1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
প্রশ্নফাঁস : ৪০ মিনিট আগে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয় উত্তর | Bastob Chitro24
শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১১ পূর্বাহ্ন

প্রশ্নফাঁস : ৪০ মিনিট আগে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয় উত্তর

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৮ মে, ২০২২

বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অধীনে নিয়োগসহ পরীক্ষায় একজন বিসিএস শিক্ষা কর্মকর্তা, উচ্চমান সহকারীসহ তিন কর্মকর্তার নেতৃত্বে ফাঁস হতো উত্তরপত্র। পরীক্ষা শুরুর ঠিক ৪০ মিনিট আগে একযোগে বিভিন্ন কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাঠানো হতো উত্তর। পরীক্ষা শুরুর আগে চলতো উত্তরপত্র বিক্রির দরকষাকষি। মাউশি’র অধীনে অফিস সহকারী নিয়োগ পরীক্ষার আগে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো উত্তর দেখে লেখার সময় এক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সম্প্রতি ইডেন মহিলা কলেজে অনুষ্ঠিত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অফিস সহকারী ‘কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক-গ্রেড ১৬ পদে’ এমসিকিউ নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালীন ওই পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। একটি চক্রের সন্ধান মিলেছে। এই পরীক্ষায় পদের সংখ্যা ছিল মোট ৫১৩টি। সারা দেশে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার এবং মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৬১টি। পরীক্ষায় মোট ৭০টি এমসিকিউ প্রশ্ন আসে গত শুক্রবার পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষার্থী সুমন জমাদ্দার এবং গত সোমবার রাতে রাজধানীর ওয়ারীর অভয়দাস লেন এলাকা থেকে চক্রের অন্যতম সদস্য মো. সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তিনি পটুয়াখালীর একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে চক্রের মূল হোতারা কয়েক হাত বদল করে উত্তরপত্র সরবরাহ করে। ফলে তাদেরকে সরাসরি শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে কখনো কখনো তারা ছদ্মনাম এবং ঠিকানা ব্যবহার করে। নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়া প্রতিটি প্রার্থীর বিপরীতে বিভিন্ন ধাপে তারা প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকায় প্রতিটি উত্তরপত্র বিক্রি করেন। সারা দেশেই রয়েছে তাদের নিজস্ব নেটওয়ার্ক। তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রশ্নফাঁস চক্রের নেতৃত্বে থাকা মাউশি’র একজন বিসিএস কর্মকর্তা, উচ্চমান সহকারী, কম্পিউটার অপারেটরসহ একাধিক ব্যক্তির নাম এসেছে। তাদের মধ্যে উচ্চমান সহকারী আহসান হাবিব, নওশাদ, রাশেদুল, শেখর হাওলাদারসহ একাধিক ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে গোয়েন্দা তদন্তে। তাদের নেতৃত্বেই পরীক্ষার ৪০ মিনিট বা এক ঘণ্টা আগে উত্তরপত্র ছড়িয়ে পড়তো দেশজুড়ে বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর কাছে।
শুক্রবার বিকাল তিনটায় ইডেন মহিলা কলেজে অনুষ্ঠিত শিক্ষা অধিদপ্তরে অফিস সহকারী পদে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা চলাকালীন সুমন জমাদ্দার নামে এক পরীক্ষার্থীর উত্তর লেখার ধরন দেখে সন্দেহ হয় উপস্থিত শিক্ষকের। এদিকে এ ঘটনার আগেই গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের কাছে প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে তথ্য আসে। এ সময় পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষক পরীক্ষার্থী সুমনের কাছে থাকা দুটি প্রবেশপত্র যাচাই করেন। পরীক্ষার্থী সুমন তখন প্রবেশপত্রের পেছনে থাকা উত্তর দেখে এমসিকিউ উত্তর পূরণ করছিলেন। পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে তৎক্ষণাৎ তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে সুমন জানায়, তার বাবার নাম মৃত রওশন আলী জমাদ্দার। পটুয়াখালী সদরেই তাদের বাসা। পরীক্ষার দিন গত শুক্রবার দুপুর ২টা ১৮ মিনিটে সাইফুল ইসলাম নামে এক শিক্ষকের একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে মোট ৭০টি প্রশ্নের উত্তর আসে। সবগুলো উত্তর মুখস্থ করতে না পারায় প্রশ্নপত্রের পেছনে উত্তর লিখে নিয়ে যান। চক্রের মূল হোতা সাইফুল ইসলাম পটুয়াখালীর খেপুপাড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক। পটুয়াখালীর সাইফুল ইসলাম, টাঙ্গাইলের খোকনসহ মাউশির মোট ৪ থেকে ৫ জন কর্মকর্তা- কর্মচারীর সহায়তায় পরীক্ষার উত্তরপত্র পৌঁছে যেত শিক্ষার্থীদের হাতে। এর আগে সুমন জমাদ্দারের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে প্রায় ১ লাখ টাকার চুক্তি হয়। চক্রটি প্রতিটি পরীক্ষার্থীর বিপরীতে উত্তরপত্র সরবরাহ করতে চূড়ান্ত নিয়োগ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার চুক্তি করে।
গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গণিতের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, মাউশি’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বড় ভাই পরীক্ষার আগে তিন পরীক্ষার্থীকে উত্তপত্র সরবরাহের জন্য পাঠান। পরবর্তীতে সাইফুল তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে ২টা ১৮ মিনিটে পরীক্ষার্থী সুমন জমাদ্দারকে উত্তরপত্র পাঠান। তিনি নিজেকে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য বলে দাবি করেছেন। মহানগর গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের কাছে ইডেন মহিলা কলেজ কেন্দ্রে সুমন নামে এক পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র ফাঁস হওয়ার তথ্য আসে। এ সময় পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর পরীক্ষা কেন্দ্রে ওই পরীক্ষার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে উত্তরপত্র, প্রবেশপত্র এবং সঙ্গে থাকা ভিভো কোম্পানির একটি স্মার্টফোন জব্দ করা হয়। তার মুঠোফোনের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে সাইফুল নামে এক ব্যক্তির নম্বর থেকে ৭০টি উত্তর পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় গণিতের শিক্ষক সাইফুল ও সুমান গ্রেপ্তার হলেও চক্রের অন্য সদস্যদেরকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ গোয়েন্দা বিভাগকে জানায়, গত শুক্রবার বিকাল তিনটায় পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে বেলা ১১টায় প্রশ্নগুলো মোট ৬১টি কেন্দ্র্রে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর সেখান থেকে চক্রের সদস্যরা মাঝের তিন ঘণ্টা সময়ের মধ্যে উত্তরপত্র সরবরাহ করে থাকতে পারে। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় মাউশির কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। এ ঘটনায় বাতিল করা হতে পারে এই নিয়োগ পরীক্ষা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থী সুমন চক্রের সদস্যদেরকে উত্তরপত্র পাওয়ার বিপরীতে প্রায় এক লাখ টাকা সরবরাহ করেছে বলে জানিয়েছে।
এ বিষয়ে গোয়েন্দা ডিবি উত্তর বিভাগের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করেছে। প্রত্যেক নিয়োগ পরীক্ষার আগেই এই গোয়েন্দা অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ বিষয়ে ডিএমপি’র গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. শাহাদাত হোসেন সোমা মানবজমিনকে বলেন, খোকনসহ চক্রের আরও প্রায় চার থেকে পাঁচজন সদস্যকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। উত্তরপত্র সরবরাহকারী চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাউশির যে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম এসেছে তাদের বিষয়ে তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত এখন পর্যন্ত দু’জনকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি অন্যদের ধরতে গোয়েন্দা অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি