তবে বিদ্যুৎ খাতের কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় ট্রান্সমিশন অবকাঠামো-সম্পর্কিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন অনেকটা বাকি থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।তবে বিদ্যুৎ খাতের কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় ট্রান্সমিশন অবকাঠামো-সম্পর্কিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন অনেকটা বাকি থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।২৪০০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের প্রথম ১২০০ ইউনিট চালুর মাত্র ১০ মাস আগে এসে কর্মকর্তারা এখন প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করার জন্য আরো এক বছর বা আরো কিছুটা বেশি সময় প্রয়োজন বলে মনে করছেন।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (বিএইসি) এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) উভয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছরের জুলাইয়ের মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শেষ হলেও প্ল্যান্টে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সারাদেশে গৃহস্থালি বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সঞ্চালন লাইনের অভাবে এটি কাজে লাগবে না।
বিএইসি-কে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।অন্যদিকে, পিজিসিবি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ অপসারণ ও সঞ্চালনের কাজ করবে।এই প্রথম তারা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের সঞ্চালনের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে।
পিজিসিবি-র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘আরএনপিপি প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করতে আমরা তিনটি বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি।’
তিনি যে তিনটি চ্যালেঞ্জের উল্লেখ করেছেন সেগুলো হলো- নদী ক্রসিংলাইন নির্মাণ, সাবস্টেশন স্থাপন ও ফ্রিকোয়েন্সি সমন্বয়।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের জন্য দুটি নদী ক্রসিং প্রয়োজন- যমুনা নদীর ওপর দিয়ে নয় কিলোমিটার এবং পদ্মার ওপর দিয়ে সাত কিলোমিটার।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি পিজিসিবি এই বিষয়ে দু’টি পৃথক প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং প্রকল্পগুলো শেষ করতে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগবে।’
তিনি আরো বলেন, আরএনপিপি থেকে বিদ্যুৎ ঢাকায় আসবে ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন ডাবল সার্কিট লাইনের মাধ্যমে। যা ধামরাইয়ে একটি নতুন ২৩০/১৩২ কেভি গ্রিড-সাবস্টেশনের সাথে সংযুক্ত হবে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি একটি ফার্মকে ট্রান্সমিশন লাইন বসানোর চুক্তি দেয়া হয়েছে এবং এর কাজ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হতে প্রায় দুই বছর সময় লাগবে।
পিজিসিবি’র আরেকজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে আরএনপিপি প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালন সিস্টেমে ফ্রিকোয়েন্সি বজায় রাখা। কারণ এটি হবে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের বিদ্যুৎ, যেখানে সঞ্চালন ও সরবরাহ নেটওয়ার্কে সবসময় স্থিতিশীল চাহিদা থাকবে।’ফ্রিকোয়েন্সি কন্ট্রোল ও ফ্রিকোয়েন্সি ড্রপ প্রোটেকশন, প্রোটেকশন সিস্টেম, ইমার্জেন্সি কন্ট্রোল সিস্টেম এবং ‘কোয়ালিটেটিভ আপগ্রেডেশন অব বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম’ সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কাজগুলো বাস্তবায়ন করাও এই প্রকল্পের অংশ।
ওয়েবসাইটের একটি হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে পুরো প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং বরাদ্দ দেয়া অর্থের ৪৮ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে।
পিজিসিবির একজন কর্মকর্তা জানান, ৪৬৪ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনের ১৩ কিলোমিটার নদী ক্রসিংয়ের মধ্যে- ১৫০ কিলোমিটার রূপপুর-ঢাকা, ১৫৪ কিলোমিটার রূপপুর-গোপালগঞ্জ, ৯০ কিলোমিটার রূপপুর-বগুড়া এবং ৫১ কিলোমিটার কালিয়াকৈর-আমিনবাজার সঞ্চালন লাইন নিয়ে গঠিত।
২০৫ কিলোমিটার ২৩০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনের সাত কিলোমিটার নদী ক্রসিংয়ের মধ্যে ১৫৮ কিলোমিটার রূপপুর-ঢাকা এবং ৮১ কিলোমিটার রূপপুর-বাঘাবাড়ি লাইনের অংশ রয়েছে।
পিজিসিবি কর্মকর্তারা জানান, জমির ওপর সঞ্চালন লাইন স্থাপনের অগ্রগতি প্রায় ৭০ শতাংশ হলেও সবচেয়ে চ্যলেঞ্জিং দিক নদী পারাপার নির্মাণের কাজও শুরু হয়নি।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত