যশোরে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে বাড়তে শুরু করেছে রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছে ৪৫ জন রোগী। বর্তমানে শয্যার ১৪ দশমিক ৬ গুণ বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালে। এ বাড়তি রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও সেবিকারা।
যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের নির্ধারিত শয্যাসংখ্যা মাত্র ৫টি। বর্তমানে এই ওয়ার্ডে শয্যার বাইরেও বারান্দাসহ হাসপাতালে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা। রোগীদের মতে, আবহাওয়া পরিবর্তনের পাশাপাশি ইফতারে ভাজাপোড়া খাওয়ার কারণে আক্রান্ত হয়েছেন তারা।
রবিউল আলম নামে আরেক রোগী জানান, কয়েক দিন ধরে গরম-ঠান্ডা বিরাজ করছে। এর মধ্যে ইফতারিতে ভাজাপোড়া খাওয়ার কারণেই হয়তো ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিল। যে কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন।
শাবানা বেগম নামে এক রোগী বলেন, ‘প্রথম রোজা থেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। বাড়ি বসে চিকিৎসা নিয়ে কোনো লাভ হয়নি। যে কারণে সোমবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। হাসপাতালে রোগীর যে চাপ, বিছানা পাইনি। তাই বারান্দাতেই চিকিৎসা নিচ্ছি।’
এদিকে হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স দিলারা খাতুন বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৪৫ জন রোগী। বর্তমানে পাঁচ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছেন ৭৩ জন। এ অবস্থায় রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
এদিকে সহকারী অধ্যাপক পলাশ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বর্তমানে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ২৮ জন নারী, ৩১ জন পুরুষ ও ১৪টি শিশু রয়েছে। সব বয়সের মানুষের ডায়রিয়া হচ্ছে। আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে। আমরা ম্যানেজমেন্ট করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।’
তিনি বলেন, সবার আগে নিরাপদ পানি পান করতে হবে। খাবারের ব্যাপারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থাকতে হবে। বিশেষ করে রাস্তার খাবার, বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবে। পাশাপাশি ডায়রিয়া হলে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন খেতে হবে, যাতে পানিশূন্যতা দেখা না দেয়। এর সঙ্গে ডাবের পানি, চিড়ার পানি, কাঁচকলার তরকারি, থানকুনি পাতার রস খেতে হবে। শিশুদের বুকের দুধের পাশাপাশি স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে।
যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক গৌতম আচার্য বলেন, মূলত আবহাওয়া পরিবর্তন ও বিশুদ্ধ পানির সংকটের কারণে এই প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বড় ধরনের কোনো সমস্যা এখনও পাওয়া যায়নি। চিকিৎসায় কোনো সংকট নেই। সকালে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।