1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
বাজার সয়লাব ভয়ংকর পলিথিনে | Bastob Chitro24
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ অপরাহ্ন

বাজার সয়লাব ভয়ংকর পলিথিনে

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০২২

সোনালি ব্যাগের অপেক্ষা বাড়ছে, বিকল্প না থাকায় পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা যাচ্ছে না

কাঁচাবাজার, মুদি দোকান ও শপিং মলসহ দেশের সর্বত্র এখন পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। সুলভমূল্যে পণ্য বহনে পলিথিনের বিকল্প না থাকায় বাজার সয়লাব হয়ে গেছে ভয়ংকর পলিথিনে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই পণ্য নিয়ন্ত্রণে মাঝে মধ্যে অভিযান চালানো হলেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা যায়নি। সরকার পরিবেশ দূষণ রোধে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ‘সোনালি ব্যাগ’-এর উদ্ভাবন করলেও বাজারে এখনো সেই ব্যাগের বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু করা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে চীন থেকে সোনালি ব্যাগ উৎপাদনের জন্য স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র আনা গেলে দেশের বড় বড় শপিং মল ও সুপার শপগুলোতে এই ব্যাগের কাক্সিক্ষত চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।

সরকারিভাবে ২০০২ সালে সারা দেশে এইচডিপিই (হাইয়ার ডেনসিটি পলি ইথালিন) পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। সংশ্লিষ্ট আইন বলছে, নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণের অপরাধে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডের বিধান আছে। কিন্তু এরপরও প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহৃত হচ্ছে। আর এই বর্জ্য পরিবেশের সঙ্গে মিশে পরিবেশ দূষণ করছে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের এক পরিসংখ্যান মতে, শুধু ঢাকায়ই প্রতিদিন ১ কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগ জমা হচ্ছে। অথচ পলিথিন দীর্ঘ সময়েও পচে না এবং মাটির সঙ্গে না মেশার ফলে মানুষ ছাড়াও বিপুল পরিমাণ পাখি ও জলজ প্রাণী ক্ষতির শিকার হচ্ছে। পলিথিনের অতিব্যবহারের কারণে ১৯৯৮ সালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। রাজধানী ঢাকার জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে পলিথিনকে চিহ্নিত করেছেন পরিবেশবিদরা।

নগরীর ব্যবসায়ীরা জানান, পলিথিন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও এর মতো সহজলভ্য অন্য কোনো পণ্য বহনকারী তাদের কাছে নেই। হাতেগোনা কিছু ক্রেতা ঘর থেকে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ নিয়ে বাজারে এলেও অধিকাংশই পলিথিনের ওপর নির্ভরশীল।

নগরীর কয়েকটি কাঁচাবাজারের পণ্য বিক্রেতারা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ক্রেতারা মাছ-মাংস কেনার পর তা পলিথিনের ব্যাগে করেই বাড়িতে নিয়ে যেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। অধিকাংশ ক্রেতা নেটের ব্যাগ বা পাটের ব্যাগের পরিবর্তে পলিথিনের ব্যাগে পণ্য নিতে চান। তারা পলিথিন ছাড়া পণ্য কিনতে চান না।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নির্বাহী সহ-সভাপতি ড. আবদুল মতিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা শহরের গৃহস্থালির ময়লা-আবর্জনাসহ অন্যান্য বর্জ্য পদার্থের অধিকাংশ পলিথিনে করে যত্রতত্র ফেলা হয়। এই বর্জ্য পার্শ্ববর্তী ড্রেন ও নালা-নর্দমায় পড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে।

এই পরিস্থিতিতে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ড. মোবারক আহমদ খান পাটের তৈরি পচনশীল ‘সোনালি ব্যাগ’ উদ্ভাবন করেন। এই ব্যাগটি বাজারজাত করতে ২০১৮ সালে একটি পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর এর কাজ পিছিয়ে পড়ে। ঢাকার ডেমরার শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে সরকারি পাটকল লতিফ বাওয়ানী জুট মিলে সোনালি ব্যাগ তৈরির কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় এই ব্যাগ উৎপাদনের জন্য। এই টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্য কেনা হয়। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে কারখানাটি ১ টন সোনালি ব্যাগ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রপাতি উন্নয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এই ব্যাগ উৎপাদনে আর্থিক সংকটও রয়েছে। ইচ্ছাশক্তিরও অভাব আছে। এখন বাজারে সোনালি ব্যাগ দিতে চাইলেও ব্যবসায়ীরা তা নিতে চাচ্ছেন না। বিশেষ করে বাজারে পলিথিনের এত চাহিদা যে, এর সঙ্গে সোনালি ব্যাগ পেরে উঠছে না। এই জায়গায় সোনালি ব্যাগ বাজারে নিয়ে আসতে হলে সরকার ও উদ্যোক্তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। দেশের বাইরের উদ্যোক্তাদের এই ব্যাগ নিয়ে আগ্রহ থাকলেও তাদের চাহিদা অনেক বেশি। ড. মোবারক আহমদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের চাহিদা অনুযায়ী এই ব্যাগ উৎপাদনের জন্য যে যন্ত্রপাতি প্রয়োজন তার জন্য ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি আমাদের কাছ থেকে ব্যাগ নিতে চাচ্ছে। কিন্তু এদের কারও চাহিদা হয় খুব কম, না হয় খুব বেশি। যা পূরণ করা সম্ভব নয়। ঢাকায় দৈনিক ব্যাগের চাহিদা সাড়ে পাঁচ শ টন। কিন্তু এখন আমরা উৎপাদন করছি মাত্র ১ টন। দেশ-বিদেশে এই ব্যাগের ভালো চাহিদা আছে। বর্তমানে প্রতিদিন যা অর্ডার পাচ্ছি সে অনুপাতে ব্যাগ উৎপাদন করছি। ব্যাগ তৈরির জন্য যে স্বয়ংক্রিয় মেশিন দরকার সেটি আগামী দুই মাসের মধ্যে এসে পৌঁছবে বলে ধারণা করছি। করোনার কারণে গত দুই বছরে চীন থেকে এই মেশিনটি আনতে দেরি হয়। এখন মেশিনটি অর্ডার করা হয়েছে। মেশিনটি বসানো হলে আশা করছি, মিনিটে ৬০টি সোনালি ব্যাগ তৈরি করা যাবে। এই মেশিনটি ২৪ ঘণ্টা ধরে চালালে দেশের বড় শপিং মল ও সুপার শপগুলোর চাহিদা পূরণ করা যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি