1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
ভোজ্য তেলের দাম বাড়তে সময় লাগে না, কমতে অপেক্ষা | Bastob Chitro24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন

ভোজ্য তেলের দাম বাড়তে সময় লাগে না, কমতে অপেক্ষা

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০২২

আন্তর্জাতিক বাজারে টানা কমছে ভোজ্য তেলের দাম। চলতি মাসেই টনপ্রতি প্রায় ১০০ থেকে ২০০ ডলার কমেছে। বিশ^বাজারে যেই গতিতে কমছে দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের দাম সেভাবে কমছে না। বিশ্ববাজারে টানা বৃদ্ধিতে দেশের বাজারে দাম বাড়াতে কোম্পানিগুলোর দ্রুত উদ্যোগ দেখা গেলেও কমানোর সময় সেই তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে না। সময়ক্ষেপণ করছে কোম্পানিগুলো। অবশ্য গত রোববার সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৬ টাকা কমিয়েছে তারা। কিন্তু সর্বশেষ গত ৯ই জুন দাম বৃদ্ধির সময় কোম্পানিগুলো বাড়িয়েছিল লিটারে ৭ টাকা। ভোজ্য তেল আমদানিকারকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বাড়িয়ে দেয় আমদানিকারকরা। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার পর দীর্ঘদিনেও দেশীয় বাজারে পণ্যটির দাম সমন্বয় হয় না, যা খুবই দুঃখজনক।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঊর্ধ্বমুখী বাজারে নিয়মিত দাম সংশোধন করা হলেও পড়তি বাজারে দাম কমানোর ক্ষেত্রে অনীহা দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া দীর্ঘ সময়ের জন্য দাম নির্ধারণ করে দেয়ার প্রবণতায় নিত্যপণ্যটির বাজারের স্বাভাবিক গতিশীলতা নষ্ট হয়ে পড়ছে।

এ ছাড়া ভোজ্য তেলের দাম বিশ^বাজারে প্রায় প্রতিদিনই ওঠানামা করায় ব্যবসায়ীরাও দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন দাম নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু দেড় মাস ধরে বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম একটানা কমলেও দাম কমানোর ক্ষেত্রে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তেমন একটা দ্রুত উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি।

জানা গেছে, লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসার পর ভোজ্য তেলের চাহিদা বাড়লে সেই তুলনায় মজুত ও উৎপাদন কম হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে পণ্যটির দাম। বাংলাদেশের মতো আমদানিনির্ভর দেশগুলোয় এর প্রভাব পড়ে। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশ শুল্কহারে ছাড় দিয়ে সংকট কিছুটা কাটিয়েও ওঠে। কিন্তু বাংলাদেশে শুল্ক ছাড়ে উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ না থাকায় প্রায় প্রতি মাসেই ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে প্রতিদিনই কমছে ভোজ্য তেলের দাম। তা সত্ত্বেও দাম কমানোর ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর অনীহা দৃশ্যমান। যে হারে বিশ্ববাজারে দাম কমছে, সে হারে দেশের বাজারে দাম কমাতে চাইছে না কোম্পানিগুলো। ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি শুরুর ঘোষণা বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের ঊর্ধ্বমুখী বাজারে দরপতনের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ৫ই মে দেশের ইতিহাসে রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি ঘটে পণ্যটির। ওই সময় প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম ৩৮ টাকা বাড়ানো হয়। এতে সমালোচনার মুখে পড়ে কোম্পানিগুলো। এরপর ৯ই জুন পণ্যটির দাম সমন্বয় করা হয়। ওই সময় পাম অয়েলের লিটারপ্রতি দাম ১৪ টাকা কমানো হলেও সয়াবিনের দাম বাড়ানো হয় ৭ টাকা। সর্বশেষ ২৬শে জুন নতুন করে শুধু বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ৬ টাকা কমিয়ে ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্ববাজারে অস্বাভাবিক দাম কমলেও দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমানোর ক্ষেত্রে এ ধীর নীতির পেছনে অতি মুনাফা অর্জনকে মূল কারণ বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ী ও খাত সংশ্লিষ্টরা। গত এক বছরে অন্তত ১৫ দফায় ভোজ্য তেলের দাম সমন্বয় করেছে সরকার ও আমদানিকারক কোম্পানিগুলো।

ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি মতে, নতুন দাম অনুযায়ী প্রতি লিটার সয়াবিন তেল পাওয়া যাবে ১৯৯ টাকায়। বর্তমান মূল্য ২০৫ টাকা। এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা এবং ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের দাম ৯৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সর্বশেষ গত ৯ই জুন সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। ওই সময় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা বাড়িয়েছিল সরকার। আর গত ৫ই মে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮০ টাকা হয়েছিল। ওই সময় বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ এবং ৫ লিটারের বোতলের দাম ৭৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯৮৫ টাকায়।

ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, তিন মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ২০০-৪৯০ ডলার কমলেও দেশে তার বিপরীতে ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে এক মাসে দু’দফায় প্রতি লিটার সয়াবিনে দাম বাড়িয়েছেন ৫১ টাকা। তিনি বলেন, যখন বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম বাড়তি, তখন পণ্যটি আমদানিতে সরকারের পক্ষ থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার ছাড়াও বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভোক্তারা তার কোনো সুফল পায়নি।

প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন, যা মাত্র ৩ শতাংশেরও কম। তবে সরজমিন ঘুরে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। সয়াবিন তেলের দাম কমানো হলেও খুচরা বাজারে এখনো বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, প্রতি লিটার তেলে মাত্র ২ টাকা কমানো হয়েছে। কাস্টমার এসে কম রেটের তেল চাইলে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আগের তুলনায় সয়াবিন তেল বিক্রি করে লাভের পরিমাণও কম বলে অভিযোগ করছেন তারা। ক্রেতারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলেও দেশের প্রেক্ষিতে যা অতি নগণ্য। দেশের মাথাপিছু আয় বাড়লেও পেট পিছু খাদ্য বাড়ছে না বলে অভিযোগ তাদের।

তেল কিনতে আসা শ্যামলীর বাসিন্দা নাহিন বলেন, আমাদের দেশে একটা জিনিসের দাম বাড়লে তা আর কমে না। ১৭০ টাকার সয়াবিন তেলের দাম করছে ২০০ টাকা। তারপরে আবার ৭ টাকা বাড়ানো হলো। এখন আবার ৬ টাকা কমলো। যেটা কমানো হয়েছে তা আমাদের কাছে ৫ লিটার তেলে মাত্র ৩০ টাকা। ব্যবসায়ীদের কথা ছিল, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব পড়ছে বলে দাম বেড়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন তারা কি বলবে? আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম তো পড়ে গেছে, তাহলে আমাদের দেশে এখনো বেশি থাকবে কেন। আন্তর্জাতিক বাজারে দেখলাম ২৭ শতাংশ দাম কমেছে, আমাদের দেশে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ কমাতে পারতো। সেখানে আমাদের মাত্র ৩ শতাংশ কমানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমি ভাবছি তেলের খাবার বাদ দিয়ে পুরোপুরি ভেজিটেরিয়ান হয়ে যাবো। সিদ্ধ করে সবজি খাবো।

মৌসুমী জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোশারফ হোসেন বলেন, কোম্পানি থেকে বলছে, নতুন রেটের মাল আসতে আরও নাকি এক সপ্তাহ সময় লাগবে। আজ তারা অর্ডার কাটতে এসে ২ টাকা করে প্রতি লিটারে কমাতে চাচ্ছে। আমি বললাম সরকার প্রতি লিটারে কমাইছে ৬ টাকা। আমি তাহলে কীভাবে লোকসান দিয়ে ১৯৯ টাকা লিটারে তেল বিক্রি করবো। তাহলে তো ৪ টাকা লোকসান হবে।
আগারগাঁওয়ে বিএনপি বাজারে বিএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবদুল হামিদ বলেন, এখনো বাড়তি দামের তেল বিক্রি করছি। এক সপ্তাহ পরে কম দামের তেল আসবে বলে ডিলাররা আভাস দিয়েছে। আমি কালই বাড়তি রেটের তেল তুলেছি। কম রেটের তেল আসলে ডিলারকে এগুলো ফেরত দিয়ে দিবো।

ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২৬ শতাংশ কমানো হয়েছে। আমরা আশা করবো সরকার বিষয়টি রিভিউ করবেন। যেহেতু ডলারের দাম বেড়েছে, এজন্য একটা নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় এই বিষয়টা কিছুটা সমতায় এসেছে। তারপরেও যে মূল্য হ্রাস পেয়েছে তার চেয়েও সরকার ঘোষিত মূল্য অনেক কম বলে আমরা মনে করি। এটা কমপক্ষে ১৫ শতাংশ হ্রাস করাটা যৌক্তিক হতো।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি