প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আরও সচল ও গতিশীল করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দেশের জনগণের সর্বত্র চলাচলের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আরও ত্বরান্বিত করার পদক্ষেপ নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার সকালে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে একটি ব্রডগেজ ও একটি মিটারগেজ কোচে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’ এবং উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সংগৃহীত ৩০টি মিটারগেজ ও ১৬টি ব্রডগেজ লোকামেটিভের (ইঞ্জিন) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে রাজধানীর কমলাপুরে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
সরকারপ্রধান বলেন, প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড চালু হয়ে গেছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে আমরা উৎক্ষেপণ করেছি, যার ফলে অনলাইনে কেনা-বেচা ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি সবকিছুই আমরা করতে পারছি। অর্থাৎ প্রযুক্তির মাধ্যমেও আমাদের যোগাযোগ আজ উন্নত হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের সেবা করাই আমাদের কাজ। বিআরটিসিকে অলাভজনক আখ্যা দিয়ে বিএনপি সরকার একবার বন্ধ করে দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান কতটুকু লাভ করল এবং কতটুকু লাভ করল না, সেটার থেকে বড় কথা মানুষের সেবা কতটুকু দিতে পারল। মানুষ কতটুকু সেবা পেল। তাদের জীবনমান কতটুকু সহজ হলো, সেটাই সবচেয়ে বড় কথা।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের সবকিছুই যে লাভজনক হবে তা কিন্তু নয়। তবে লাভজনক করা যায়। আমরা বিআরটিসিকেও যেমন লাভজনক করেছি, তেমনি বিএনপির বন্ধ করে দেওয়া রেলকে চালু করে এখানেও প্রমাণ করেছি এটাকেও লাভজনক করা যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর ও বাংলাদেশ রেলওয়ের রোলিং স্টকের ওপর অনুষ্ঠানে পৃথক দুটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
বরিশাল এবং পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর পর্যন্ত সরকার রেলপথ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু পার হয়ে ভাঙ্গা থেকে একদিকে যেমন যশোর হয়ে খুলনা পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। অপরদিকে সোজা বরিশাল হয়ে একেবারে পায়রা নতুন নৌবন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর ফলে জলবায়ুর অভিঘাতে ঝুঁকিপূর্ণ দক্ষিণাঞ্চলের এই জেলাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থার যেমন উন্নয়ন হবে, তেমনি বন্যার হাত থেকেও অনেকাংশে মুক্তি পাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে এটাই আমাদের লক্ষ্য। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা আমাদের স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন। আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। কাজেই এই মর্যাদা ধরে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
বাঁশি বাজিয়ে ও পতাকা উড়িয়ে নতুন ৩০টি মিটারগেজ ও ১৬টি ব্রডগেজ লোকোমেটিভের (ইঞ্জিন) উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ইঞ্জিনগুলো দেশবাসীর জন্য একটি উপহার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ঈদের আগে ট্রেন চলাচল বাড়াবে এবং নতুন এই পরিষেবাগুলো যুক্ত হওয়ার ফলে রেলসেবা আরও সুন্দর ও উন্নত হবে। ঈদকে সামনে রেখে মানুষ সুন্দরভাবে ঘরে ফিরতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’ নামে যেটা করা হয়েছে, আমি মনে করি জাতির পিতার যে অবদান বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বা বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য সেটা আমাদের দেশের মানুষ আরও ভালোভাবে জানতে পারবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর তৈরির মূল ভূমিকায় ছিলেন রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী। তিনি জানান, রেলের ইতিহাসে প্রথম ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটি ইতোমধ্যে দর্শনার্থীদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। একটি ব্রডগেজ ও একটি মিটারগেজ কোচকে সর্বোচ্চ প্রযুক্তিতে সাজানো হয়েছে। জাদুঘরটিতে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, সংগ্রামী ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে।