1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
ফের বাড়ছে ভোজ্য তেলের দাম | Bastob Chitro24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৬ অপরাহ্ন

ফের বাড়ছে ভোজ্য তেলের দাম

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২

ভোজ্য তেলের বিভিন্ন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমানোর ফলে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম কিছুটা কমলেও ইন্দোনেশিয়ার পাম তেল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর আবারো অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের ভোজ্য তেলের বাজার। পাম তেলের সঙ্গে সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে সয়াবিন তেলের বাজারেও। এতে সব ধরনের ভোজ্য তেলের দামই গত কয়েকদিনে দাম আরও ১০-২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে প্রতি কেজিতে। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও তেল মিলছে না। আবার বাজারে সরবরাহও কম হওয়ায় ভোজ্য তেলের কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। রাজধানীর বেশকিছু বাজারে তেল না থাকার কথা জানিয়েছেন দোকানিরা। এদিকে ঈদ সামনে রেখে ভোজ্য তেলের চাহিদা বাড়ায় বাজারে এখন সয়াবিনের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় ভোজ্য তেলের দাম বাড়ার পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।

সেই সঙ্গে বাড়তে পারে মূল্যস্ফীতি। এক্ষেত্রে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ভোজ্য তেল বিক্রি কার্যক্রম বাড়ানো যেতে পারে।
সূত্র জানায়, দেশে যে পরিমাণ অপরিশোধিত তেল আমদানি হয়েছে, সেগুলো দিয়ে কমপক্ষে আরও তিন মাস চলবে। এদিকে বাড়তি দামে যেসব তেল আমদানি হবে, সেগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া থেকে পাম অয়েল দেশে আসতে ২ মাস সময় লাগবে। এগুলো পরিশোধিত হয়ে খুচরা বাজারে আসতে আরও ২ মাস সময় লাগবে। সবমিলিয়ে আরও ৪ মাস সময় লেগে যাবে। অন্যদিকে সয়াবিন তেল আমদানি হয় ব্রাজিল, কানাডা, ইউক্রেন ও চীন থেকে। এসব দেশ থেকে বাড়তি দামে সয়াবিন আসতে কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগবে। সেগুলো পরিশোধিত হয়ে বাজারে আসতে সময় লাগবে আরও ২ মাস। কিন্তু মিল মালিকরা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে এখনই দাম বাড়াতে চাচ্ছে। অথচ এসব তেল কমপক্ষে তিন মাস আগে আমদানি করা হয়েছে। তখন সয়াবিনের দাম ছিল প্রতি টন ১,৬০০ ডলার এবং পাম অয়েলের ১,১৬০ ডলার। কম দামে তেল আমদানি করে বেশি দামে বিক্রির জন্য একটি সিন্ডিকেট উঠে পড়ে লেগেছে। এদিকে সরকার দাম না বাড়ালেও মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেশের বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে এমন আশঙ্কায় তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা। ফলে চাহিদা মতো তেল মিলছে না। বিশেষ করে খোলা তেলের ঘাটতি বাড়ছে দ্রুত। তবে মিল মালিকরা বলছেন তারা চাহিদা অনুযায়ী তেলের জোগান দিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাইছেন মালিকরা।
দেশে ভোজ্য তেল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় পাম অয়েল। পণ্যটির চাহিদা পূরণ হয় মূলত ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানির ভিত্তিতে। গত শুক্রবার এক বিবৃতির মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া থেকে পাম অয়েল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো। চলতি সপ্তাহেই এ ঘোষণা কার্যকর হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এই ঘোষণার প্রভাব শুরু হয়েছে দেশের বাজারে।
এর আগে রমজানের শুরুতে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর দাবি করেছিলেন মিল মালিকরা। কিন্তু তাতে সরকার সায় না দেয়ায় বাজারে তেলের সরবরাহে সংকট দেখা দেয়। সেই সঙ্গে কেজি প্রতি ১০ টাকা বাড়ে সব ধরনের ভোজ্য তেলের দাম।
রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, আগের বাড়তি দামের তুলনায় আরেক দফা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কয়েকদিনে ১৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে তেলের দাম। আর খুচরা বাজারে ২৫ টাকার বেশি বেড়েছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের মধ্যে এক লিটার ও আধা লিটারের বোতল মিলছে খুবই কম। পাঁচ লিটারের বোতল পাওয়া গেলেও অন্য পণ্য না কিনলে বিক্রেতারা তেল বিক্রি করতে চান না।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৮০-১৮৫ টাকা কেজি। যা আগে ছিল ১৬৮-১৭০ টাকা কেজি। সরকার নির্ধারিত মূল্য খোলা সয়াবিন তেলের কেজি ১৩৬ টাকা। সরকার নির্ধারিত মূল্যে কোথাও তেল পাওয়া যাচ্ছে না। পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৭৫ টাকা কেজি। তিনদিন আগে পাম তেল বিক্রি হয়েছে ১৬০-১৬২ টাকা কেজি। সরকার প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েলের দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে। কিন্তু ওই দামে বাজারে পাম অয়েল পাওয়া যায়নি। বাড়তি মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে সয়াবিন তেল সসরবরাহ কমিয়ে ফেলেছেন। একদিনে আটকে রাখতে পারলেই দাম বেশি পাওয়া যাবে বলে তারা মনে করছেন।
রাজধানীর মধুবাগ বাজারের দোকানি সাত্তার বলেন, শুনেছি ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এই খবর শুনেই তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে বড় ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা। আমরা চাহিদা মতো তেল পাচ্ছি না। দোকানে কোনো তেল নাই।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার দর তালিকায় দেখা গেছে, গতকাল সয়াবিন তেল (খোলা) প্রতি লিটার ১৬০ থেকে ১৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটারে দাম বেড়েছে ৮.৮ শতাংশ। গতকাল পাম অয়েল (খোলা) প্রতি লিটার ১৫৬ থেকে ১৬৩ বিক্রি হয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৪০ থেকে ১৪৮ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটারে দাম বেড়েছে ১০.৭৬ শতাংশ। একইভাবে গতকাল পাম অয়েল (সুপার) প্রতি লিটার ১৫০ থেকে ১৬২ বিক্রি হয়েছে। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৪৫ থেকে ১৫০ বিক্রি হয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটারে দাম বেড়েছে ৫.৭৬ শতাংশ।
মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. আফজাল বলেন, ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি নিষেজ্ঞার খবরে পাইকারিতে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম অনেক বেড়ে গেছে। বাড়তি দামে কেনার কারণে আমরাও বাড়তি দামে বিক্রি করছি। এখন খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ১৬০ টাকা। পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা, যা আগে ছিল ১৫০ টাকা।
কাওরান বাজারের পাইকারি তেল বিক্রেতা সোনালি ট্রেডার্সের মালিক আবুল কাশেম বলেন, শুধু বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের রূপচাঁদা ব্র্যান্ড ২০ কার্টন তেল দিয়েছে। প্রতি কার্টনে পাঁচ লিটারের চারটি বোতল থাকে। সেই হিসাবে মাত্র ২০০ লিটার তেল দিয়েছে কোম্পানি। অন্য কোম্পানিগুলো ১০ থেকে ১৫ দিন ধরেই খুব বেশি তেল দিচ্ছে না। পাম অয়েলের বিষয়ে তিনি বলেন, বাজারে পাম অয়েল নেই বললেই চলে।
জানা গেছে, দেশে মোট ব্যবহৃত ভোজ্য তেলের প্রায় ৬৫ শতাংশই পাম অয়েল। পণ্যটির চাহিদার পুরোটাই পূরণ হয় ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে আমদানির মাধ্যমে। এর মধ্যে ৮৭ শতাংশ আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে। মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করা হয় বাকি ১৩ শতাংশ। তবে মালয়েশিয়া এখনো পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ করেনি।
দেশের অন্যতম ভোজ্য তেল আমদানি, পরিশোধন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ইন্দোনেশিয়া বিশ্বব্যাপী তেল রপ্তানি বন্ধ করেছে। এতে অন্য দেশের যে অবস্থা হবে আমাদেরও তাই হবে। এখন পর্যন্ত আমাদের পাম তেলের বিকল্প কোনো আমদানি উৎস দেখছি না। মালেশিয়াও একই পথে হাঁটছে। তাই বিষয়টি উদ্বেগজনক। এ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসতে হবে। আমরা ঈদের পর মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে একটা সিদ্ধান্ত নিবো।
ভোজ্য তেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে গত মাসে এ জাতীয় আমদানি ও বিপণনে মোট ২০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছিল সরকার। ওই সময় সরকারিভাবে খোলা সয়াবিনের দাম পাইকারিতে লিটার প্রতি ১৪০ ও পাম অয়েলের দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বোতলজাত সয়াবিনের দাম ধরা হয় ১৬৮ টাকা। পরে রোজা শুরুর আগে বোতলজাত তেলে ৮ টাকা কমিয়ে ১৬০ টাকা করা হয়।
এনবিআরের তথ্য বলছে, দেশে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ১০ লাখ ২২ হাজার টন ভোজ্য তেল আমদানি হয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে। এর মধ্যে ৬ লাখ ৬১ হাজার টন পাম অয়েল ও ৩ লাখ ৬১ হাজার টন সয়াবিন। বাংলাদেশ প্রতি বছর গড়ে ১৬ লাখ টন পাম অয়েল এবং সাড়ে ৮ লাখ টন সয়াবিন তেল আমদানি করে। অর্থাৎ সয়াবিনের প্রায় দ্বিগুণ পাম অয়েল আমদানি হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, সম্প্রতি দাম বেড়ে যাওয়ার তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। তেল নিয়ে যাতে ঈদের আগে নতুন করে নৈরাজ্য না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। কোনো দেশ এখন যদি রপ্তানি বন্ধ করে, এতে দেশের বাজারে এখনই দাম বেড়ে যাওয়ার কথা নয়। কারণ এই প্রভাব বাজারে পড়তে সময় লাগবে। আমরা তা খতিয়ে দেখছি। পাশাপাশি ভোজ্য তেল নিয়ে যাতে কোনো ধরনের কারসাজি বা কৃত্রিম সংকট না করতে পারে, সেজন্য পর্যাপ্ত নজরদারি করা হচ্ছে।
ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বলেন, সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে ভোজ্য তেলের দাম কিছুটা কমেছিল। ইন্দোনেশিয়ার এ নিষেজ্ঞার কারণে সব ধরনের ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকার পদক্ষেপ নিয়ে দাম কিছুটা কমিয়েছে। তবে সেটা কতটা কার্যকর হয়েছে তা দেখার বিষয়। কাজেই সরকার টিসিবির মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ বাড়ালে কিছুটা সুফল মিলতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি