ নিয়েছে- এটা সত্যি কথা। টিপু মুনশি বলেন, আমাদের কাছে হিসাব আছে। ধরেন তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচের জন্য চাল প্রতি কেজিতে ৫০ পয়সা করে বাড়তে পারে। সেখানে ব্যবসায়ীরা ৪ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এখানে কোনো লজিক আছে? নাই। তার মানে সুযোগটা নিয়ে নিয়েছে। মাত্র ৯ দিনের ব্যবধানে দেশে পাম তেলের দাম ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। হঠাৎ করে এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে আমদানিকারকরা জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন। দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পাম তেলের দাম মণপ্রতি (৪০.৯০ লিটার) দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রোববার প্রতিমণ পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার টাকা দামে, যা জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেও (১ থেকে ৫ই জুলাই পর্যন্ত) বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ টাকায়। ভোজ্য তেলের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমেছে, আবার ডলারের দাম বেড়েছে। তবে শিগগিরই তেলের দাম পুনঃনির্ধারণ করা হবে। একই অজুহাতে চালের মতো ডিমের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্র। রাজধানীর অলিগলির খুচরা বাজারগুলোতে এক হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৬ টাকায়। ফলে চড়া দামের বর্তমান বাজারে ভোক্তাকে একটি ডিম কিনতেই খরচ করতে হচ্ছে সাড়ে ১৩ থেকে ১৪ টাকা।

এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যদি সত্যিই ডিম আমদানি করলে দাম কমবে, তাহলে আমরা ডিম আমদানির প্রক্রিয়ায় যাবো। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, বাণিজ্যমন্ত্রী এ ধরনের কথা বললে তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে কে? নিয়ন্ত্রণ করা কার দায়িত্ব? চালের মিলার, পাইকার আর খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, জ্বালানি তেলের জন্য চালের দাম এত বাড়ার কথা নয়। এখানে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কলকাঠি নাড়াচ্ছেন যার কারণে চালের বাজার অস্থির হয়ে গেছে। পাইকারদের থেকে বাড়তি দামে চাল কিনেই খুচরা বিক্রেতাদের বিক্রি করতে হয়। তবে পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম ছাড়াও এখন ধানের দাম বেড়েছে। বিদ্যুতের কারণে প্রোডাকশন কম হচ্ছে। তাছাড়া মিলালরাও সিন্ডিকেট করছে। বড় বড় মিলে আর আড়তে অভিযান চালালে চালের দাম নেমে যাবে। মিলাররা বলছেন, এখন ধানের সংকট রয়েছে। এ জন্য ধানের দাম বেড়েছে। তাই চালের দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কিন্তু মিলে যে অনুপাতে দাম বেড়েছে তার চেয়ে বেশি বেড়েছে খুচরা পর্যায়ে। নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোদ বরন সাহা মানবজমিনকে বলেন, জ্বালানি তেলের জন্য চালের দাম সর্বোচ্চ ২০-২৫ পয়সা বাড়তে পারে। ঢাকার মোকামে এই অজুহাত দিয়ে চালের দাম ২-৩ টাকার বেশি বাড়ায়। খুচরায় যেভাবে চালের দাম বেড়েছে আমাদের মিলে সেভাবে বাড়েনি। ১৫ দিনের ব্যবধানে মিলে সর্বোচ্চ ৪ টাকা বেড়েছে। ১৫ দিন আগে মিলে সরু চাল (মিনিকেট) কেজিতে ৬৫-৬৬ টাকা বিক্রি হতো এখন তা বিক্রি হয় ৬৮-৬৯ টাকা। এর থেকে খুচরা পর্যায়ে ৭২-৭৩ টাকার বেশি হওয়ার কথা না। কিন্তু খুচরায় আরও বেশি দামে চাল বিক্রি হয়। ওদিকে ভারত থেকে আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও দিনাজপুরের হিলি বন্দরে বেড়েছে পিয়াজের দাম। পাঁচ দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ৬-৮ টাকা। ডলারের কারণে দাম ওঠানামা করছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বুধবার হিলির পিয়াজ বাজারে পাঁচ দিন আগে পাইকারি যে পিয়াজ বিক্রি হয়েছিল ২২ টাকা কেজি দরে, গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ২৮ টাকা দরে। খুচরা ব্যবসায়ীরা তা ৩০-৩২ টাকা দরে বিক্রি করছেন। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় কারণে অকারণে। কোনো একটি অজুহাত পেলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যায়। এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বমুখিতা ঠেকাতে বাজার মনিটরিং জোরদার করার পাশাপাশি খাদ্যে ভর্তুকি বাড়ানো উচিত। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সুযোগ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা: বাণিজ্যমন্ত্রী: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি সুযোগ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা সুযোগ যখন নেয়, সবাই একবারে লাফ দিয়ে নেয়। কিন্তু আমরা তো এসব একবারে শেষ করতে পারবো না। তাদের সঙ্গে বসে ঠিক করতে হবে। আমাদের একটু সময় দেন। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, হঠাৎ করে সুযোগ কেউ কেউ নিয়েছে। যে পরিমাণ বাড়ার কথা, তার থেকে অনেক বেশি সুযোগ নিয়েছে- এটা সত্যি কথা। আমরা চেষ্টা করছি। মন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে হিসাব আছে। ধরেন তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচের জন্য চাল প্রতি কেজিতে ৫০ পয়সা করে বাড়তে পারে। সেখানে ব্যবসায়ীরা ৪ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এখানে কোনো লজিক আছে? নাই। তার মানে সুযোগটা নিয়ে নিয়েছে।

আমাদের একটু সময় দেন। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় মানুষের কষ্টের কথা স্বীকার করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের যেটা দেখা দরকার, কষ্টটা লাঘব করার জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী কী চেষ্টা করছেন। আমি সচিবকে বলেছি, যে যে মন্ত্রণালয়ে আছেন, সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। কবে নাগাদ বাজার স্বাভাবিক হতে পারে এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, সেটা বলা যাবে না। তবে আমরা খুব আশাবাদী, অক্টোবরের মধ্যে কিছুটা কমে আসবে। কতোগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে, আমি জানি না পুতিন সাহেব কবে যুদ্ধ বন্ধ করবেন। সেটা তো আমার হিসাবের মধ্যে নেই। ভোজ্য তেলের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমেছে, আবার ডলারের দাম বেড়েছে। এ দুটিকে বিবেচনায় নিয়ে একটি দাম নির্ধারণ করতে হবে। আমরা সেই চেষ্টাই করছি। খুব শিগগিরই তেলের দাম পুনঃনির্ধারণ করা হবে। একটি ডিমের দাম ১৫ টাকায় পৌঁছেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিম আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ডিম আমদানি করতে তো একটু সময় লাগবে। আমরা দেখি, যদি এমনটাই হয় যে, সত্যি ডিম আমদানি করলে এটা কমবে, তাহলে আমরা ডিম আমদানির প্রক্রিয়ায় যাবো।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি