1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করলেন প্রধানমন্ত্রী | Bastob Chitro24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭ অপরাহ্ন

বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করলেন প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২২ জুন, ২০২২

সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, ঘাবড়াবার কিছু নেই। দুর্গত মানুষের পাশে আছে সরকার। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। সামনে কি করতে হবে তারও পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। তিন জেলার বন্যাকবলিত এলাকা হেলিকপ্টারে পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী দুপুরে সিলেট সার্কিট হাউজে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। সভায় বন্যাকবলিত মানুষকে সব ধরনের সহায়তা দিতে স্থানীয় প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকার বা বিরোধী দল যেখানেই আওয়ামী লীগ থাকুক না কেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীরা সর্বদা সারা দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের জন্য কাজ করছেন। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা অন্য যেকোনো দুর্যোগে আমরা সব সময় মানুষের পাশে থাকি এবং মানুষকে আমাদের সহায়তা অব্যাহত রাখবো। সভায় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও সিলেট সেনানিবাসের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং বন্যা ও এর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা তুলে ধরেন। বিভাগীয় প্রশাসন জানিয়েছে, চারটি জেলার ৩৩টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যেখানে ৪৫ লাখের বেশি মানুষ বন্যার পানিতে ডুবে আছে এবং ৪ দশমিক ১৪ লাখের বেশি মানুষ ১২৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া, বন্যাদুর্গতদের চিকিৎসার জন্য ৩০০টিরও বেশি মেডিকেল টিম কাজ করছে এবং ২৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং ১৩০৭ টন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে । অন্যদিকে বন্যায় ৭৪ হাজার হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে এবং ৪০ হাজার পুকুর ও হেচারি বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যাতে আনুমানিক ১৪২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। শেখ হাসিনা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে একগুচ্ছ নির্দেশনা দেন। ১৯৯৮ সালের বন্যার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যাকবলিত মানুষের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তারা সহজে এসব খাবার কয়েকদিন সংরক্ষণে রেখে খেতে পারেন। তিনি এই অঞ্চলে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হওয়ায় যে কোনোভাবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন এবং বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং স্যালাইন বিতরণ করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের মতো হাওর এলাকায় রাস্তার মাটি ভরাটের পরিবর্তে উঁচু রাস্তা নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন, যাতে এ ধরনের দুর্যোগের সময় গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহনের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা যায়। কুশিয়ারা নদীর ড্রেজিং এবং নাব্য বৃদ্ধি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীর নাব্য রক্ষায় তিনি একবারের জন্য ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পক্ষে কিন্তু নদীর নাব্য নিশ্চিত করতে বছর বছর সেখানে রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় বৃহত্তর সিলেট জেলার অধিকাংশ বাড়িঘরের সামনেই বড় বড় ড্রেন এবং বিল ছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সে ধরনের কোনো ড্রেন বা জলাশয় এখন আর নেই বরং জায়গাগুলো বিভিন্ন বাড়িঘর ও স্থাপনায় দখল হয়ে গেছে। ময়মনসিংহের অবস্থাও এই সিলেটের মতোই। তিনি বলেন, এটা মাথায় রেখেই আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাতে হবে। বন্যার সময় খাদ্যের গুদামে যাতে পানি প্রবেশ করতে না পারে এবং খাদ্য ভাণ্ডার থেকে যাতে সহজে পরিবহন করা যায় সেজন্য ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। বন্যার সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ঝড় ও বন্যার সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় মূলত বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যুর মতো নতুন কোনো দুর্যোগ এড়াতে। পানি নামতে শুরু করলে ডায়রিয়া ও জ্বরের মতো সংক্রামক রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে সিলেট অঞ্চলের পুরো বন্যাকবলিত এলাকা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছি। দেশের মাঝামাঝি অংশে বাংলা শ্রাবণ মাসে বন্যা হতে পারে এবং দক্ষিণাঞ্চলে সাধারণত ভাদ্র মাসে বন্যা হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুরো সিলেট অঞ্চল পরপর তিনবার বন্যার সম্মুখীন হয়েছে। এই বন্যাই শেষ নয়। কাজেই বন্যা মোকাবিলায় আমাদের সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি বন্যার সময় নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নিশ্চিত করতে ল্যান্ড ফোন লাইনগুলো সক্রিয় রাখতেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী বন্যাদুর্গত এলাকায় সময়মতো ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিয়ে প্রশংসনীয় কাজ করার জন্য জেলা প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী সিলেট ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকদের কাছে তার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সহায়তা হস্তান্তর করেন এবং পরে কিছু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রীও বিতরণ করেন। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পনি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, সিনিয়র পানি সম্পদ সচিব কবীর বিন আনোয়ার এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে ছিলেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান সার্কিট হাউজে উপস্থিত ছিলেন। সভায় সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন। মতবিনিময় সভা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহ পরান (র.) এর মাজার জিয়ারত করেন। তিনি সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও ফাতেহা পাঠ এবং মোনাজাত করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি