ফাইনালে না হারার রেকর্ডটা বজায় রাখল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বিপিএলের নবম আসরের ফাইনালে বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে কায়েসের কুমিল্লা। ফলে টানা দ্বিতীয়বার বিপিএলের শিরোপা জিতল সালাউদ্দিনের দল। আর বিপিএল ইতিহাসে এটি কুমিল্লার চতুর্থ শিরোপা।
সিলেটের দেয়া ১৭৬ রানের লক্ষ্য এক সময় কঠিনই মনে হচ্ছিল কুমিল্লার সামনে। শুরুতে দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া কুমিল্লাকে টানতে থাকেন লিটন দাস ও জনসন চার্লস। তবে লিটন ৫৫ করে ফিরলে কুমিল্লার রানের চাকা ধীর গতি হয়ে যায়।
লিনডে ও উডের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে চাপে পরে কুমিল্লা। তবে দ্বিতীয় টাইম-আউটের পর মঈন আলি ও জনসন চার্লসের ব্যাট চড়াও হয়। রুবেল ও তানজীম সাকিবের দুই ওভারে মঈন আলি ও চার্লসের ব্যাটিং তাণ্ডবে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় কুমিল্লা। শেষ পর্যন্ত ৪ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় কুমিল্লা। জনসন চার্লস ৭৯ ও মঈন আলি ২৫ রানে অপরাজিত ছিলেন।
এদিকে লিটন, চার্লস এবং মঈন আলি ছাড়াও নারিন ৫ বলে ১০ এবং অধিনায়ক কায়েস ৩ বলে ২ রান করেন। সিলেটের হয়ে ৩৯ রান খরচে ২ উইকেট নেন রুবেল হোসেন। আর একটি উইকেট নেন লিনডে।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে মুশফিক ও শান্তর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের ওপর ভর করে ১৭৫ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পায় সিলেট। মুশফিক ৭৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। আর শান্ত করেন ৪৫ বলে ৬৪ রান। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত হয় সিলেটের। আন্দ্রে রাসেলের করা প্রথম ওভারেই ১৭ রান তুলে নেন শান্ত-তৌহিদ হৃদয় জুটি। এর মধ্যে শান্ত একাই মারেন তিনটি চার। সে ওভারে আরও একটি চার আসে লেগ বাই থেকে।
তবে দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই উইকেট হারায় সিলেট। শূন্য রানেই তৌহিদকে ফিরিয়ে দেন তানভীর ইসলাম। সিলেটের রান তখন ১৭। ওয়ান ডাউনে নেমে আগের ম্যাচে ১৬ বলে ২৮ রান করা অধিনায়ক মাশরাফী এই ম্যাচেও নেমেছিলেন তৌহিদের বিদায়ের পর। ৪ বলে ১ রান করেন তিনি।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে দারুণ এক পার্টনারশিপ গড়েন শান্ত। ৫৬ বল স্থায়ী জুটিতে ৭৯ রান যোগ করেন তারা। এদিন অর্ধশতকের দেখা পান শান্ত। আসরের চতুর্থ অর্ধশতক তুলে নিতে শান্তকে খেলতে হয়েছে ৩৭ বল। ৮টি চারের মারে এই রান করেন তিনি। আগেই এ আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের জায়গাটা দখলে নেওয়া শান্তর সামনে হাতছানি দিচ্ছিল বেশ কয়েকটি রেকর্ড। এদিন অর্ধশতক তুলে নেওয়ার পথে দুটি রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন তিনি।
বিপিএলে এতদিন এক আসরে সবচেয়ে বেশি রান করা বাংলাদেশি খেলোয়াড়ের রেকর্ডটা ছিল মুশফিকুর রহিমের দখলে। ২০১৯/২০ মৌসুমে খুলনা টাইগার্সের হয়ে ৪৯১ রান করেছিলেন মুশফিক। এদিন ৪০ রান করেই সে রেকর্ড ভেঙে দেন শান্ত। ৪৯২ রানে পৌঁছে এক আসরে সর্বোচ্চ রান করা বাংলাদেশি খেলোয়াড়ের রেকর্ডটি নিজের করে নেন এই বাঁহাতি।
বিপিএলের এক আসরে ৫০০ রান করা প্রথম বাংলাদেশিও শান্ত। ৪৮ রানে পৌঁছে এই রেকর্ডটিও নিজের করে নিয়েছেন তিনি। এদিন শান্তর সামনে সুযোগ ছিল বিপিএলে এক আসরে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ডটিও নিজের দখলে নেওয়ার। কিন্তু মঈন আলির বলে বোল্ড হয়ে সেই সুযোগ হারিয়েছেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ৪৫ বলে ৬৪ রান করেন শান্ত। তার ইনিংসে ৯টি চারের পাশাপাশি ছিল ১টি ছয়ের মার।
শান্তর বিদায়ের পর মুশফিক জিম্বাবুয়ের অলরাউন্ডার রায়ান বার্লকে নিয়ে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন। তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি বার্ল। মুতাফিজুর রহমানের বলে মোসাদ্দেক হোসেনের হাতে ধরা পড়ার আগে ১১ বলে ১৩ রান করেন তিনি। আউট হওয়ার দুই বল আগে অবশ্য একবারক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। সে ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হন ফিজ।
বার্লের বিদায়ের পরের ওভারেই নারিন ফিরিয়ে দেন থিসারা পেরেরাকে। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে যান এই লঙ্কান অলরাউন্ডার। এরপর জর্জ লিন্ডেও ব্যর্থ হন ব্যাট হাতে। মুস্তাফিজের বলে লিটনের হাতে ধরা পড়ার আগে ৬ বলে করেন ৯ রান।
বাকিদের আসা যাওয়ার মাঝেই অর্ধশতক তুলে নেন মুশফিক। এবারের বিপিএলে এটিই তার প্রথম অর্ধশতক। ৪৮ বলে ৭৪ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। এই ইনিংস খেলার পথে হাঁকান ৫টি চার ও ৩টি ছয়।
সিলেটের ইনিংসের শেষের দিকে কুমিল্লার হাত ফসকেছে বেশ কয়েকটি ক্যাচ। মুস্তাফিজ ও লিটন দাসের পাশাপাশি সহজ ক্যাচ ছাড়েন মঈন আলিও।
কুমিল্লার পক্ষে ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া ১টি করে উইকেট পেয়েছেন আন্দ্রে রাসেল, মঈন আলি, সুনীল নারিন ও তানভীর ইসলাম।