1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
পানি কমলেও বাড়ছে দুর্ভোগ | Bastob Chitro24
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন

পানি কমলেও বাড়ছে দুর্ভোগ

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৪ জুলাই, ২০২২

দেশের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বাড়ছে বানভাসীদের দুর্ভোগ। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে এখনো বাড়ি ফিরতে পারছে না দুর্গতরা। সুনামগঞ্জ ও সিলেটের অনেক এলাকায় ভারতের ঢলে বাড়িঘর ভেসে গেছে। পানি কমার পর এখন ভিটেমাটির চিহ্ন ভেসে উঠছে। সেখানে নতুন করে ঘর নির্মাণ করা ছাড়া আর বাড়ি ফেরার কোন উপায় নেই। তবে আবহাওয়া অফিস বলছে আগামী দু’একদিনের মধ্যে আবারও দেশের বিভিন্ন জেলায় ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশে এখনো সক্রিয় রয়েছে। একই সাথে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এসব রাজ্যেও প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ফলে দেশর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তৃতীয়বারের মত বন্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া দেশের মধ্যাঞ্চলেও বন্যা বিস্তার লাভ করতে পারে।

এদিকে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীতে আবারও বাড়ছে পানি। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাঙছে দুর্গম চরের লোকালয়, ফসলি জমি, বসতি, জনপদ। বন্যার ঢলের পানিতে বসতঘর ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ায় আশ্রয় হারানোর ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে আবারও নদীভাঙনে দিশাহারা চরাঞ্চলের মানুষ। ভাঙন লোকালয়ের দিকে ধেয়ে আসায় আশ্রয় হারানোর শঙ্কায় দিন কাটছে হাজারো মানুষের।

হাওর পাড়ের মানুষ বন্যাকবলিত গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধ এলাকার বাসিন্দারা এখনো দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ঘর থেকে বের হলে ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। এ ছাড়া ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগও ছড়াচ্ছে। এ পর্যন্ত দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ৪৮৬ জন, মৃত্যু হয়েছে একজনের। সারাদেশে বন্যায় এখন পর্যন্ত ১০২ জন মারা গেছে। এর মধ্যে সিলেট বিভাগেই ৫৬ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে গতকাল বন্যাবিষয়ক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বন্যার প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে দেখা যায় সুনামগঞ্জে ৪৫ হাজার ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। মৌলভীবাজারে বন্যায় ১৬ হাজার ৩৩৯ ঘরে ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজারে বন্যায় ৪ হাজার ৬৮০ হেক্টর ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে ৫ হাজার পরিবারকে ১০ হাজার টাকা সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটে রাতের বৃষ্টিতে নদ-নদীর কয়েকটি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পায়। দিনের শুরুতে থেকে সূর্যের দেখা না মিললেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্য মাঝেমধ্যে উঁকি দিচ্ছে। বৃষ্টির প্রভাবে নদ-নদীর কয়েকটি পয়েন্টে পানি বাড়লেও উল্টো চিত্র দেখা গেছে অন্য দুটি পয়েন্টে। ওই দুটি পয়েন্টে পানি কমেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টার তুলনায় গতকাল সকাল ৯টায় পানি দশমিক শূন্য ৬ সেন্টিমিটার বেড়ে ১৩ দশমিক ২২ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে নদীর সিলেট পয়েন্টে দশমিক শূন্য ৭ সেন্টিমিটার কমে ১০ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ পয়েন্টে পানি শনিবারের তুলনায় গতকাল সকাল ৯টায় বেড়েছে দশমিক শূন্য ২ সেন্টিমিটার। নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি শনিবারের মতো ১০ দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটারে অপরিবর্তিত আছে। এদিকে,সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যাদুর্গত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে নারী ও মেয়েরা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে জানান জাতিসংঘ যৌথ মিশনের সদস্য ও বিশেষজ্ঞরা। বন্যাদুর্গত এলাকায় সন্তানসম্ভবা নারী রয়েছেন ৬০হাজার। তাদের পর্যবেক্ষণ করছে জাতিসংঘ যৌথ মিশন। এছাড়া নারী স্বাস্থ্যের সুরক্ষা ও শিশু শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষিখাতে সহায়তা, গৃহনির্মাণ এবং ওয়াশ বা স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করবে তারা। সুনামগঞ্জে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনের পর গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় সিলেট নগরীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন জাতিসংঘের যৌথ মিশনের সদস্য ও বিশেষজ্ঞরা। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান জানান, বন্যায় ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া পাঁচ হাজার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা। সে হিসেবে ১০ হাজার টাকা করে পাবে প্রতি পরিবার। এছাড়া প্রায় তিন কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে বন্যাকবলিত সিলেট জেলায়। এর মধ্যে সরকারিভাবে প্রাপ্ত টাকা প্রায় পৌনে তিন কোটি, বাকি টাকা বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত। তবে এই টাকাই যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন। এখনও বন্যা পরিস্থিতি থাকায় বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য আরও ৭০ লাখ টাকা চায় তারা। এই টাকা বরাদ্দ চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ আকস্মিক বন্যায় সিলেট বিভাগের চার জেলাসহ দেশের মোট ৯টি জেলার ৭২ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

সুনাগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, গত তিন দিন বৃষ্টি না হওয়া এবং একই সময়ে উজানের পাহাড়ি ঢল কম নামায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে। সুরমাসহ জেলার সব নদ-নদী ও হাওরে পানি কমছে। এতে মানুষের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট থেকে পানি নামছে। বন্যার পানি কমলেও এখনো জেলার সাতটি উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক যান চলাচলের অনেকটাই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গত শুক্রবার থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। এদিকে বন্যার পানি কমায় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িঘরে ফিরতে শুর করেছে। বৃষ্টি হলেই এখন আতঙ্ক বাড়ছে সুনামগঞ্জের বন্যার্ত মানুষের।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামসুদ্দোহ জানান, সুনামগঞ্জের পাশাপাশি ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও গত তিন দিন বৃষ্টি কম হয়েছে। যে কারণে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বৃষ্টি হলেও হালকা বৃষ্টি হতে পারে। এতে পানি বাড়বে না।

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশব্যাপী বানবাসী মানুষের সাহায্যার্তে নগদ অর্থ ও ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেছে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি। গতকাল রোববার জেলা বিএনপির উদ্যোগে ভিক্টোরিয়া রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে নেতাকর্মীরা এ ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রমে বের হয়। এসময় তারা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে নগদ অর্থ ও ত্রাণ সংগ্রহ করেন। ত্রাণ সংগ্রহে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সানু, যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল, কাজী শফিকুর রহমান লিটন, আতাউর রহমান জিন্নাহসহ বিএনপির অঙ্গসহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলার বন্যার পানি কমলেও কমেনি বন্যার্তদের দুর্ভোগ। ধরলা ও দুধকুমারের পানি বিপদসীমার নিচে নেমে গেলেও চরাঞ্চলের নিচু এলাকার অনেক ঘরবাড়ি এখনও নিমজ্জিত রয়েছে বন্যার পানিতে। আগাম বন্যার কারণে অনেক কৃষকের উঠতি ফসল নষ্ট হয়েছে। অনেকের হাঁস মুরগী ভেসে গেছে প্রবল স্্েরাতে। খড় নষ্ট ও গোচারণ ভূমি ডুবে থাকায় গবাদী পশুর খাদ্য সংকট দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। কাজ করতে না পারায় আর্থিক সংকটে পড়ছে দিনমজুর পরিবারগুলো।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি