পুলিশের ধারণা আত্মহত্যা
মাগুরার শ্রীপুরে সারঙ্গদিয়ায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে বুধবার দিবাগত রাতে আত্মহত্যা করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার লাবণী আক্তার (৪০)। তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন রেঞ্জে ডিবি পুলিশের এডিসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সারঙ্গদিয়া গ্রামে নানাবাড়িতে এসে তিনি আত্মহত্যার এ ঘটনা ঘটান। তিনি বিসিএস ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তা। অন্যদিকে গতকাল সকালে মাগুরা পুলিশ লাইনস ব্যারাকের ছাদ থেকে মাহমুদুল হাসান আকাশ (২২) নামে এক পুলিশ কনস্টেবলের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তিনি প্রায় দুই মাস আগে খুলনা থেকে মাগুরায় বদলি হয়ে আসেন। বছর দেড়েক আগে তিনি পুলিশের কনস্টেবল পদে খুলনায় চাকরি শুরু করেন। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পিপলুবাড়িয়ায়। তবে সর্বশেষ কুষ্টিয়া সদরের নতুন কমলাপুর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। মাগুরায় আসার আগে তিনি খুলনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার লাবণীর দেহরক্ষী ছিলেন। এ কারণে অনেকেই ধারণা করছেন, দুটি আত্মহত্যার মধ্যে কোনো যোগসূত্র থাকতে পারে। লাবণী আক্তারের বাবা স্কুলশিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল আযম বলেন, ‘লাবণীর স্বামী তারেক আবদুল্লাহ বাংলাদেশ ব্যাংকের খুলনা শাখার সহকারী পরিচালক। সে ক্যান্সারে আক্রান্ত। তার মানসিক অবস্থা ভালো নয়। ফলে আমার মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তার মনোমালিন্য চলছিল। বর্তমানে সে ভারতে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে কলহের কারণে আমার মেয়ে এর আগেও দুই বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। লাবণী-তারেক দম্পতির দুই মেয়ে। একজন তাছকিয়া (৮), অন্যজন তাসমিয়া (৪)। তবে লাবণী এখন কী কারণে আত্মহত্যা করল তা বলতে পারছি না।’ জানা গেছে, ঝুলন্ত অবস্থায় লাশ উদ্ধার হওয়া খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কর্মকর্তা লাবণী ‘মানসিক ডিপ্রেশনে’ ছিলেন। ১৭ জুলাই বেলা পৌনে ১টায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে খুলনার ময়লাপোঁতা এলাকায় সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে দুই ঘণ্টা চিকিৎসার পর তাকে হাসপাতালের ১০০৪ নম্বর কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। ১৮ জুলাই রাতে তিনি হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরেন। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, লাবণী অতিরিক্ত কাজের চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে তার পরিবার থেকে জানানো হয়। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ না হয়েই তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেছিলেন। এদিকে পুলিশের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ১৭ জুলাই লাবণী অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খাওয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর অসুস্থ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কেএমপির বিশেষ পুলিশ সুপার (সিটিএসবি) রাশিদা খানম জানান, লাবণীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর তার স্বামী ভারত থেকে দেশে রওনা দিয়েছেন। খুলনায় তিনি স্বামী-সন্তান নিয়ে সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় (দ্বিতীয় ফেজ) ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। বুধবার মাঝরাতে মাগুরার শ্রীপুরে কাদেরপাড়া এলাকায় নানাবাড়ি থেকে লাবণীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এদিকে গতকাল সকালে মাগুরা পুলিশ লাইন ব্যারাকে লাশ উদ্ধার হওয়া কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানও (২৩) একসময় খুলনা কেএমপিতে কর্মরত ছিলেন। দেড় মাস আগে তিনি মাগুরায় বদলি হন। খুলনায় কর্মরত থাকাকালে মাহমুদুল কেএমপির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লাবণীর দেহরক্ষী ছিলেন। মাগুরার পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম জানান, লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। একই দিন দুজনের আত্মহত্যার নেপথ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না সে বিষয়ে কোনো তথ্য এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ঘটনার জোর তদন্ত চলছে। মাহমুদুল হাসান বুধবার রাতে মাগুরা-যশোর মহাসড়কে টহল ডিউটিতে সংযুক্ত ছিলেন। ভোরে ডিউটি থেকে ফিরে পুলিশ লাইনস ব্যারাকের ছাদে তার জিম্মায় থাকা অস্ত্র জমা না দিয়ে সে অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটান। মাহমুদুল হাসানের মা রিনা খানম বলেন, ‘আমার ছেলের সঙ্গে রাতেও কথা হয়েছে। তখন সে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। রাতে টহল ডিউটি আছে বলে সে জানিয়েছিল। তাই সকালে তাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করিনি। কিন্তু তার অফিস থেকে আমাদের ফোন দিয়ে জানানো হয়েছে, আমার ছেলে মোটরসাইকেল অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। শুনে আমরা আসার পর জানতে পারি সে নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছে। ছেলেটাকে এখন পর্যন্ত দেখতে পাইনি। আমি আমার ছেলেকে অনেক জিজ্ঞাসা করেছি, আব্বু, তোমার কারও সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকলে বলো, আমরা তার সঙ্গে তোমার বিয়ে দেব। সে বলেছে, না আম্মু, আমার কারও সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তোমরা যেখানে বিয়ে দিবা আমি সেখানেই বিয়ে করব।’ তিনি বলেন, ‘আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়েটি বিবাহিত। ছেলেটা যে কী কারণে আত্মহত্যা করল এ বিষয়ে কিছুই বুঝতে পারছি না।’